টানা বৃষ্টিতে মরিচ চাষীদের ক্ষতি, আবাদ কমেছে ৪ হাজার ৮০ বিঘা জমিতে
- ফরিদপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০২:৪০ PM , আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:১৬ PM
দেশের অন্যতম মরিচ উৎপাদনকারী এলাকা ফরিদপুরের মধুখালীতে টানা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মরিচ চাষীরা। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠে পানি জমে মরিচ গাছ মরে যাওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে। এর ফলে বাজারে মরিচের সরবরাহ হ্রাস পেয়ে দাম বেড়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মধুখালীর মেগচামী, চরমেগচামী, বসমসী, রুকুনী, জগন্নাথদী, চরবামুন্দি, মধুপুর, শিবপুর, গোপীনাথপুর, কোরকদী, পাঁচকোরকদী, রামদিয়া, বৈকণ্ঠপুর, ঘোষকান্দি, মহিষাপুর, চরমহিষাপুর, আশাপুর, মথুরাপুর, গাজনা, বেলেশ্বর, বাগাট ও ঘোপঘাট এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠে জমে থাকা পানির কারণে মরিচ গাছ মরে যাচ্ছে।
বাজারে মরিচের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মরিচের হাট মধুখালী বাজারে শুক্রবার কাঁচা মরিচের মন (৪০ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকায়।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা জানান, হঠাৎ টানা বৃষ্টির কারণে মরিচের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। মেগচামী গ্রামের চাষী মো. সেরাপ সেখ বলেন, ‘আমার ২ একর জমিতে মরিচ ছিল। অতিবৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে গাছ মরে যাচ্ছে।’ একই গ্রামের আমিরুল ইসলাম সরদার জানান, ‘গাছে ভালো ফলন হয়েছিল, দামও পাচ্ছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সব নষ্ট হয়ে গেল।’ মধুখালী পৌরসভার মহিষাপুর গ্রামের চাষী মো. তোজাম্মেল মন্ডল বলেন, ‘আমার ২ একরের বেশি জমির মরিচ বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন মাত্র ৫০ শতক জমিতে মরিচ টিকে আছে। দাম ভালো হলেও ফলন কম।’
এদিকে মধুখালী বাজারের মরিচ ব্যবসায়ী কিয়ামউদ্দিন কেয়া বলেন, ‘বাজারে মরিচের আমদানি কম থাকায় দামটা বেশি।’
ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করে মেগচামী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গৌতম বসু বলেন, ‘গত কয়েকদিনে প্রচুর বৃষ্টির কারণে মরিচের জমিতে পানি জমেছে। এতে গাছ মরে গিয়ে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’ একই মত দিয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম বলেন, ‘সাধারণত মরিচ চাষ উঁচু জমিতে করা হয়। তারপরও অতিবৃষ্টির কারণে পানি উঠে যাওয়ায় গাছ নষ্ট হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে ডিবি হেফাজতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
মধুখালী মরিচ বাজার আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. হায়দার আলী মোল্যা জানান, ‘এই সময়ে দেশের বড় চাহিদা মেটায় মধুখালীর মরিচ। কিন্তু কয়েকদিনের বৃষ্টিতে গাছ মরে যাওয়ায় বাজারে খুবই কম মরিচ আসছে। ফলে দামও তুলনামূলক বেশি।’
মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহবুব এলাহী বলেন, ‘এ বছর উপজেলায় ২০ হাজার ৪০০ বিঘা জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২১ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে ৪ হাজার ৮০ বিঘার জমির মরিচ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে।’
তিনি আরও জানান, এখানে মূলত খালকুলা জাতের মরিচের আবাদ হয়ে থাকে। এ মরিচ ঝাল বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে এর চাহিদা ব্যাপক।
উল্লেখ্য, মধুখালী বাজারের আড়ত থেকে মরিচ প্যাকেজিং করে খুলনা, বরিশাল, মাদারীপুর, ঢাকা (কারওয়ান বাজার, শ্যামপুর, সাভার, ইপিজেড)সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং বিদেশে সরবরাহ করা হয়।