ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রলীগেরই দুই নেতা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ মে ২০২২, ১১:০৩ PM , আপডেট: ১০ মে ২০২২, ১১:০৩ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে করা মামলায় ১২৬ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে মামলার বাদী ও সিআইডির পরিদর্শক মো. আশরাফুজ্জামান এ কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম হাসিবুল হকের আদালতে সাক্ষ্য দেন তিনি।
প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মহিউদ্দিন রানা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। তারা দুইজনই ছাত্রলীগের তৎকালীন পদধারী নেতা ছিলেন। এর মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন রানা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১১-২০১২ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন রানা আর ফলিত রসায়নের ২০১৪-২০১৫ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন আব্দুল্লাহ মামুন। পরবর্তীতে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।
সাক্ষ্যে মামলার বাদী বলেন, ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ পেয়ে সিআইডি ঢাবির একুশে হল ও সলিমুল্লাহ হলে অভিযান চালায়। একুশে হলের ১০১ নম্বর কক্ষ থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সলিমুল্লাহ হলের ২০০৪ নম্বর কক্ষ থেকে মহিউদ্দিন রানাকে ওই দিন আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়। মহিউদ্দিন রানার কাছ থেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১ লাখ টাকা জমা দেওয়ার রসিদও উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আগ্রহী ব্যক্তিদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরবরাহ করেন। বিনিময়ে বিপুল অঙ্কের টাকা নেন।
বাদী জবানবন্দিতে আরও বলেন, এই চক্রের সঙ্গে সমীর, মিজান, আজাদ, তন্ময়, সুব্রত, তানজিল, অলিভ, উৎপলসহ আরও অনেকে জড়িত ছিলেন বলে আটক দুজন স্বীকার করেছেন। ইশরাক হোসেন রাফি নামে একজনকে ওই দিন আটক করা হয়। রাফি প্রশ্ন সরবরাহ নিয়ে মহিউদ্দিন রানাকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছিলেন বলেও স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার আসামিরা।
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি এই মামলায় ১২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন একই আদালত।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মহিউদ্দিন রানা, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মো. রিমন হোসেন, ইশরাক হোসেন রাফি, নাভিদ আনজুম তনয়, এনামুল হক আকাশ, ফারজাদ সোবহান নাফি, তানভির আহমেদ মল্লিক, মো. বায়জিদ, এস এম রিফাত হোসেন, ফারদিন আহমেদ সাব্বির, প্রসেনজিৎ দাস, আজিজুল হাকিম, নাহিদ ইফতেখার, রফিকুল হাসান এছামি, বনি ইসরাইল, মারুফ হোসেন, সাইফুল ইসলাম, খান বাহাদুর, মো. আইয়ুব আলী বাঁধন, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ, অলিপ কুমার বিশ্বাস, মাসুদ রহমান তাজুল, অসীম বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর আলম, সাইদুর রহমান, হাসমত আলী, আনোয়ার হোসেন, নুরুল ইসলাম, হোসনে আরা, কাজী মিনহাজুল ইসলাম, রাফসান করিম, আখিনুর রহমান অনিক, নাজমুল হাসান নাঈম, শিহাব হাসান খান, সালমান এফ রহমান, মুহায়মেনুল ইসলাম, সজিব আহমেদ, আব্দুর রহমান রমিজ, মাহবুব মামুন প্রমুখ।
২০১৭ সালে দেশব্যাপী ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা বেড়ে যাওয়া পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হলে (শহীদুল্লাহ হল ও অমর একুশে হল) অভিযান চালায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ সময় গ্রেপ্তার হন আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মহিউদ্দিন রানা নামে দুই শিক্ষার্থী। তাদের দেওয়া তথ্যে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে গ্রেপ্তার হন ভর্তিচ্ছু ইশরাক হোসেন রাফি।
এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর শাহবাগ থানায় মামলা করেন সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান।
মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশের সাইবার তদন্ত ইউনিটের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস। তদন্তকালে গ্রেপ্তারদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ১২৬ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ১০৪ জনের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
ওই আসামিরাসহ ১২৬ জনের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে পৃথক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১৯ সালের ২৩ জুন এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।