ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্ত ‘অগণতান্ত্রিক’ ও ‘অযৌক্তিক’

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা  © সংগৃহীত

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘অগণতান্ত্রিক’ ও ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। একইসাথে ‘ঘ’ ইউনিট বহালের দাবিতে ঢাবি উপাচার্যকে খোলা চিঠিও দিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানায় সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি উপাচার্যকে পাঠানো খোলা চিঠি পাঠ করেন ছাত্র ফ্রন্ট ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আরাফাত সাদ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাবি শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তর্মা, সহ-সভাপতি সাদিকুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোজাম্মেল হক।

খোলা চিঠিতে বলা হয়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ভর্তি কমিটির এক সভায় ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর ডিন কমিটির সভায় ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ভর্তি কমিটির সভায় সেই সিদ্ধান্তকেই অনুমোদন দেওয়া হয়। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি। গণমাধ্যম মারফত আমরা জানতে পেরেছি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি একাডেমিক কমিটির মতামতের বাইরে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: শিক্ষামন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ইস্যু নিয়ে যা বললেন স্বাস্থ্য শিক্ষার ডিজি

এতে আরও বলা হয়, গত ৮ নভেম্বর ২০২০ তারিখে ডিন কমিটি তাদের এক সভার একদম শেষের দিকে নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরে হঠাৎ করে ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলের বিষয়কে আলোচনায় নিয়ে আসে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন সেই আলোচনায় দ্বিমত প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীতে ২৩ নভেম্বর সাধারণ ভর্তি কমিটির সভায় এজেন্ডার বাইরে আবারও ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয় এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পক্ষ থেকে অসম্মতি জানানো হয়।

এরপর ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের এক সভায় উপস্থিত ১৬টি বিভাগের একাডেমিক কমিটিসমূহের সম্মতিতে ‘ঘ’ ইউনিট তুলে না দেওয়ার পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং তার প্রতিবেদন একাডেমিক কাউন্সিলে পাঠানো হয়। তারপরও সাধারণ ভর্তি কমিটির সভায় ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট একাডেমিক কমিটিসমূহের। ফলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ অধ্যাদেশ পরিপন্থী।

আরও পড়ুন: সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা নিতে চেয়েছিল আয়োজক কমিটি

ঢাবি প্রশাসন শিক্ষা সংকোচন নীতির দিকে এগোচ্ছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের ফলে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে। এর আগে একজন বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী তার নিজ ইউনিট এর সঙ্গে ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে দুইবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেত। নিজ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থীরা ‘ঘ’ ইউনিটের মাধ্যমে আরেকবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেত। এই সুযোগটা এখন আর থাকছে না। আগে থেকেই দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না থাকা ও প্রায় ১ হাজার ৪০টি আসন কমানোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে বলা যাচ্ছে যে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল হলে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ সংকুচিত হবে। অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধীরে ধীরে শিক্ষা সংকোচন নীতির দিকে এগোচ্ছে।

এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের দুর্দশার কথা না ভেবে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করার পর শিক্ষার্থীরা কিভাবে নিজেদের স্ব স্ব বিভাগ পরিবর্তন করে অন্য বিভাগের সাবজেক্টে ভর্তি হবে সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। করোনার বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা মারাত্মকভাবে মানসিক এবং একাডেমিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের মতো অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত তাদের সামগ্রিক কষ্ট বাড়িয়ে দিবে। উপরোক্ত কারণগুলো বিবেচনা করে আমরা প্রশাসনের ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ‘ঘ’ ইউনিট বহাল রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।


সর্বশেষ সংবাদ