গোপালগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে দুদকের অভিযান
- গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ০৫:০৭ PM , আপডেট: ২১ জুন ২০২৫, ০২:০৭ PM
গোপালগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে নানা অনিয়ম অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক।
আজ বুধবার (৭ মে) বেলা ১১টায় দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান চালায় দুদকের একটি দল। দুদকের আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এ অভিযানে অংশ নেন।
অভিযানকালে দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘সারা দেশে ৩৬ জেলায় একযোগে অভিযানের অংশ হিসেবে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিআরটিএ গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। যার প্রেক্ষিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রথমে আমরা সাদাপোশাকে অফিসটি পর্যবেক্ষণ করি। অভিযানে ঘুষ নিয়ে কাজ করা, গ্রাহককে সঠিক তথ্য না দেওয়া, গ্রাহকদের দিনের পর দিন ভোগান্তিতে রাখা, দীর্ঘদিন একই অফিসে কাজ করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ সম্পদ অর্জন, দালাল চক্রসহ নানা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিগত ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল পযর্ন্ত গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে মোট ২ হাজার ৮৮৪টি লাইসেন্সের আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে অনুমোদনের অপেক্ষাধীন রয়েছে ৬৭টি ও বাতিল করে আবেদনকারীকে ফেরত দেয়া হয়েছে ৪৭টি। বাতিল ও অপেক্ষাধীন আবেদনসমূহ যাচাই করা হচ্ছে। বিআরটিএ গোপালগঞ্জ অফিসের পত্র ইস্যু রেজিস্ট্রারে ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেছে। পত্র ইস্যু রেজিস্ট্রারে অসংখ্য নম্বর ফাঁকা রাখা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ব্যবহার করে দুর্নীতি করার জন্য।’
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬, পাল্টা হামলায় ভারতে ১০ জনের মৃত্যু
দুদকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বিআরটিএ অফিসের উচ্চমান সহকারী শরীফুল ইসলাম এ অফিসে ২০১৬ সাল থেকে প্রায় ৯ বছর এখানে কর্মরত রয়েছে। তার বাড়িও এখানে আর কর্মরতও এখানে, যে কানের দুর্নীতির প্রচলনটা এখানে তৈরি হয়েছে। অফিস সহকারী লিখন শেখ তিনি ২০২৩ সাল থেকে এখানে কর্মরত রয়েছে। তার বাড়ি নড়াইল, তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি পরিবারসহ খুলনায় থাকেন, তিনি প্রতিদিন এখান থেকে যাতায়েত করেন। তার খুলনায় বাড়ি রয়েছে, নড়াইলে প্রচুর জমি কেনা রয়েছে, গাড়ি আছে এসব তথ্য আমরা পেয়েছি। একজন ছোট কর্মচারী হয়েও কীভাবে খুলনার মতো বড় শহরে থাকেন এবং খুলনায় প্রতিদিন যাতায়েত করেন। তার যে অর্থিক সামর্থ্য তার সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। অফিস সহায়ক ইয়াছিন শেখ তার বিরুদ্ধে গত বছর দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগ এসেছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর দুদকের কমিশনার বদলির জন্য বলেছিলেন, আমরাও চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোন এক কারণে তিনি এখনো এই অফিসে বহাল রয়েছেন। গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক পদটিতে বরগুনা জেলার সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি সপ্তাহে ১ দিন অফিস করায় জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি নিয়মতি অফিসে না থাকার সুবাদে অফিসের কর্মচারীগণ দালালদের সাথে মিশে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে জনভোগান্তি তৈরি করছেন।’
মো. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘এ অভিযানে আমরা অনেকগুলো অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালকের কাছে সুপারিশ দিয়েছি এবং আমরা দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বিআরটিএর প্রধান অফিসে সুপারিশগুলো দেব। যাতে এ সমস্যাগুলো দূর করে জনগনকে সেবা প্রদান করা যায় এবং বিআরটিএ থেকে সেবা পেতে পারে। এ ছাড়া এই অফিস দালালমুক্ত করা হবে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যপক তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে।’