যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু: পরিবার বলছে মানসিক ভারসাম্যহীন, পুলিশের দাবি পারিবারিক কলহ
- আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪৯ PM , আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৫, ০৭:০১ PM
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। পরিবার বলছে মানসিক ভারসাম্যহীনতা থেকে আত্মহত্যা করেছে। আর পুলিশের দাবি, এটি একটি পারিবারিক কলহের ফল। দুই ভিন্ন দাবির মাঝে ঝুলে আছে ২৩ বছর বয়সী রুবেল উদ্দীন নিশাতের করুণ পরিণতির সত্যতা।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে উপজেলার বরুমছড়া ইউনিয়নের চান্দুয়াপাড়া এলাকার বলীর বাড়িতে নিজ ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় রুবেলের মরদেহ দেখতে পান তার পরিবারের সদস্যরা। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুর ঠিক আগে রুবেল তার মায়ের সঙ্গে কিছু বিষয়ে তর্কে জড়ান। সেই বাকবিতণ্ডার পরপরই তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতি দেখে অনেকে আত্মহত্যার পেছনে পারিবারিক চাপ বা কলহের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
নিহতের বাবা মো. ইলিয়াস জানান, নিশাত কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। কীভাবে কী করতো, নিজেও জানতো না। তবে কোনো ঝগড়া-বিবাদ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সকালে দোকানে ছিলাম। বাসায় ফিরে দেখি সে ঘরের ভেতরে ঝুলে আছে। সঙ্গে সঙ্গে ভাইপোদের ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
নিহতের স্ত্রী জেরিন আক্তার (স্থানীয়ভাবে জেনি নামে পরিচিত) চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেন, ‘আমাদের সংসারে কোনো ঝগড়া হয়নি। কেন এমন করল বুঝতে পারছি না। আমার ছোট্ট বাচ্চাটাকে নিয়ে এখন কোথায় যাব?’
নিহতের ভাতিজা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা যখন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই, তখন তার পালস ছিল না। ইসিজি করার পর চিকিৎসক নিশ্চিত করেন সে মারা গেছে।’
আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘রুবেলকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। আমরা তাকে তাৎক্ষণিক মৃত ঘোষণা করি এবং আইনানুগভাবে লাশ থানার কাছে হস্তান্তর করি।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে পরিবারিক কলহের বিষয়টি উঠে এসেছে। মরদেহটি উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।’
ময়নাতদন্তের ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে অনিচ্ছার খবর পাওয়া গেছে। লাশ থানায় আনার পর, তারা নানাভাবে ময়নাতদন্ত এড়িয়ে যেতে চায় বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় তারা ময়নাতদন্তের খরচ ও ঝামেলা নিতে চান না।
তবে পুলিশ এই বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়নি। তারা আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাশ মর্গে পাঠিয়েছে।
আত্মহত্যা নাকি পারিবারিক কলহের ফল? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর এখনো অজানা। পরিবার একদিকে মানসিক ভারসাম্যহীনতার কথা বলছে, অপরদিকে পুলিশের তদন্ত বলছে ভিন্ন কথা।