২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে ইলিশ ধরা শুরু
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৯ AM
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশের নদ-নদীতে আবারও ইলিশ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। শনিবার (২৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টা থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে ইলিশ ধরা শুরু হয়। দীর্ঘ বিরতির পর নদীতে ফিরতে পেরে উৎসাহিত জেলেরা, যদিও নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি সহায়তা যথেষ্ট ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
মৎস্য বিভাগ বলছে, এবারের অভিযানে কঠোর নজরদারি ছিল, ফলে মা ইলিশ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পেরেছে। এতে এ বছর উৎপাদন লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শনিবার দুপুর থেকে মেঘনাসহ উপকূলীয় এলাকায় জেলেদের মধ্যে দেখা যায় ব্যাপক প্রস্তুতির চিত্র। চাঁদপুর শহরের যমুনা রোড, টিলাবাড়ি, পুরান বাজার, দোকানঘর, বহরিয়া ও হরিণা ফেরিঘাটে জেলেরা জাল মেরামত ও নৌকা সাজাতে ব্যস্ত ছিলেন। একই চিত্র দেশের বিভিন্ন জেলেপাড়াতেও।
লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের জেলে আকবর খান ও শামছুদ্দিন বলেন, “গত ২২ দিন খুব কষ্টে কেটেছে। সরকারের দেওয়া ২৫ কেজি চাল যথেষ্ট ছিল না। এখন নদীতে নামব—ইলিশ পেলেই সংসারে স্বস্তি ফিরবে।”
আরও পড়ুন: পুলিশের সব বক্তব্যকে পুরোপুরি মিথ্যা বললেন বর্ষার বাবা
ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের জেলে মফিজুল ইসলাম ও শওকত হোসেনের অভিমত, “জেলে বেড়ে গেছে, কিন্তু ইলিশ কমে গেছে। জ্বালানির খরচও বেশি। তারপরও নদীতে নামছি—আশা করি ভালো মাছ পাব।”
মৎস্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধিত জেলে পরিবারের সংখ্যা ৪৫ হাজার ৬১৫। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হয়।
নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানের শুরু থেকে দিন-রাত টহল জোরদার ছিল। তিনি বলেন, “৪ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযানে ১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জাল জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৯ হাজার ৭০৪ কেজি ইলিশ, ১৭৪টি নৌকা জব্দ করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭১৩ জনকে। এর মধ্যে ৩৩৮ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হয় এবং মৎস্য আইনে ১৪৯টি মামলা দায়ের হয়।”
এ ছাড়া ৫৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৫০ জনকে কারাদণ্ড ও সাতজনকে ৬১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, “এবারের অভিযান ছিল অত্যন্ত কঠোর। ফলে মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়তে পেরেছে। আমরা আশাবাদী, এবারের মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।”
তিনি আরও জানান, “জেলেদের কষ্ট লাঘবে সরকার অভিযানের শুরু থেকেই খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। তবে কিছু অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ৮১টি মামলা ও ১২৫ জনের সাজা দেওয়া হয়েছে।”