চটপটি বিক্রির করে ঢাবি ও খুবিতে পড়ুয়া দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছেন দীপক
- আব্দুল্লাহ আল মামুন সোহান, যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:২৮ AM
চটপটি বিক্রি করেই দেশের শীর্ষ দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুই সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলছেন যশোরের এক সংগ্রামী বাবা। যশোরের মনিরামপুর পৌরসভার তাহেরপুর গ্রামের চটপটি বিক্রেতা দীপক দাসের ছেলে জয় দাস এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে এবং মেয়ে জয়ন্তী দাস খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) বিষয়ে প্রথম বর্ষে অধ্যয়ন করছেন।
দুই সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে দীপক দাস ও তার স্ত্রী শম্পা দাস প্রতিদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে চলেছেন। অনুষ্ঠানে, মেলায়, ওয়াজ মাহফিলে কিংবা দৈনন্দিনভাবে রাজগঞ্জ মোড়ের নতুন সেতুর পশ্চিম পাশে দুপুরের পর থেকে রাত ৯টা–১১টা পর্যন্ত চটপটি বিক্রি করে সংসার চালানো ও সন্তানদের পড়ালেখার খরচ জোগানোই এখন তাদের জীবনের প্রধান লড়াই।
মেয়ে জয়ন্তী দাস বড়, ছেলে জয় দাস ছোট। তবে বয়সে বছর খানেকের ব্যবধানে পিঠাপিঠি হওয়ায় একই বছরেই এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে তারা। জয়ন্তী মানবিক বিভাগ থেকে এবং জয় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২১ সালে এসএসসি ও ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। এরপর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দুই ভাই-বোন দেশের দুই স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়।
তাদের শিক্ষাজীবনের পেছনে থাকা একমাত্র সম্বল চটপটি বিক্রির আয়ে চলছে সংসার। দীপক দাস সকালবেলা ঘরেই রান্নার প্রস্তুতি সারেন, দুপুরের পর ভ্যানে করে বের হন বিক্রিতে। অনুষ্ঠান হলে স্ত্রী শম্পা দাসকে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে পড়েন মেলায়। সন্তানদের ভর্তির সময় স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে এবং এনজিও, সমিতি থেকে ধার করে খরচ জোগাতে হয়েছে। এখনো চলমান খরচ টানতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।
দীপক দাস বলেন, ‘আমার সমস্ত স্বপ্ন, সমস্ত মনোযোগ আমার দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ ঘিরে। ওদের মানুষ করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।’
স্ত্রী শম্পা দাস বলেন, ‘আমার সন্তানরা শুধু পড়াশোনায় নয়, যেন ভালো মানুষ হতে পারে, সে জন্য সবার দোয়া চাই।’
দূর্গা পূজার ছুটিতে বাড়িতে আসা জয় ও জয়ন্তী বলেন, ‘আমরা ছোট থেকেই দেখেছি বাবা-মা কত কষ্ট করছেন। তাদের এই আত্মত্যাগ কোনোভাবেই শোধ করা যাবে না। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, ভবিষ্যতে সফল হয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাব।’