উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন ১৩ লাখ, এইচএসসিতে পাস ১০ লাখ
- শিউলি রহমান
- প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:১৩ AM , আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০৯ PM
২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১২ লাখ তিন হাজার ৪০৭ জন। আর উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। অর্থাৎ পাসের হার ছিল ৯৫.২৬ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে এবারে উচ্চশিক্ষায় লাখ লাখ আসন ফাঁকা পড়ে থাকবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে এইচএসসিতে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী পাস করেছেন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার থেকে প্রায় তিন লাখ আসন বেশি রয়েছে।
ইউজিসি ও ব্যানবেইস সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট আসন রয়েছে ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৬টি। আর এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। সারাদেশে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন শিক্ষার্থী। এ হিসাবে অন্তত পৌনে ৩ লাখ আসন খালি থাকবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র একটি অংশ উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশেও পাড়ি দেন।
জানা যায়, দেশের ৪৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে আসন আছে ৬০ হাজার। বেসরকারি ১০৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৭৫টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২ হাজার ২১৫টি সরকারি ও বেসরকারি কলেজে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮১৫ আসন রয়েছে।
আরও পড়ুন: পাবলিকে আসন পাবেন না এক লাখ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী
এ ছাড়া ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৭ হাজার ৭৫৬, দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজার ৫০০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০, চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭ হাজার ২০৬টি, টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ৫ হাজার ৬০০, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড এরোনটিক্যাল কলেজে ৬৫৪, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে আরও ৩ হাজার ৫০০ এবং চটগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন আছে।
এবারের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ২০২১ সালে এ হার ছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। অর্থাৎ গতবছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় কম শিক্ষার্থী পাস করায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফাঁকা থাকবে আসন। তবে শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চশিক্ষায় আসন বৃদ্ধি এবং নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রয়োজন নেই। বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, সুযোগ-সুবিধা ও পাঠদানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো বাড়ানো, পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ এবং মেয়েদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, আমার মনে হয় না উচ্চশিক্ষায় কোন আসন সংকট আছে। তবে আমাদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর নজর দেয়া প্রয়োজন। সারাবিশ্বেই এই শিক্ষার কদর বাড়ছে। আমি দেখেছি, বিএ-এমএ পাস করে নিউইয়র্কে গিয়ে ট্যাক্সিক্যাব চালাচ্ছে।
এদিকে, এইচএসসি ও সমমনা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এসব শিক্ষার্থীরা ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে উচ্চশিক্ষা শুরু করবেন। সবগুলো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম এখনো শুরু না হলেও ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তারিখ চূড়ান্ত করতে ভর্তি কমিটি একাডেমি কাউন্সিলে তারিখ সুপারিশ করেছে।
আরও পড়ুন: সরকারি মেডিকেল কলেজের কোনটিতে কত আসন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হবে ১৩ মে। এবারের ভর্তি পরীক্ষা হবে চারটি ইউনিটে, যা এত দিন পাঁচটি ইউনিটের অধীন হয়ে এসেছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের এ ভর্তি পরীক্ষাকে এখন থেকে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা নামে অভিহিত করা হবে।
আর দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী ১০ মার্চ। ১০৮৩৯টি আসনের জন্য অনলাইনে শিক্ষার্থীরা ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে আবেদন করতে পারবেন। যা চলবে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ২০২২-২৩ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে ২০২২ সালে এইচএসসি ও ২০২০ সালে এসএসসি অথবা ২০২১ সালে এইচএসসি ও ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২০ মে থেকে শুরু করার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটি।
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, আগামী ২০ মে প্রাথমিক বাছাই পর্ব এবং ১০ জুন চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সভায় এই তারিখ নির্ধারণ করে সুপারিশ করা হয়েছে। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এই তারিখ চূড়ান্ত হবে এবং তারপর বিজ্ঞপ্তি আকারে ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করা হবে।