সবচেয়ে বেশি ব্যয় ব্র্যাকে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় ব্যয় © টিডিসি সম্পাদিত
গেল বছরের চেয়ে তুলনামূলকভাবে গবেষণা ব্যয়ে এগিয়েছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে এসব উচ্চশিক্ষালয়ের মধ্যে ২৭টি গবেষণা খাতে এক টাকাও ব্যয় করেনি। গবেষণায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বার্ষিক ব্যয় ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৮৭০ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৩ সালের ৫০তম এই প্রতিবেদনটি গত মার্চ মাসে প্রকাশিত (প্রকাশকাল) হলেও সম্প্রতি প্রিন্ট কপি বের করেছে সংস্থাটি।
বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, কার্যক্রম চালু থাকা মোট ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৩ সালে গবেষণা খাতে বার্ষিক গড় ব্যয় ছিল ২ কোটি ১০ লাখ ৫৪ হাজার করে। এই খাতে মোট ব্যয় ছিল ১৬৬ কোটি ৩২ লাখ ৩২ হাজার হাজার টাকা।
ইউজিসি বলছে, এই বছর ৮১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে কম-বেশি ব্যয় করেছে। এর আগে ২০২২ সালে ৮৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে কম-বেশি ব্যয় করেছিল। ব্যয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ২০২৩ সালে কমলেও গবেষণা খাতে বার্ষিক মোট ও গড় ব্যয় বেড়েছে। এই খাতে ২০২২ সালে সর্বমোট ব্যয় ছিল ১৩৯ কোটি ৩১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, যা গড় হিসেবে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
ইউজিসি বলছে, ২০২৩ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালসমূহের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২ সালের তুলনায় গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ইতিবাচক। অপেক্ষাকৃত নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহেও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যেসকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে সঙ্গত কারণেই এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আশা করা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হবে। কারণ গবেষণা ব্যতীত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কাঙ্ক্ষিত মানে উন্নীত হতে পারে না।
ইউজিসি আরও বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী প্রত্যেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজ নিজ বার্ষিক বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গবেষণার কাজে ব্যয় করার কথা। কমিশন আশা করে যে, উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়নের কথা বিবেচনায় রেখে পরবর্তী শিক্ষাবছর থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিতভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় করবে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গবেষণায় সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২৩ সালের গবেষণায় ব্যয় করেছে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৭৩ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২৩ সালের গবেষণায় ব্যয় করেছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৫১৫ টাকা।
আরও পড়ুন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী কমছে প্রতি বছর
এর বিপরীতে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নামমাত্র টাকা গবেষণা খাতে ব্যয় করেছে। এরমধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বাইউস্ট) কুমিল্লা, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২৩ সালের গবেষণায় ব্যয় করেছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। আর কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২১ হাজারও ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করেছে।
গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় করেনি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়
দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আশা ইউনিভার্সিটি, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঈশাখা ইউনিভার্সিটি, জেড এইচ সিকদার বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ, রূপায়ণ এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটি, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি, আহ্ছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি রাজশাহী, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি।
ভুল সংশোধন
প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে সৈয়দপুরের বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (বিএইউএসটি) গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় করেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ওই বছর বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণায় ব্যয় করেছে ৯ লাখ ১৮ হাজার টাকার।
ইউজিসির ৫০তম প্রতিবেদন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য নিয়ে গিয়ে ভুলবশত এটি হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।