যশোরের ৬টি আসনে জামায়াতের চূড়ান্ত প্রার্থীরা মাঠে, পেশাজীবীদের প্রাধান্য 

জামায়াতের প্রার্থীরা
জামায়াতের প্রার্থীরা  © টিডিসি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্তে বৈচিত্র্য এনেছে জামায়াত। এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া দলটি এবার প্রার্থী মনোনয়নে প্রাধান্য দিয়েছে বিশিষ্ট শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও প্রবীণ কলেজ শিক্ষকদের। মনোনীত প্রার্থীরা দলের বার্তা নিয়ে নিয়মিত সামাজিক ও মানবিক কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছেন। সাংগঠনিক নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। 

প্রার্থীদের দাবি, মানুষ পরিবর্তনের জন্য ভোটের অপেক্ষায় রয়েছে। নতুন বাংলাদেশ নতুন ধারার জনপ্রতিনিধি চায়। সেই হিসাবে তারা সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।

জানা যায়, যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী মনোনয়নে চমক দেখিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। যশোর-১ (শার্শা) আসনে মাওলানা আজিজুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিনের কাছে প্রায় পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই আসনে কাজ করছেন। এবার তিনি জামায়াতের একক প্রার্থী হিসাবে ভোটে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদাৎ হুসাইন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই আসনে এবার জামায়াত মনোনীত প্রার্থী শিশু হৃদরোগ ও ইনটেনসিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. মোসলেহ উদ্দিন ফরিদ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। এমবিবিএস পাশ করে পিজি হাসপাতালে যোগ দেন। দুই বছর পর যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে ত্রিশ বছর ধরে ইউনিভার্সিটি হসপিটালস বার্মিংহামে কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এই আসনে মনোনয়ন পেয়ে তিনি পুরোদমে গণসংযোগে নেমে পড়েছেন। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, সনাতন ধর্মাবলম্বী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ সামাজিক ও মানবিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।

যশোর-৩ (সদর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আব্দুল কাদের। সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসাবে আব্দুল কাদেরের পরিচিতি রয়েছে। তিনি দলের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনি এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল। তিনি সদর উপজেলার হামিদপুর আল-হেরা ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতা করেন। তিনি জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক। তিনি সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী। সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছেন। ৫ আগস্টের আগে ও পরে তিনি এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যাপক কাজ করেছেন বলে দাবি তার অনুসারীদের।

যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে কেশবপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোক্তার আলীকে মনোনীত করা হয়েছে। তিনি এলাকায় সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৬ সালেও এই আসন থেকে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হয়েছিলেন। এবার দলের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে আগেই ভোটের মাঠে নেমেছেন।

জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামী জেলা শাখার প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী বাছাইয়ে বৈচিত্র্য এনেছে। যশোরের ৬টি আসনেও বিশিষ্ট চিকিৎসক, আইনজীবী, অধ্যাপক, ব্যবসায়ী পেশার প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূলে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। দলের ভেতরে-বাইরে প্রার্থীদের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়বে ভোটেও।

যশোর-২ আসনের প্রার্থী ডা. মোসলেহ উদ্দিন ফরিদ বলেন, ‘সব ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছি। নিয়মিত সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি। তাদের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। বিজয়ী হলে সবার জন্য কাজ করব।’

যশোর-৩ (সদর) আসনের প্রার্থী ডা. আবদুল কাদের বলেন, ‘তৃণমূলের মানুষের কাছে দলের বার্তা নিয়ে যাচ্ছি। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ নেতৃত্বের পরিবর্তন চায়। এই আসনে ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির এমপি দেখেছে। এবার আমাদের এমপি হিসেবে দেখতে চায়। নতুনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।’


সর্বশেষ সংবাদ