আলো ছড়াচ্ছে শিক্ষার্থীদের তৈরি উন্মুক্ত পাঠাগার
- আব্দুল্লাহ আল নাঈম
- প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৪৮ PM , আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০২:৩৪ PM
বর্তমান তরুণ সমাজের বড় অংশই অবসর সময় পার করে অনলাইন গেইম আর ফেসবুকে। আবার কেউ কেউ আসক্ত হয়ে পড়ছেন মাদকেও। এসব থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে করোনাকালে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের কিছু শিক্ষার্থী। তরুণদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে তারা নিজ উদ্যোগেই তৈরি করেছেন একটি পাঠাগার।
২০২০ সালের ২৮ মে পাথালিয়া ইউনিয়নের পানধোয়া গ্রামে এ পাঠাগারটির উদ্বোধন করা হয়। পাঠাগার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণকারী তরুণদের বেশিরভাগই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী। সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, পাঠাগারটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবনী, শহীদ জিয়াউর রহমানের জীবনাচার, ইসলামি বই, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, নাটক, ছোট গল্প, ভ্রমণ কাহিনী, বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন, কম্পিউটার শিক্ষা, খেলাধুলা ও রম্য রচনাসহ প্রায় দুই হাজার বই রয়েছে।
এছাড়া, পাঠাগারটিতে প্রতিদিন একটি দৈনিক পত্রিকা ও বিভিন্ন ধরনের মাসিক ম্যাগাজিন রাখা হয়। পাশাপাশি, জ্ঞান চর্চার জন্যে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বই নিয়ে অধ্যয়ন করারও সুযোগ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পাঠাগারটিতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মানুষের ভিড় জমে। পাঠকদের সুবিধার্থে সার্বক্ষণিক পাঠাগারটিতে রয়েছে একজন স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা।
বই পড়তে আসা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সাদিকুর রহমান বলেন, “এখানে পাঠাগার হওয়ায় আমরা উপকৃত হচ্ছি। আগে অবসর সময়ে বিভিন্ন আড্ডা কিংবা মোবাইল ফোনে সময় কাটাতাম। কিন্তু এখন আড্ডার পরিবর্তে পাঠাগারে বই পড়ি। বই পড়লে মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়, মানুষ খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। এমন পাঠাগার প্রতিটি গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন ।”
কলেজ শিক্ষার্থী জুয়াইরিয়া বলেন, “ক্লাস শেষে এই পাঠাগার থেকে বই নিয়ে বাসায় গিয়ে পড়ি। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সৃজনশীল বই পড়তে অনেক ভালো লাগে। এখানে অনেক কবি ও সাহিত্যিকের বই রয়েছে। আমি ছাড়াও আমাদের কলেজের অনেক শিক্ষার্থী এখানে নিয়মিত বই পড়তে আসেন।”
এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আস্ট্রো ফিজিক্সের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মল্লিক আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী জীবন থেকে অবসর নিয়েছি কয়েক বছর আগে। এখন বাসায়ই থাকি এবং মাঝে মাঝে সময় পেলে এলাকার এই পাঠাগারটিতে বই পড়তে আসি। শিক্ষার্থীদের তৈরিকৃত পাঠাগারটি আমাকে মুগ্ধ করেছে ।“
এমসয় তিনি আরও বলেন, “একটি ভালো পাঠাগারের দ্বারা একটি সমাজ আলোকিত হতে পারে। এমন পাঠাগার দেশের প্রতিটি প্রান্তে গড়ে উঠলে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনের নেশা দূর হয়ে জ্ঞানচর্চা বৃদ্ধি পাবে।”
পাঠাগার তৈরির উদ্যোগের প্রশংসা করে স্থানীয় পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “এই পাঠাগারের কথা আমি শুনেছি। আমার এলাকার স্থানীয় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এমন সুন্দর একটি পাঠাগার গড়ে উঠেছে, এতে আমি অনেক আনন্দিত। পাঠাগারের সম্প্রসারণ ও সংযোজনে কিছু একটা করার চেষ্টা করবো।”
পাঠাগারের আহ্বায়ক সাইদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের যুগে নতুন প্রজন্ম গেমস, মাদক, স্মার্টফোন ও অনলাইন মুখী হচ্ছে। এই তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।”
এসময় তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বই পড়ার পাশাপাশি পাঠাগার থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা এবং নানামুখী সৃজনশীল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।“