বৃদ্ধাশ্রমে ভালো নেই বাবারা

বৃদ্ধাশ্রমে ভালো নেই বাবারা
বৃদ্ধাশ্রমে ভালো নেই বাবারা  © সংগৃহীত

সব থেকেও যেন কেউ নেই তাদের। পরিবার থেকে দুরে সরিয়ে রাখা হয়েছেন সবাই। এখন শেষ বয়সে একা জীবন পার করছেন তারা। কেউ খোঁজ নিতে আসেন না তাদের। ছেলে-সন্তানের কথা মনে করে কাদেন, তাদের কাছে ছুটে যেতে মন চায় কিন্তু যেতে পারেন না। এমনি নির্মম গল্প ভোলার বৃদ্ধ নিবাসের অসহায় বাবাদের। যাদের কেউ ভালো নেই।

বৃদ্ধ নিবাস থেকে তাদের তিন বেলা খাবার দেয়া হলেও স্বজনদের থেকে আলাদা থাকতে হচ্ছে। এমন কষ্ট আর অসহায়ত্বের কথা কারো কাছে বলতে পারছেন না। তবুও সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই তাদের। বৃদ্ধ নিবাসের বাসিন্দা বৃদ্ধ বাবাদের এমনি গল্প। যা অত্যান্ত নির্মম বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে বাবাদের যেন এভাবে রাখা না হয়, সন্তানদের প্রতি সেই অনুরোধ সচেতন মহলের।

নিজাম-হাসিনা ফাউন্ডশনের অর্থায়নে পরিচালিত ভোলা সদরের পৌর কাঠালির বৃদ্ধ নিবাসে সদরের আলীনগর গ্রামের সামসল হক। সন্তানদের বুকে আগলে রেখেছিলেন। সেই স্মৃতি মনে করে কাঁদলেও অস্পষ্ট স্বরে ছেলের প্রতি কোন অভিমান নেই তার।

সামসুল হক বলেন, তার ৬ মেয়ে এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ঘরে আছে পুত্রবধু। কিন্তু তার আচরণ সন্তোষজনক না, তার পরেও কোন অভিযোগ নেই তার। বললেন, এখানেই ভালো আছেন তিনি। সন্তানের প্রতি কোন অভিমান নেই।

আরেক বাবা আ. রশিদ। ছেলেকে বৃদ্ধাশ্রমে এসে দেখা করতে নিষেদ করেছেন। বললেন, ছেলের সম্মানের কথা বিবেচনা করেই আসতে নিষেধ করা হয়েছে। চাপা কষ্ট বুকে চেপে রেখে বললেন বৃদ্ধাশ্রমে ভালো আছেন তিনি।আ. রশিদ বলেন, আমার কেন অভাব নেই। তারপরেও এখানে থাকি। মাঝে মধ্যে বাড়িতে যাই সবার সাথে দেখা করতে।

সামসুল হক কিংবা আ. রশিদ নয়, তাদের মত  একই অবস্থা যেন আ. মান্নান ও ইউনুসসহ অন্য বাবাদের। যাদের বৃদ্ধাশ্রমে আসার গল্পটা ভিন্ন হলেও পরিনতি যেন একই।

এই বৃদ্ধনিবাসে এ থাকেন ৩৫ থেকে ৪০ জন বৃদ্ধ বাবা। খাবার-সেবা যত্ন নিয়মিত চললেও সন্তানদের কথা মনে করে কাঁদেন তারা। পরিবার থেকেই যেন নেই তাদের। কেউ খোঁজ নেয়না। যে সন্তানদের লালন পালন করেছেন সে সন্তনরা আজ আলাদা। কেউ অভাবের তাড়নায় কেউ বা ভরনপোষনের দায় এড়াতে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছেন বাবাদের।

ভোলা সদরের ভেদুরিয়া গ্রামের আরেক বাবা আ. মান্নান। ৬ ছেলে রয়েছে। তাদের কেউ চট্রগ্রাম কেউবা ঢাকায় থাকেন। এক ছেলে বাসায় ঠাই হয়েছে তার স্ত্রীর। কিন্তু তিনি বৃদ্ধাশ্রমে একা থাকেন। পরিবার থেকে আলাদা। কেউ খোজ নেয় না। স্ত্রী-সন্তানদের কথা মনে করে নিরবে কাঁদেন।

বৃদ্ধাশ্রমে বাবারা এমন দুর্বিসহ দিন কাটালেও স্বজনরা তাদের দেখা করতে আসেন না বলে জানালেন বৃদ্ধাশ্রমের ম্যানেজার সালেহ উদ্দিন সেলিম। তিনি বললেন, এভাবে সন্তানদের দুরে ঠেলে দেয়া ঠিক না। প্রত্যেক সন্তানদের উচিত তাদের সন্তানদের কাছে রাখা। এমন দিন আসবে তারাও বৃদ্ধ হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ৫০ শয্যার এ বৃদ্ধ নিবাস প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে ৫০ জন বাবার আশ্রয় হলেও বিভিন্ন সময়ে প্রিয়জন রেখে এখানেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বাবারা।

এই বিষয়ে বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নিজামুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি যখন পড়ালেখা করি তখন আমার বাবা-মা মারা যায়। আমি আমার বাবা-মায়ের সেবা যত্ন করতে পারি নাই। তাই আমি এ বৃদ্ধাশ্রমের মাধ্যমে বাবাদের সেবা যত্ন করি। আমার বাবা-মায়ের ঋণ পরিশোধ করতে চাই এই সেবার মাধ্যমে। আমি আট একর জায়গার উপর ৩৫ থেকে ৪০ জন বৃদ্ধাশ্রম বাবাদের ১০ বছর পর্যন্ত সেবা দিয়ে আসছি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence