ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট ছাড়া মিলবে না পেট্রোল

ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট ছাড়া মিলবে না পেট্রোল
ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট ছাড়া মিলবে না পেট্রোল  © সংগৃহীত

ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট ছাড়া কোনো মোটরসাইকেলে পেট্রোল দেওয়া যাবে না—এমন নিয়ম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যশোর জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে শহরের যানজট নিরসনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পৌরসভা এবং চৌগাছার বলুহ মেলায় অশ্লীলতা বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম।

সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা জানান, খুলনা বিভাগের মধ্যে আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে যশোর জেলায়। এ সময় ৯টি দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত এবং ৯ জন আহত হন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ২১.৭৩ শতাংশ।

জেলা প্রশাসক বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলে পেট্রোল না দিলে দুর্ঘটনা কমবে। লাইসেন্স ছাড়া কিশোরদের বাইক চালানোও বন্ধ হবে। তিনি আরও বলেন, লাইসেন্স প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার পর ট্রাফিক আইনের ওপর ক্লাস নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। সরকারি দপ্তরে নিয়োগের সময় ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার কথাও বলেন তিনি। একইসঙ্গে যারা ইজিবাইকের লাইসেন্স ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত আয় করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও যশোর পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান জানান, কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই শহরে ৮০ থেকে ১০০টি অবৈধ যানবাহন আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী এক মাস কেউ সুপারিশ বা ফোন না করলে শহর যানজট মুক্ত করা সম্ভব হবে। পৌরসভার বৈধ লাইসেন্স ছাড়া কোনো ইজিবাইক চলতে পারবে না এবং একাধিক লাইসেন্স ভাড়া দেওয়া হলে তা বাতিল করা হবে। আগামী ১০ দিন শহরে মাইকিং করে সচেতনতা বাড়ানো হবে এবং ১১তম দিন থেকে অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা আটক শুরু হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, প্রতি মাসে একটি সমস্যা কেন্দ্র করে আলোচনায় মনোযোগ দেওয়া উচিত। অনেক সমস্যা একসঙ্গে তুললে সমাধান মেলে না। তিনি আরও বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় ডিএনএ টেস্ট বিলম্বের কারণেই প্রতিবেদন দিতে সময় লাগছে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু প্রমাণের অভাবে গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

জেলা বিএনপির সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, এক বছর আগের তুলনায় বর্তমানে যশোরে যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। তিনি বলেন, কিশোররা মাদক সেবন করে মোটরসাইকেল চালিয়ে দুর্ঘটনায় জড়াচ্ছে এবং চায়ের দোকানে কেরাম বোর্ডের আড়ালে মাদকের ব্যবহার হচ্ছে।

সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে ওষুধ সংকট দেখা দিচ্ছে। জনবল সংকট থাকায় পরীক্ষাও ব্যাহত হচ্ছে। যশোরে মেডিকেল কলেজ থাকলেও হাসপাতাল ভবন না থাকায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু করা যাচ্ছে না। ফলে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে বাড়ছে চাপ। হাসপাতালের সামনে অবৈধ দোকান ও প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে, এতে রোগীদের প্রবেশে বিঘ্ন ঘটছে।

চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, প্রতিমাসে বাস রাস্তার ওপর থামানোর বিষয়টি সভায় আলোচিত হলেও সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। বিশেষ করে শিক্ষা বোর্ড থেকে ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের বড় একটি অংশ বাস রাখার জন্য দখল হয়ে থাকে।

প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, শহরের সিভিল কোর্ট মোড়, দড়াটানা, চৌরাস্তা এবং কুইন্স হাসপাতালের সামনে যানজট চরমে পৌঁছেছে। ইজিবাইক ও অটোরিকশার সংখ্যা কমানো গেলে যানজট নিয়ন্ত্রণে আসবে।

জেলা জামায়াতের আমির গোলাম রসুল বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে জামায়াতে ইসলামি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আতঙ্কমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে সন্ত্রাসীদের আটকসহ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি নূর ইসলাম বলেন, পুলিশ প্লাজা নামে একটি প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর মেলার নামে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, যাদের ট্রেড লাইসেন্স নেই এবং কোনো করও পরিশোধ করে না। এ প্রতিষ্ঠানের কারণে গাড়িখানা রোডে চরম যানজট দেখা দিচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ