এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের রসায়ন বিষয়ে পরামর্শ ও টিপস

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

২০২৫ সালের প্রাণপ্রিয় এইচএসসি পরীক্ষার্থীবৃন্দ, প্রথমেই শুভেচ্ছা নিও। আশা করি মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সকলে ভাল আছো এবং সুস্থ আছো। আমার দৃঢ় প্রত্যাশা যারা এখনো হতাশায় আছো তারা এ মুহূর্ত থেকে হতাশা ও অস্থিরতা মুছে নতুন করে শুরু করবে। কারণ হতাশা মানুষকে দুর্বল করে দেয়, আত্মপ্রত্যয়হীন করে তুলে। অপরদিকে কৃতজ্ঞতা, সন্তুষ্টি এবং শ্রম মানুষকে সক্রিয় ও সতেজ করে তুলে। 

এ মুহূর্তে সংক্ষেপিত ভাবে বইয়ের চিহ্নিত অংশগুলো রিডিং থেকে দ্রুত পড়ে নিয়ে এবং বোর্ডের এমসিকিউ-সিকিউগুলোর একই টাইপগুলো থেকে একটি করে প্রশ্নোত্তর চর্চার দ্বারা অল্প সময়েই সবগুলো কোর্স আয়ত্তে আনা সম্ভব হবে । যারা সকল কোর্সের সবগুলো টপিক ইতোমধ্যে আয়ত্ত করে নিয়েছো তারা দ্রুততার সাথে সব পড়া আবারো একবার রিভিশন দিবে জুনের ২০ তারিখের মধ্যে এটাই প্রত্যাশা। 

আমি রসায়নের একজন শিক্ষক হিসেবে যাদের পূর্ণ প্রস্তুতি, তাদেরকে বলব তোমাদের সিলেবাসের রসায়ন ১ম পত্রের ৪টি এবং ২য় পত্রের ৪টি সহ মোট ৮টি বিষয়ের উপর রিভিশন অব্যাহত রাখবে। কোনো অধ্যায়, এমনকি কোন টপিকও রিভিশনের বাদ রাখবে না। মনে রাখবে, গত বছর যা এসেছে এ বছর তা বাদ দিয়ে পড়াটা বর্তমানে অবশ্যই বোকামি। কেননা একই টপিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অনেকগুলো সৃজনশীল প্রশ্ন করা যায়।

যেহেতু জৈব যৌগ থেকে পরীক্ষায় প্রায় সব সময় ৩ টা সৃজনশীল এবং অনেকগুলো এম সি কিউ প্রশ্ন করা হয় তাই জৈব যৌগ রিভিশন স্কিপ করা একেবারেই ঠিক হবে না। আর তাছাড়া জৈব যৌগ থেকে এডমিশনেও অনেক প্রশ্ন আসে। প্রথম পত্রের গুণগত রসায়ন ও রাসায়নিক পরিবর্তন থেকে গাণিতিক প্রশ্ন বেশি আসে, তাই এখান থেকে এবং ৩য় অধ্যায়ের সংকরণ ও পোলারায়ন থেকে উত্তর করতে ভাল লাগবে। আর ২য় পত্রের জৈব যৌগ থেকে উত্তর করলে অল্প সময়েই উত্তর করা যায়; নম্বর কাটারও সুযোগ থাকে না বললেই চলে। তড়িৎ রসায়ন ছোট একটি অধ্যায়, টপিকও কম এবং গাণিতিকও রয়েছে। পরিমাণগত রসায়নেও শুধু গাণিতিকই রয়েছে বলতে গেলে। পরিবেশ রসায়ন অধ্যায়টাও সহজ। তাই ২য় পত্রের যেকোনো অধ্যায় থেকে উত্তর করা যেতে পারে।

যারা রসায়নে এখনো অনেক পিছিয়ে আছো তাদেরকে বলব তোমরা প্রতিটা অধ্যায়ের জন্য বিগত বোর্ড পরীক্ষাগুলোতে আসা প্রশ্ন থেকে আলাদা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ টপিক বেছে নিবে। কমপক্ষে ১০ টা করে সৃজনশীল এবং অন্তত ১০০ টা করে এম সি কিউ চর্চা করো এ অল্প সময়ের মধ্যে। ইনশাআল্লাহ পরীক্ষা ভাল হবে।

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, মনে রাখবে পরিকল্পনা করতে করতে প্রতিদিন অনেকটা সময় ব্যয়ের দ্বারা কখনোই ভাল কিছু বয়ে আসবে না। এ মুহূর্তে যা দরকার তা হচ্ছে অস্থিরতাকে প্রশমিত করে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। এটি করতে গেলে কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকতেই হবে এবং কিছু বিষয় অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। 

আরও পড়ুন: স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষা নিন ইতালির মিলান ইউনিভার্সিটিতে, আবেদন স্নাতকোত্তরে

প্রথমেই যে জিনিসটি বলব তা হচ্ছে, স্মার্ট ফোন ল্যাপটপ ও টিভি থেকে দূরে থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের সঙ্গ থেকে আপাতত দূরেই থাকতে হবে। কেননা সেখানে প্রচুর সময়ের অপচয় হয়, মানসিকতার উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। রাত জাগা বন্ধ করতে হবে, তবেই শেষ রাতে উঠা নিশ্চিত করা যাবে। আমাদের ধর্মে বহু বছর আগেই এশার নামাজের পরপরই ঘুমানো এবং ২ টা বা ৩ টার দিকে উঠার ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যা প্রিয় নবী (স.) প্রতিদিন মেনে চলতেন। ইদানীং চিকিৎসা বিজ্ঞান আগে ঘুমিয়ে আগে উঠার ব্যাপক উপকারিতা সম্পর্কে গবেষণার দ্বারা জানা গেছে। 

যারা মনে করে রাত না জাগলে পড়া কভার হবে কীভাবে? তাদের উদ্দেশ্যে বলা, দেখো তুমি রাত জেগে পড় আর শেষ রাতে উঠেই পড় কথা তো একটাই। বরং সারাদিনের ক্লান্তিতে রাতের পড়াটা ততোটা ফলপ্রসূ হয় না বরং এশার পর শরীরে গভীর ঘুম ও বিশ্রামের প্রয়োজন অনুভূত হয়; গবেষণাও তাই বলে। যারা রাত জেগে পড়ে তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ব্রেইনের শার্পনেস তথা কোমলতা হ্রাস পায়। ফলে পরীক্ষার হলে প্রায়ই সৃজনশীল ভাবনা-চিন্তা মাথায় আসে না। তখন জানা জিনিসের উপরেও ভাল উত্তর করা যায় না। 

রাতে ঘুম কম কম মনে হলে দিনের একটা ভাগে যেমন- দুপুরের পূর্বে বা পরে নিরিবিলি পরিবেশে সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট ঘুমানো যেতে পারে। তাতে শরীরের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে মুহূর্তেই সতেজতা আসবে। একে ইংরেজিতে বলে ‘ন্যাপ’; যা আমাদের প্রিয় নবীর (স.) সুন্নাহ অনুসারে বলা হয় কয়লুল্লা। মনে রাখতে হবে কয়লুল্লা বা ন্যাপ ৩০ মিনিটের বেশি করা যাবে না। সেক্ষেত্রে প্রায় দেড় ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। কারণ ৩০ মিনিটের বেশি ঘুমালে ঘুমের পরের স্তরে চলে যায় শরীর। ফলে তখন অনেকক্ষণ ঘুমের প্রয়োজন হয়। তা না হলে ক্লান্তি দূর হয় না। 

পরীক্ষার পূর্ব রাত্রিতে চেষ্টা করতে হবে পড়ার চাপ একবারেই না রেখে কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা তো ঘুমাতেই হবে। তবেই শরীর মন ও মস্তিষ্ক ভাল থাকবে এবং পরীক্ষার হলে ভাল লাগবে।

লেখক: ৩৩তম বিসিএস ক্যাডার (শিক্ষা), সহকারী অধ্যাপক (রসায়ন), শ্রীবরদী সরকারি কলেজ, শেরপুর


সর্বশেষ সংবাদ