বাধ্যতামূলক মুখ খোলা রাখার নির্দেশ ঢাবি শিক্ষকের, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন
অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের অপরাধবিজ্ঞান কোর্সের প্রেজেন্টেশনের (উপস্থাপনা) জন্য নারী শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক মুখ খোলা রাখার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করেছেন ওই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন।

নোটিশে বলা হয়, উপস্থাপনা পোশাক পরে এবং মুখ খোলা রেখে উপস্থাপনা করতে হবে। তার এমন নির্দেশে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এমনকি তার এই নির্দেশনার ফলে ওই ব্যাচের নিকাব পরিহিতা একাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থাপনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোল্লা মোহাম্মদ ফারুকী এহসান আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, তার এই ধরনের কর্মকাণ্ড নিন্দনীয় এবং আমাদের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ধর্মীয় স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এছাড়া '৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডারে বলা হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয় কোন ধরনের শিক্ষার্থীদের উপর বৈষম্য করবে না। তিনি সেটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছেন তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যের বিপরীতে অবস্থান নেয়।

আরও পড়ুন: মাভাবিপ্রবিতে একই বিভাগে চান্স পেলেন জমজ দুই বোন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী জানান,শিক্ষক হবে বন্ধু সুলভ। সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু তার এমন আচরণ সত্যি আমাদের মনে ব্যাথা দেয়। কে কি পরবে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। উনি ধর্মীয় বিষয়ে আঘাত দেয়ার কে?

তবে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন তা অস্বীকার করেন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এরকম কোন বিষয় নোটিশে উল্লেখ করা হয়নি। এটা আবশ্যিক নয়।

আপনার এই নির্দেশনার কারণে অনেকেই উপস্থাপনা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এক্ষেত্রে আপনার মন্তব্য কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।

এদিকে এই নোটিশের পর প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।এক বিবৃতিতে সভাপতি জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ, সহ-সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আহসান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং এই ধরণের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে বলে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এই ধরণের ঘটনা খুবই অমানবিক এবং শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টকারী। অধ্যাপক কার্জন কোন নীতিমালার ভিত্তিতে এইরূপ নির্দেশনা জারি করতে পারেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

তারা আরো বলেন, অধ্যাপক কার্জনের বিরুদ্ধে এর পূর্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পুনরায় আরেকটি ন্যাক্কারজন ঘটনা ঘটার পূর্বেই তার স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে ফেলার অপরাধে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলেন তারা।

প্রসঙ্গত, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলা হয়েছিল অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান কার্জনের বিরুদ্ধে। একই বছরের ২২ জুলাই তিনি ফেসবুকে একটি লেখা পোস্ট করেন। সেখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ উঠলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে লেখাটি মুছে ফেলে ক্ষমা চান৷


সর্বশেষ সংবাদ