মহামারীতেই বয়স শেষ, হতাশা আর দুশ্চিন্তায় জর্জরিত বেকাররা

করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পরীক্ষা
করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পরীক্ষা  © ফাইল ফটো

২০১৮ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন মোশাররফ হোসেন। যদিও তার মাস্টার্স সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে। আগামী অক্টোবর মাসে চাকরিতে প্রবেশের আবেদনের ৩০ বছরের বয়সসীমা শেষ হবে তার। অন্যদিকে মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা। মাঝখানে পরীক্ষা শুরু হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে আবারো তা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া গত কিছুদিন ধরে চাকরির বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ হচ্ছে না। এমতাবস্থায় চাকরিতে আবেদনের বয়স ও চাকরি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তার।

শুধু মোশাররফ হোসেন নয়, চাকরিতে আবেদনের বয়স ও চাকরি পাওয়ার দুশ্চিন্তা নিয়ে দিন গুনছে এমন লাখো চাকরিপ্রত্যাশী বেকার তরুণ।

আরো  পড়ুন বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবিতে চাকরিপ্রত্যাশীদের স্মারকলিপি প্রদান

জানা গেছে, মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে গতবছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অনলাইনে ক্লাস হলেও পরীক্ষা নেওয়ার জটিলতায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এক বছরের বেশি সময়ের জটে পড়েছেন। চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় স্নাতক শেষ বর্ষে আটকে থাকা শিক্ষার্থীরা আবেদনই করতে পারছেন না।

অন্যদিকে এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা বন্ধ থাকায় হতাশায় দিন কাটাচ্ছে চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। আর যাদের বয়স শেষের দিকে তাদের অবস্থা আরো করুন! একদিকে চাকরি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে পরিবারের চাপে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। এমতাবস্থায় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো দাবী জানিয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশী।

চাকরিপ্রত্যাশী মোশাররফ হোসেন বলেন, একদিকে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ, অন্যদিকে চাকরিতে প্রবেশের বয়স প্রায় শেষের দিকে। এর মধ্যে চাকরিতে প্রবেশের বিজ্ঞপ্তিও প্রায় বন্ধ বললেই চলে। যখন চাকরি নিয়ে পরিবারের হাল ধরার কথা, তখন নিয়েই পরিবারের বোঝা হয়ে বসে আছি। এমতাবস্থায় প্রচণ্ড মানসিক চাপ নিয়ে দিন কাটছে। তিনি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ করার দাবি জানান সরকারের কাছে।

গত জানুয়ারিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাবের আল ওসমানীর। কয়েকটি বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা থাকলেও করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে নিয়োগ পরীক্ষা। এমতাবস্থায় অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তার। করোনাকালীন এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে এবং চাকরিতে আবেদনের সুযোগ পেতে তিনিও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

আরো  পড়ুন সুখবর পাচ্ছেন চাকরির বয়স শেষ হওয়া প্রার্থীরা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করা রাজু আহমেদেরও একই অবস্থা। এতদিন চেষ্টা করলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ দিকে চলে আসায় প্রাইভেট কোনো প্রতিষ্ঠানে তুলনামূলক ছোট পদে হলেও প্রবেশের চেষ্টা করছেন তিনি। তিনিও চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২ বছর বাড়ানোর পক্ষে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন চাকরিপ্রত্যাশী। এই দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন। সর্বশেষ করোনাকালীন প্রণোদনা হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। স্মারকলিপিতে তারা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘প্রণোদনা স্বরূপ’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবি জানিয়েছেন।

চাকরি প্রত্যাশীরা বলছেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার সাথে বন্ধ হয়ে স্থগিত হয়ে যায় সকল প্রকার সরকারি চাকরির সার্কুলার ও একই সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া। এক বছরের অধিক সময়কাল জুড়ে হাতেগুণা কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। ফলে দেখা গেছে এই প্রজন্মের অনেকেই তাদের জীবনের একটি বছর হারিয়ে ফেলেছেন এবং এর স্থায়িত্ব আরও দীর্ঘ হতে যাচ্ছে।

তারা আরও বলছেন, যেহেতু দেশে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলমান। করোনার প্রভাবে দেরিতে কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসার পরে এমন চিত্র দেখা গেছে অনেকেই ১০/১৫ দিন, এক বা দুই মাসের জন্য ৪৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারেনি। কারণ কোভিড-১৯ ইতোমধ্যেই সবার জীবনের প্রায় দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে। তাই করোনাকালীন ‘প্রণোদনা স্বরূপ’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবি জানান তারা।

আরো  পড়ুন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ না হলেও কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না

জানা গেছে, মহামারীর মধ্যেই গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ৪২তম এবং ১৯ মার্চ ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। আগামী ২৯ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বয়সের ক্ষেত্রে এক দফা ছাড় দেয় সরকার। তাতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছিল তাদের পরবর্তী ৫ মাস, অর্থাৎ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়।

কিন্তু এ বছর এপ্রিল থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ফের লকডাউন চলছে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ কিংবা সংস্থাগুলো চাকরির জন্য বিজ্ঞপ্তি দিতে পারছে না। আর এই সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাকরি প্রার্থীদের বয়সের ক্ষেত্রেও ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কারও নির্ধারিত বয়স পেরিয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের বয়স শিথিলের জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে আবারও নির্দেশনা দেবে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি গণমাধ্যমে এমনটাই জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

তিনি জানিয়েছিলন, ‘চাকরি প্রার্থীদের বয়সসীমা ৩২ বছর করা না হলেও যাদের লকডাউনের কারণে বয়স পার হয়ে গেছে তারা ওই আগের তারিখ অনুযায়ী আবেদনের সুযোগ পাবে। লকডাউনটা শেষ হলে বিষয়গুলো আরও সুন্দর করে আয়োজন করা হবে। প্রত্যেকটা সরকারি কর্মক্ষেত্রে এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে। যেমন গত বছর অক্টোবরে যে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি সেই পরীক্ষার জন্য প্রার্থীর বয়স ওই তারিখে যা ছিল সেটা ধরে তাদের পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হবে। কেউ যেন তারিখ পিছিয়ে যাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিক বিবেচনা করে পরবর্তীতে পরীক্ষার আয়োজনের নির্দেশনা দেয়া আছে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence