চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু, সিলগালা ক্লিনিক ও আটক ৩
- ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১১:৪৪ PM , আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫, ১২:৫৮ PM
নীলফামারীর ডোমারে চিকিৎসকের অবহেলার কারণে ক্লিনিকে সিজারের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বেবি আক্তার (২৮) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। তবে নবজাতক শিশুটি সুস্থ রয়েছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুরে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রায়হান বারী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শায়লা সাঈদ তন্বী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অবহেলার প্রাথমিক সত্যতা পান। পরে ক্লিনিকটি সিলগালা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মৃত বেবি আক্তার নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার সোঁনারায় ইউনিয়নের বড়গাছা দরগা পাড়া এলাকার মো. নুর আলমের স্ত্রী।
স্বজনরা জানায়, বিকেলে প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে ডোমারের জনতা ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রিজওয়ানা ইয়াসমিন কিছু পরীক্ষা দেন এবং রিপোর্ট দেখে জানান, রোগীর পেটে পানি নেই। তাই সিজার করতে হবে।
পরে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন বেবি আক্তার। সিজারের সময় উপস্থিত ছিলেন, ডা. রিজওয়ানা ইয়াসমিন, ডা. নিহার রঞ্জন এবং অপারেশন থিয়েটারের সহকারী বিপুল সরকার।
অপারেশনের পর রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলেও চিকিৎসকেরা তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেননি। রক্তক্ষরণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা রাতেই তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রবিবার ভোরে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক বেবি আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত স্বজনরা ক্লিনিকে জড়ো হয়ে চিকিৎসকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার পর থেকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতারা হলেন ডা. নাজমুস সাকিব, সেবিকা মোছা. সুমনা আক্তার ও সাবিয়া আক্তার।
ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডা. রায়হান বারী বলেন, লিখিত কোন অভিযোগ না পেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অবহেলার সত্যতা পাওয়ায় জনতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। পরবর্তীতে আবারো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম বলেন, নিহত নারীর স্বামীর দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও তিনজন পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।