হলকক্ষে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার, ভয়ে রাবি ছাত্রের ক্যাম্পাস ত্যাগ!

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল   © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলকক্ষে ডেকে মারধর ও নির্যাতনের শিকার এক ছাত্র ভয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে অভিযোগ-সংবলিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।

ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলায়। অন্যদিকে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা এবং তাদের অনুসারী মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ ওরফে শশী, তাকি আহমেদসহ অনেকে।

লিখিত অভিযোগে আল-আমিন বলেছেন, গত ১৭ আগস্ট পরীক্ষায় অংশ নেন। বিকেল সাড়ে চারটায় পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা তাঁকে রবীন্দ্রভবন থেকে বঙ্গবন্ধু হলের ৩৩১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ ওরফে শশী, তাকি আহমেদসহ অনেকে আসেন। 

আরও পড়ুন: তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে পোস্ট, ছাত্রলীগের তোপে হল ছাড়লেন ঢাবি ছাত্র

আল-আমিন উল্লেখ করেছেন, মুমিনুর রহমানের সঙ্গে আসা লোকজন তাঁকে প্রচুর মারধর করেন। মুমিনুর মাথায় দুই লিটার পানির বোতল ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তিনি একপর্যায়ে অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর মুঠোফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেন তাঁরা। জ্ঞান ফেরার পর রাত আটটার দিকে জোরপূর্বক তাঁর ডেবিট কার্ড নিয়ে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকা তোলেন সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা। জোরপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি নিয়ে সেটির ভিডিও ধারণ করেন তারা। এমনকি কোনধরনের পদক্ষেপ নিলে প্রাণনাশের হুমকি দেন মুমিনুর ও তার অনুসারীরা। তাই নির্যাতন শেষে ছেড়ে দেয়া হলে ভয়ে পরীক্ষা ফেলেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি।

এরআগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ শশী ও তাকি আহমেদের সঙ্গে কয়েক মাস ফ্রিল্যান্সিং ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’-এর কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মনোমালিন্য হওয়ায় বছরখানেক আগে তিনি কাজ ছেড়ে দেন। এ কাজের জন্য তাঁদের সঙ্গে কোনো ধরণের চুক্তিপত্র ছিল না বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন আল-আমিন। 

তবে সব ধরণের নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তার ব্যবসায়িক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে মুমিনুর রহমান বলেন, দুরবস্থার সময় আল-আমিনসহ আরও কয়েকজনকে চাকরি দিয়েছিলাম। এক-দেড় বছর পর বিসিএএস দেয়ার কথা বলে চাকরি ছাড়ে আল-আমিন। কিন্তু পড়াশোনা না করে কয়েকজন মিলে আরেকটি নতুন কোম্পানি খোলেন তারা। এতে আমার ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত ১৭ আগস্ট বিষয়টির সুরাহার জন্যই বসা হয়। তবে সেখানে কোন ধরণের মারধরের ঘটনা ঘটেনি। ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়েও কিছু জানেন না তিনি।

আরও পড়ুন: রাবি ক্যাম্পাসে ভাসমান দোকানের ছড়াছড়ি, সরিয়ে না নিলে উচ্ছেদ

টাকা নেওয়া অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত বলেন, টাকা নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক ঝামেলা হয়েছিল। বিষয়টি  মমিনুর জানালে আমি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে বলি। তিনি বিষয়টি মিমাংসা করে দেন। মারধর-টাকা নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।

মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা বলেছেন, ঐদিন আলোচনাকালে আমিও সেখানে ছিলাম। মুমিনুর ও আল-আমিনের মধ্যে ব্যবসায়িক একটি বিষয় ছিল। বিষয়টি সুরাহার জন্যই কথা হয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানান এ ছাত্রনেতা। 

প্রক্টর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন সহকারী প্রক্টর ড. শাহনেওয়াজ পারভেজ এবং অন্য সদস্যরা হলেন, সহকারী প্রক্টরদ্বয় ড. পুরনজিৎ মহলদার ও ড. জহুরুল আনিস।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি অভিযোগ এসেছে। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি তদন্তে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

এরআগে, গত শুক্রবার মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভেগী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সামছুল ইসলামের দেয়া অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রক্টর দপ্তর। সেই তদন্ত প্রক্রিয়া এখন চলমান রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ