ইউএনওর চাকরির অফার ফিরিয়ে দিলেন সন্তোষ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২, ০৬:০২ PM , আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২২, ০৬:০২ PM
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাতউদ্দিনের চাকরির অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর পাস করা মৌলভীবাজারের সেই সন্তোষ রবি দাস। আগামীকাল রবিবার চাকরিতে যোগদানের কথা থাকলেও যোগ দেবেন না সন্তোষ।
জানা গেছে, কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে সন্তোষের চাকরির ব্যবস্থা করেন ইউএনও সিফাতউদ্দিন। এই বিদ্যালয়ে যোগদান করলে তার প্রাথমিক বেতন ধরা হতো ৫ হাজার টাকা। এছাড়া চাকরিটি খণ্ডকালীন হওয়ায় যোগদান করবেন না সন্তোষ।
জানতে চাইলে সন্তোষ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছি। এই অবস্থায় খণ্ডকালীন চাকরি করা আমার সাথে যায় না। সেজন্য আমি শিক্ষকতায় যোগদান করবো না।
তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক অনেক ভালো বেতনে আমাকে চাকরির অফার দিয়েছে। তবে তারা এখনো নিশ্চিত করেনি। সেজন্য কোথায় চাকরি করব সেটা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না।
আরও পড়ুন: একই সম্মানী পাবেন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা
সন্তোষের চাকরির অফার ফিরিয়ে দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাতউদ্দিন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা সিফাতকে কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেও সে খণ্ডকালীন হিসেবে যোগ দেবে না।
তিনি আরও বলেন, সন্তোষ আমাদের জানিয়েছে, সে পূর্ণকালীন চাকরি করতে চায়। সেজন্য সে ভালো চাকরি খুঁজছে। আমরা তার সিদ্ধান্তকে সাধুবাধ জানিয়েছি।
জানা গেছে, মৌলভীবাজারের শমসেরনগরে ফাঁড়ি কানিহাটি চা বাগানের এক শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষ রবিদাস অঞ্জনের। জন্মের মাস ছয়েকের মাথায় বাবাকে হারিয়েছিলেন। মা কমলি রবিদাস চা বাগানের শ্রমিক। তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা। সেই সময় ছেলেকে অন্যের বাসায় রেখে তিনি চলে যেতেন চা বাগানে।
ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন সন্তোষ। ২০১৩ সালে ভর্তি হন ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজে। সন্তোষের মায়ের মজুরি ছিল তখন ১০২ টাকা। তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলের ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন। ২০১৪ ডিসেম্বরে ছিল সন্তোষের এইচএসসির নিবন্ধন। তাঁর মা কমলি রবি দাস তখন ৫০ টাকার একটি নোট দিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেছিলেন, ‘দেহি, কেউ ধার দেয়নি রে, বাপ। ’
কলেজের এক শিক্ষকের কাছ থেকে ধার নিয়ে সেবার নিবন্ধন ফি দেওয়া হয়। এইচএসসির পর ভর্তি পরীক্ষার কোচিং। কমলি তখন আবার ঋণ নিলেন ব্যাংক থেকে। লোনের কিস্তি পরিশোধে বাসা থেকে অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এভাবে খেয়ে না খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে পড়ার সুযোগ পেলেন সন্তোষ।