৫ আগস্টের পর বদলে গেছে বাকৃবির হলে সিট বরাদ্দের চিত্র
- বাকৃবি প্রদায়ক
- প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫, ০৭:২৪ PM , আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৩৩ PM
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ৫ আগস্টের পর থেকে আবাসন ব্যবস্থায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এখন আর শিক্ষার্থীদের হলে সিট পেতে কোনো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। হল প্রশাসনের উদ্যোগে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সিট বণ্টন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সহজেই আবাসনের সুযোগ পাচ্ছে। বিশেষ করে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও নিবিড় তদারকির ফলে সিট বরাদ্দের চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিট পেতে আর রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো বা সিট বাণিজ্যের আশ্রয় নিতে হচ্ছে না। ভর্তি হওয়ার পরই হল প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপে শিক্ষার্থীরা সহজে সিট পাচ্ছে। অনেক হলে প্রভোস্টরাই নিজে রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ করে দিচ্ছেন।
বাকৃবির আশরাফুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলম মিয়া বলেন, হল প্রশাসন আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে সকল শিক্ষার্থী হলে আসন পেতে পারে এবং কোনো আসন সংকট যাতে না দেখা দেয়। আগে যে কমনরুম ছিল আশরাফুল হক হলে তা এখন নেই। এবার ২০২৪-২৫ বর্ষের ৫২ জন শিক্ষার্থীকে হলের নিচতলায় হল প্রশাসন সিট বরাদ্দ দিয়েছে। আগের মত রাজনৈতিক লবিং করে সিট নেয়া অথবা সিট নেয়ার জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার কোনো সুযোগই নেই এখন। আমি, হাউজ টিউটরসহ যারা আছি সবসময় শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নিচ্ছি এবং তারা এখন সবাই ভালোই আছে। আগের মত বর্তমানে হলে কোনো গেস্টরুম কালচার, র্যাগিং নেই।
ঈশা খাঁ হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হল প্রশাসনের তদারকিতে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। হলে কিছু সিট সংকট রয়েছে, তবে ছেলেদের নতুন হলটির সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন হলে শিক্ষার্থীদের কষ্ট আরো লাঘব হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রথম বর্ষের আবাসিক ছাত্র নিলয় বসাক বলেন, প্রথমে আমি ভেবেছিলাম অপরিচিতদের সঙ্গে থাকতে গেলে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করতে হবে, তবে তা ঘটেনি। প্রথম দিনেই প্রভোস্ট স্যারের মাধ্যমে আমাদের রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র ভাইরা রুমে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। এরই মধ্যে আমার রুমমেটদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে আসন বরাদ্দ নিয়ে যে নেতিবাচক মন্তব্য শুনতাম তা দেখছি এখন নেই।
অন্যদিকে ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে বেগম খালেদা জিয়া হলের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় ১২০০ আসন বিশিষ্ট তিনটি ব্লক সমন্বয়ে দশতলা এই হলটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে মেয়েদের আবাসন সংকট কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আবদুল কাদের বলেন, হলের তিনটি ব্লকের মধ্যে একটি ব্লকের ছয় তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রথম বর্ষের ৩০০’রও বেশি ছাত্রীকে আসন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আগামী বছরের শুরুতে তিনটি ব্লকের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হলে আরও ৯০০ শিক্ষার্থীকে এই হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে। এতে অন্যান্য ছাত্রী হলগুলোরও আসন সংকট দূর হবে।
পাশাপাশি ছেলেদের জন্য বাকৃবির শহীদ জামাল হোসেন হলের সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে। হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল বলেন, নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি হবে বাকৃবির অন্যতম বড় হল। আমরা আশাবাদী যে, ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে হলের কাজ শেষ হবে। পূর্বে হলে মাত্র ২৫০ আসন ছিল যা নতুনভাবে নির্মাণের পর ১০ তলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবনে রূপান্তরিত হয়ে ১২শ আসনের বিশাল সক্ষমতা অর্জন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, নির্মাণাধীন বেগম খালেদা জিয়া হলে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। অন্যান্য হলগুলোতেও সবাইকে সিট দেয়া হয়েছে। এখানে রাজনীতির আশ্রয় নিয়ে সিট বরাদ্দ নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে বেশি চাপ হচ্ছে ছাত্রীদের নিয়ে। প্রতিবছরই ছাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। বেগম খালেদা জিয়া হলের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে এসব সমস্যা আর থাকবে না। তাছাড়া ছেলেদের সিট সংকট তেমন নেই বললেই চলে কিন্তু শহীদ জামাল হোসেন হলের নির্মাণ কাজ শেষ হলে সিট সংকট পুরোপুরি দূরীভূত হবে বলে আমি আশা প্রকাশ করছি।