অভাবে ছাড়েন চাকরি, পুরি-সিঙাড়া বিক্রি করে সুলতানের মাসে আয় দেড় লাখ টাকা
- মাদারীপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪১ PM , আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৯ PM

ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেছেন কারি মুহাম্মদ সুলতান। বিয়ে করার পর সংসারে আসে সন্তান। তবে এর পর থেকে শুরু হয় অভাব। পরে মসজিদের ইমামতি ছেড়ে শহরের কোটের মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান শুরু করেন।
সুলতানের দোকানে পুরি, সিঙাড়া, আলুর চপ, বেগুনি পেঁয়াজু, ছোলা দিয়ে মুড়িভর্তা বিক্রি হয়। প্রথমে চাহিদা কম থাকলেও বর্তমানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এসব খাবার বিক্রি করে প্রতি মাসে তিনি আয় করেন প্রায় দেড় লাখ টাকা।
হাফেজ কারি মুহাম্মদ সুলতানের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বর্তমানে তিনি মাদারীপুর পৌর শহরে থাকেন। আর এই ব্যবসার ওপরই চলছে তার ছয় সদস্যের সংসার।
জানা গেছে, লেখাপড়া শেষে ১৯৯০ সালে কাজের সন্ধানে চলে আসেন মাদারীপুরে। বিয়ের পর তার ঘরে সন্তান জন্ম নেয়। মসজিদ থেকে যতটুকু সম্মানী পেতেন, তা দিয়ে সংসার ও সন্তানের ভরণপোষণ চালানো বড়ই দুষ্কর হয়ে পড়ে। পরে ২০১২ সালে গুরুজনদের মতামতে ৩ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ভ্রাম্যমাণ একটি মুড়ির দোকান দেন সুলতান।
শুরু হয় সিঙাড়া, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি ও মুড়ি ভর্তা বিক্রি। অল্পদিনে ব্যাপক পরিচিতি পান। ভালো বিক্রি হওয়ায় সুলতানকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে প্রতিটা পণ্যের দাম বাড়লেও এখনো তিনি ৫ টাকা করে বিক্রি করে যাচ্ছেন এসব খাবার।
এই খাবার বিক্রি করা আয় দিয়ে সংসার পরিচালনার পাশাপাশি মুহাম্মদ সুলতান স্ত্রীসহ হজ পালন করে এসেছেন বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ৩টা থেকে শুরু করে দশটা পর্যন্ত চলে তার এই খাবার বিক্রি। প্রতিনিয়তই ভিড় করে এই খাবারের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা খাবার প্রেমিকরা।কেউ রিকশায় বসে কেউ পাশে দাঁড়িয়ে কেউ আবার বাড়ির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন প্যাকেটে করে। তার দোকানের জনপ্রিয় খাবার হলো পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ছোলা দিয়ে মুড়িভর্তা। এই মুড়িভর্তা খাওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে ভোজনরসিকরা ছুটে আসেন এই কোর্টের মোড়ে সুলতানের দোকানে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, এখনকার যুগে ভেজাল খাদ্যের অভাব নেই। কিন্তু এই কোর্টের মোড়ে হুজুর যা বিক্রি করেন, এগুলো ভালো মানের খাবার। তার খাবারে কোনো ভেজাল নেই। দিনের খাবার দিনেই শেষ হয়ে যায়। অনেক সুস্বাদু হওয়ায় আমরা প্রতিদিন খেতে আসি।
শরীয়তপুর থেকে মুড়িভর্তা খেতে আসা রুবেল আহমেদ বলেন, আমি কাজ শেষে মাঝেমধ্যেই সুলতান হুজুরের দোকানে মুড়িভর্তা খেতে আসি। তার এই মুড়িভর্তা অনেক মজার। এ রকম সুন্দর করে কেউ আর বানাতে পারে না।
গোপালগঞ্জ জেলা ও রাজৈর উপজেলা থেকে মুড়ি খেতে মুড়ি এসেছিলেন আসাদ ও সাব্বির তারা বলেন, এই হুজুর অনেক সুন্দর মুড়ি বানান। তার তৈরি করা পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, পুরি অনেক সুস্বাদু। তার মতো কেউ এত পরিপাটি করে বিক্রি করে না।
এ বিষয়ে কারি মুহাম্মদ সুলতান বলেন, আগে ইমামতি করে যা পেতাম, তাতে সংসার চালানো দুষ্কর হয়েছিল। পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে কোটের মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান শুরু করি। আমি পুরি, সিঙাড়া বিক্রি করে ভালো টাকা লাভ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমার এখকার আয় দিয়ে সংসার ভালো চালাই। আমি মেয়েদের হাফেজ ও কারি বানিয়েছি এবং ছেলে মুকতিতে মাওলানা বানাতে পেরেছি। মহান আল্লাহ তাআলার কাছে শুকরিয়া আল্লাহ তাআলা রহমতে এ ব্যবসায় আমার জীবনের সফলতা এসেছে। আমার এই সফলতা দেখে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন কিছু করে জীবিকা নির্বাহ করবেন।