অবৈধ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে এনসিপি নেতাকে অব্যাহতি
- গাইবান্ধা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ০২:৫৪ PM , আপডেট: ২৬ মে ২০২৫, ১১:৪৯ AM
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠক পরিচিত আল-শাহাদাৎ জামান জিকোকে সংগঠনের সব কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রোববার (২৫ মে) দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) নাজমুল হাসান সোহাগ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার এনসিপি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
আল-শাহাদাৎ জামান জিকো সুন্দরগঞ্জ পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাসপাতাল মোড় এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে।
জানা গেছে, এনসিপির ব্যানার ব্যবহার করে নিজেকে উপজেলা এনসিপির ‘ফাউন্ডার’ পরিচয়ে বিভিন্ন অফিস-আদালতে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিস্ট ঘরানার কিছু নেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে সংগঠনের আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডকে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী এবং শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি অবমাননা হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে এনসিপি থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান ‘জুলাই যোদ্ধারা’।
আরও পড়ুন : ছাত্র উপদেষ্টারা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি, তাদের ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে: হাসনাত
পরে এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তাকে এনসিপির সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) নাজমুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জ উপজেলার জাতীয় নাগরিক পার্টির সমর্থক আল-শাহাদাৎ জামান জিকোকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা আলোচনা চলছিল। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাকে আপাতত এনসিপির সব কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হলো। সংগঠনের স্বার্থ ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংগঠনের আদর্শ, নীতি ও ঐক্য রক্ষায় কেউ যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবেই।’
স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আল-শাহাদাৎ জামান জিকোর রাজনৈতিক শুরু ছাত্রদলের মাধ্যমে। তৎকালীন উপজেলা ছাত্রদলের এক নেতার উৎসাহে তিনি ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর তার রাজনৈতিক অবস্থানে আসে অন্য পরিবর্তন। সে সময় তিনি যুবলীগে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন এবং জেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার সাঈদ হাসান লোটনের ঘনিষ্ঠ হতে চান। যদিও সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী রাজনীতিতে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
আরও পড়ুন : এক ব্যক্তির নামে কয়টি সিম থাকবে, জানাল বিটিআরসি
পরে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম আহসান হাবীব মাসুদের সহায়তায় তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে (জাসদ) যোগ দেন এবং ‘মশাল’ প্রতীকের বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেন। পর্যায়ক্রমে তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও নিজেকে প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করেন। পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর এবং জেলা পরিষদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটের মাঠে তেমন সাড়া পাননি। ২০২৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন।
এরপর ওই বছরের জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে জাসদ থেকে আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ না করেই তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থায় (জাসাস) যোগ দেন এবং সুন্দরগঞ্জ পৌর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। কিছুদিন পর নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিয়ে নিজেকে উপজেলা পর্যায়ের সংগঠক হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন।
তবে সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চলতি বছরের ৩ মার্চ তাকে জাসাস (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা) থেকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।