বুক রিভিউ: পাওলো কোয়েলহোর ‘দ্য স্পাই’

লেখক সোহেল রানা এবং পাওলো কোয়েলহোর ‘দ্য স্পাই’ গ্রন্থের অনুবাদের প্রচ্ছদ
লেখক সোহেল রানা এবং পাওলো কোয়েলহোর ‘দ্য স্পাই’ গ্রন্থের অনুবাদের প্রচ্ছদ  © টিডিসি ফটো

মানুষ যখন বড় ধরনের বাস্তবতার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় তখন অতীতের সব ভুল, সব অর্জন আর স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া সব পরামর্শ রিভিউ করতে থাকে। ব্যাপারটা এরকম যে, এটা করলে, ওটা না করলে জীবনটা হয়তো এরকম হতে পারতো, হয়তো বা না । নিশ্চিত মৃত্যু যখন দরজায় এসে কড়া নাড়ছে, মাতা হারিকেও এমনটাই করতে দেখা গেলো।

মাতা হারি, স্বামীর অনিয়ম আর প্রতারণার শিকার হয়ে রণে ভঙ্গ দেওয়া এক নারী, যিনি একসময় নৃত্যশিল্পী হয়ে প্যারিস মাতাতে শুরু করলেন। সমাজের প্রভাবশালী উচ্চবিত্ত আর অফিসারদের সাথে তার উঠাবাসা শুরু হলো। নৃত্যশিল্পী থেকে আবেদনময়ী যৌনকর্মী এবং সবশেষে গুপ্তচরের তকমা পেয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডে অমর্যাদার মৃত্যু। অমর্যাদার মৃত্যু একারণে বলছি, মাতাহারি তার চিঠিতে লিখে গেছেন, ‘বেশ্যা? ঠিক আছে। গুপ্তচর? কখনোই না।’

মাতাহারির প্রকৃত নাম মার্গারিটা জেল্যে। এক ডাচ আর্মি অফিসারের সাথে বিয়ে হয় তার, নাম রুডলফ। স্বামীর সাথে জাভাতে যান তিনি, ইন্দোনেশিয়া তখন ছিল ডাচ কলোনি। জাভায় স্বামীর বিকৃত যৌনাচার ও প্রতারণামূলক কর্মকান্ড তাকে হতাশ করে। ফিরলেন হল্যান্ডে। স্বামীর যন্ত্রণাময় ছায়াতল থেকে চিরমুক্তি পেতে এবার পাড়ি জমালেন প্যারিসে। সুদর্শনা নারী হিসেবে তিনি কাছে টানতে থাকেন সমাজের উচ্চবিত্ত আর বড় কর্তাদের। বেছে নেন শান-শওকত জীবন।

প্রথমে ড্যান্সার পরবর্তীতে উচ্চতর বেশ্যাবৃত্তি। মাতাহারির এমন জীবন বেছে নেওয়ার পেছনের যে গল্প তা কোনভাবেই ছুড়ে ফেলে দেবার মত নয়। হারির ভাষ্য, ‘আমি সুখী হতে চাইনি; চেয়েছিলাম মনের ভেতর যতটুক দুঃখ আর দুর্দশা জমে আছে, তা আমাকে গ্রাস না করুক। আমি আরেকটু ধৈর্য্য ধরতে পারলে, হয়তো প্যারিস যাবার পরিকল্পনাটা আরও ধীরে সুস্থে গুছিয়ে করা যেতো। কিন্তু বাবার নতুন স্ত্রীর একের পর এক অভিযোগ, কাঠখোট্টা স্বামী, অনবরত চিৎকার করে কাঁদতে থাকা শিশু, ছোট্ট শহর ভরা সংকীর্ণমনা লোকজনের সরুদৃষ্টি- আর কতই বা সহ্য করা যায়!’

প্যারিসে এসে ফরাসী শিল্পকলার প্রেমে পড়ে যান এই নারী। তিনি লিখেন, ‘নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। মেঘ ফুঁড়ে স্বর্গ পর্যন্ত উঠে গিয়েছে এক বিশালাকার লৌহনির্মিত ভবন, অথচ শহরের কোনও ডাকটিকেটে তার ছবি নেই। সীন নদীর দু’তীর জুড়ে দেখতে পেলাম চীন, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা দেশের বৈশিষ্ট্যসূচক আদলে গড়ে তোলা হয়েছে অনেকগুলো ভবন। আমি হল্যান্ড খোঁজার চেষ্টা করলাম,তবে লাভ হলোনা।’

একসময় বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর সাথে পরিচয় হয় হারির। পিকাসো সম্পর্কে অপ্রিয় কিছু সত্য উঠে আসে তার চিঠিতে। ‘তিনি রূপের প্রশংসা করে বললেন, আমার ছবি আঁকতে চান। তবে সেজন্যে আমাকে মালাগা যেতে হবে। তিনি মুখে না বললেও আমি বুঝতে পারলাম, তার উদ্দেশ্য একটাই- আমাকে নিজের বিছানায় নিয়ে যেতে চান।’

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব পান মাতাহারি। আর এটাই তার জীবনের সমাপ্তি টেনে দেয়। হারি কি আসলেই গুপ্তচর ছিলেন? কার পক্ষে কাজ করতে চেয়েছেন তিনি? জার্মানি, ফ্রান্স নাকি রাশিয়ার? এসবের উত্তর পেতে পড়তে পারেন ‘দ্য স্পাই’।

বইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উক্তি/ অংশ ....‘ফুল আমাদের শিক্ষা দেয়, কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়- না ওদের লাবণ্য, এমনকি না সেই ভয়াল সত্য, যে একদিন ওরা বিলীন হয়ে যাবে।’, ‘যৌনতাকে আমি একরকম যান্ত্রিক অনুভূতি হিসেবে মানতে শুরু করি। এমন এক অনুভূতি যার সাথে প্রেমের কোনও সম্পর্ক নেই’, ‘লোকে বলে জীবন অতটা জটিল নয়। কথাটা ভুল। আইসক্রিম খাবার ইচ্ছা পোষণ করা খুবই সহজ, তেমনই সহজ হচ্ছে বিখ্যাত হবার চাহিদ’, ‘ফ্রান্স আর আমাকে আকৃষ্ট করেনা। এই দেশ আমার সেরাটুকু শুষে নিয়ে, ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে আস্তাকুঁড়ে’, ‘ফরাসিরা যখন আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করেছে, তখন আমরা কামান বানাতে ব্যস্ত’, ‘মানুষকে শাস্তি দিতে নয়, ওই জেলখানা ব্যবহার করা হয় উচ্চাভিলাষীদের মানসিক শক্তিকে গুঁড়িয়ে দিত’, ‘তোমাকে অভিযুক্তকারীদের ক্ষতটা আরো বেশি গভীর। আজ তারা হাসবে, হাত মেলাবে একে অপরের সাথে। তবে এমন একদিন আসবে যেদিন তাদের মুখোশ খুলে যাবে। সেরকম কিছু না হলেও অন্তত তারা নিজেরা তো জানবে, এক নিরপরাধ প্রাণকে তারা পৃথিবীর বুক থেকে মুছে দিয়েছে শুধু মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে ফেরানোর জন্য।’

লেখক পাউলো কোয়েলহোর এই লেখার সমালোচনা করার যোগ্যতা আমার নেই। তবে অনুবাদ যথেষ্ঠ ভাল হয়েছে। আমি অনুবাদককে (ওয়াসি আহমেদ) দশে নয় দিতে চাই। সত্যিই, একটানে পড়ে নেবার মত বই ‘দ্য স্পাই’।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence