সীমান্তজেলায় বাড়ছে এইচআইভি সংক্রমণ, গর্ভবতী রোগীর সিজারে প্রস্তুত হাসপাতাল
- হুমায়ন কবির মিরাজ, যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ০৯:৫৮ PM , আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১২:২২ AM
সীমান্তবর্তী জেলা যশোরে আবারও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এইচআইভি সংক্রমণ। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নতুন করে সাতজনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমিতদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিষয়টিকে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির লক্ষণ হিসেবে দেখছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।
এমন পরিস্থিতিতে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এইচআইভি পজিটিভ এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর সিজারিয়ান ডেলিভারির জন্য নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি। ১ জুন ওই সিজারিয়ানের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে অপারেশন থিয়েটার আলাদাভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্বে থাকবেন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. জি ইয়াসমিন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এটি হবে এ হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত দ্বিতীয় কোনো নারীর সিজারিয়ান ডেলিভারি। এর আগে প্রায় দুই বছর আগে প্রথমবারের মতো এমন একটি অপারেশন করেন আবাসিক সার্জন (আরএস) ডা. নিলুফার ইয়াসমিন। তিনি জানান, ‘‘পূর্ববর্তী সেই রোগী বর্তমানে দ্বিতীয়বার গর্ভবতী এবং তিনিও পুনরায় যোগাযোগ করেছেন। যথাযথ প্রস্তুতি থাকলে চিকিৎসা দিতে ভয় নেই।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এইচআইভি ভাইরাস শরীরের বাইরে দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে না। নির্দিষ্ট প্রটোকল মেনে চললে অস্ত্রোপচারে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে না।’’
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সরকারিভাবে পরিচালিত অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারে এইচআইভি আক্রান্তরা বিনামূল্যে ওষুধ ও পরামর্শ পাচ্ছেন। তবে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় চিকিৎসা পরিসেবার উপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘‘চলতি বছরে সাতজনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যশোর এখন সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।’’
সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘‘এই ধরনের জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য আদর্শভাবে আলাদা বিশেষায়িত অবকাঠামো থাকা জরুরি। তবে যতক্ষণ না তা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেই চিকিৎসা দিতে হবে।’’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এইচআইভি/এইডস ছোঁয়াচে নয়। চিকিৎসা, সতর্কতা ও জনসচেতনতা বাড়ানো গেলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ জনিত কারণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে সীমান্তঘেঁষা জেলা ও মাদকপ্রবণ এলাকায় আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। যশোরও এখন সেই তালিকায় দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।