৩৭ বছর পর চাকরি স্থায়ী হলো রমার
- সাইফুল ইসলাম
- প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৩৫ PM , আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১৯ PM
রমা রানী সাহা ১৯৮৫ সালের ১ এপ্রিল সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে যোগদান করেছিলেন সরকারি চাকরিতে। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সিং সুপারভাইজার পদে কর্মরত রয়েছেন। চাকরিতে যোগদানের ৩৭ বছর পর চলতি বছরের ৬ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে স্থায়ী হলেন তিনি।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গত ৬ ডিসেম্বর প্রকাশ হয় রমার চাকরি স্থায়ীকরণের প্রজ্ঞাপন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে ‘সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে তার চাকরিকাল দুই বৎসরের অধিক এবং চাকরিকাল সন্তোষজনক হওয়ায় চাকরিতে প্রবেশের তারিখ হতে তার চাকরি স্থায়ীকরণ করা হলো।’
৬ ডিসেম্বরের ওই প্রজ্ঞাপনে রমা রানী সাহার মতো চাকরি স্থায়ী হয়েছে আরও ৫ সিনিয়র স্টাফ নার্সের। তাদের মধ্যে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সিং সুপারভাইজার পদে কর্মরত হাসিনা মমতাজ সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছিলেন ১৯৮৬ সালের ১ জুন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সিং সুপারভাইজার পদে কর্মরত শামছুন্নাহারের যোগদানের তারিখ ১৯৮৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে কর্মরত উৎপেলা রেমার যোগদানের তারিখ ১৯৮৯ সালের ৯ ডিসেম্বর, কেরানিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সিং সুপারভাইর পদে কর্মরত মোসাম্মৎ আনজুমানারা খাতুনের যোগদানের তারিখ ১৯৯৮ সালের ২৮ জুন ও কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সিং সুপারভাইজার পদে কর্মরত রীতা রানী দাস সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছিলেন ১৯৯৮ সালের ১১ জুন।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ১ ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬টি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মোট ৪০৬ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে যোগদান করা সিনিয়র স্টাফ নার্স রয়েছেন ১৩ জন। বাকি যাদের চাকরি এ মাসে স্থায়ী হয়েছে তারা সবাই ২০১৬ সালে যোগদান করেছেন।
চাকরিতে যোগদানের এতো দীর্ঘ সময় পর চাকরি স্থায়ীকরণে হতাশ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত নার্সরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, নার্সরা সরাসরি অসুস্থ মানুষদের সেবা দিয়ে থাকে। করোনার সময় অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা নির্দিষ্ট দূরুত্ব বজায় রেখে রোগিদের সেবা দিয়েছেন। কিন্তু নার্সরা রোগিদের সংস্পর্শে গেছেন। করোনা রোগিদের স্পর্শ করেছেন। এরপরও অন্যসব সরকারি চাকরিজীবীর তুলনায় নার্সরা অবহেলিত।
একই হাসপাতালের আরেকজন নার্স দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নার্সদের চাকরিতে যোগদানের পর যুগের পর যুগ ধরে অস্বায়ী ভিত্তিতে চাকরি করতে হয়। দুই বছরের মধ্যে চাকরি স্থায়ী করার নিয়ম থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তা কয়েক যুগ লেগে যায়। এর ফলে নার্সরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হয়। অনেকেই ২০-৩০ বছর ধরে চাকরি করেও শুধু স্থায়ী না হওয়ার কারণে সরকারের গৃহঋণ সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব বিষয়ে কথা বললে আমাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীদের এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয় না।
তিনি বলেন, নার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। কিন্তু তাদের কোনো ঝুঁকি ভাতা নেই। তাদেরকে প্রতিনিয়ত অবমূল্যায়ন ও হয়রানীর শিকার হতে হয়। আমরা বারবার এসব সমস্যা সমাধানের দাবি জানালেও কোনো সমাধান আসেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো: নাসির উদ্দিন (উপসচিব) বলেন, ২০১৬ সালে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সরকারি খাতের নার্সিং ও ধাত্রীবিদ্যা সম্পর্কিত সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত করছে।
এর আগে সেবা পরিদপ্তরে অধিনে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হতো। কিন্তু ওই সময় নার্সদের চাকরি স্থায়ীকরণ হয়েছে ধীর গতিতে। ফলে অনেকের স্থায়ীকরণ আটকে যায়। ২০১৬ সালে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে যোগ্যদের চাকরি স্থায়ীকরণ করছি। আমাদের জনবল সংকট থাকায় কাজে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে যোগ্য সকল নার্সের চাকরি স্থায়ীকরণ করার।