বিদ্যালয়ে অনিয়মের খোঁজ নিতে গেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে শিক্ষিকার দুর্ব্যবহার

সহকারী শিক্ষিকা মোসা. রেহেনা বেগম হাত দিয়ে ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করেন
সহকারী শিক্ষিকা মোসা. রেহেনা বেগম হাত দিয়ে ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করেন  © টিডিসি

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার ২৯ নম্বর পূর্ব ফুলহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মের খোঁজ নিতে গিয়ে সহকারী শিক্ষিকার খারাপ আচরণের শিকার হয়েছেন কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। অভিযুক্ত শিক্ষিকা মোসা. রেহেনা বেগম তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং এক পর্যায়ে ক্যামেরা ভাঙারও চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। 

এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের দাবি,  মোসা. রেহেনা বেগমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তারা দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে চলমান বিভিন্ন অনিয়ম, শিক্ষিকার দায়িত্বে অবহেলা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে শিক্ষিকা রেহেনা বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তিনি নিজের ইচ্ছেমতো স্কুলে আসা-যাওয়া করেন। এ ছাড়া নিয়মিত ক্লাস না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংবাদিকরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই সহকারী শিক্ষিকা মোসা. রেহেনা বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি ক্যামেরা ধরার চেষ্টা করেন, সাংবাদিকদের গালাগাল করেন এবং বারবার প্রশ্ন করেন কেন তারা ‘অনুমতি ছাড়া’ বিদ্যালয়ে এসেছেন। সাংবাদিকরা পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করলেও তিনি আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন।

আরও পড়ুন: আন্দোলনের মধ্যেই ইউজিসিতে বৈঠকে বসেছেন জবি শিক্ষক সমিতি

ঘটনার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মামুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন না। পরে তিনি ও বিদ্যালয়ের সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেহেনা বেগমকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও তিনি কারও কথা না শুনে আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। 

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ঘটনার কথা শুনে আমি দ্রুত বিদ্যালয়ে যাই এবং রেহেনা বেগমকে থামানোর চেষ্টা করি, কিন্তু তিনি কারও কথাই শোনেননি। সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’

স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ, মোসা. রেহেনা বেগম দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন, সময়মতো ক্লাস নেন না এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, শিক্ষিকার মারধরের কারণে তাদের সন্তানরা ভয় পেয়ে স্কুলে যেতে চায় না। সহকর্মী শিক্ষকদের সঙ্গেও প্রায়ই তার বাকবিতণ্ডা হয়। এর আগে গত বুধবার এনটিভি অনলাইনের রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ার প্রতিনিধি একটি বিদ্যালয়ে অনিয়ম নিয়ে লাইভ সম্প্রচার করায় তাকে রেহেনা বেগম হুমকি দেন।

আরও পড়ুন: সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে ‘কালক্ষেপণ’, জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন শিক্ষার্থীরা

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষিকা মোসা. রেহেনা বেগম বলেন, সাংবাদিকদের এ রকম বিদ্যালয়ে এসে সংবাদ করা ঠিক না। অনিয়ম তো শুধু স্কুলে হয় না, সব জায়গাতে হয়।

এ প্রসঙ্গে রাজাপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। একজন শিক্ষক হিসেবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’


সর্বশেষ সংবাদ