আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফাঁকা ঘরে জমজমাট মাদক কারবার
- আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৩:১১ PM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৫ PM
দারিদ্র্য বিমোচন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প। কিন্তু চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বাস্তবচিত্র বলছে, এ প্রকল্প এখন গৃহহীনদের আশ্রয় নয়, বরং মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নে নির্মিত শত শত আশ্রয়ণের ঘরের বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ। বসবাস করছেন না প্রকৃত বা বরাদ্দপ্রাপ্ত উপকারভোগীরা। বরং ফাঁকা ঘরগুলোর দখল নিয়েছে মাদকসেবী ও নানা অপরাধে জড়িত কিছু ব্যক্তি। রাত নামতেই এসব ঘর রূপ নেয় মাদকসেবনের আস্তানায়—যেখানে চলে গাঁজা, ইয়াবা ও নেশাদ্রব্য সেবনের মহোৎসব।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বারখাইন ইউনিয়নে চার ধাপে মোট ৪১৫টি ঘর নির্মাণ ও হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, এই ঘরগুলোর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ফাঁকা পড়ে আছে।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, প্রকৃত ভূমিহীনদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যাদের বাড়িঘর আছে, তারাই পেয়েছেন ঘর বরাদ্দ। অনেকে ঘর পেয়েও সেগুলোতে থাকছেন না। এমনকি কেউ কেউ ঘর ভাড়া কিংবা বিক্রিও করে দিয়েছেন। যা স্পষ্টভাবে সরকারি সম্পদের অপব্যবহার।
ফাঁকা ঘরগুলোর সামনেই সাঁটানো মালিকদের মোবাইল নম্বর। সেসব নম্বরে কল দিলে পাওয়া যায় নানা অজুহাত ওরশ, বেড়াতে যাওয়া, অসুস্থতা ইত্যাদি। কিন্তু পাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে উঠে আসে ভিন্ন চিত্র। অনেক ঘর মাসের পর মাস ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। রাত হলেই ঘরগুলোতে আনাগোনা শুরু করে এলাকার বখাটে যুবক ও অপরাধীরা।
আব্দুর রহিম নামে এক বৃদ্ধ বলেন, রাত নামলেই ভয় লাগে, এসব ঘরে ঢুকে যায় মাদকসেবীরা। চিৎকার, হইচই, মারামারি সবই চলে। মেয়েদের নিয়েও ঘটে অসামাজিক ঘটনা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উমা খান কাফি বলেন, আমাদের দায়িত্ব শুধু ঘর তৈরি করা। কারা পাবে, সেটা দেখার জন্য কমিটি থাকে।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। বারখাইন আশ্রয়ণ প্রকল্পেও দ্রুত অভিযান চালানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার জানান, আমরা তদন্ত করছি। এখানে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যারা ঘর ভাড়া-বিক্রি ও মাদক কার্যক্রমে জড়িত। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।