‘শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আঘাত করা হয়নি’

এলমা চৌধুরী মেঘলা ও তার স্বামী
এলমা চৌধুরী মেঘলা ও তার স্বামী  © সংগৃহীত

শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে এলমা চৌধুরী মেঘলা আঘাত করা হয়নি। নিষ্ঠুরভাবে টর্চার করে এলমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুর রহমান। আজ রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে এলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীনের রিমান্ড শুনানিতে তিনি একথা বলেন।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে পরিচয়-প্রেম, বিয়ের ৬ মাস না যেতেই লাশ হলেন ঢাবি ছাত্রী

শুনানি শেষে আদালত ইফতেখারের আবার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার সাব-ইন্সপেক্টর সালাউদ্দিন মোল্লা তিন দিনের রিমান্ড শেষে আসামিকে আদালতে হাজির করে ফের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, তিন দিনের রিমান্ডে পেয়ে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।চতুরতার সাথে ঘটনার নানা বিষয় গোপন করেছে এলমার স্বামী। ঘটনায় জড়িত পলাতক আরও দুই আসামির বিষয়ে ইফতেখার সুকৌশলে গোপন করেছে।

আরও পড়ুন: স্বামীর সঙ্গে ঝামেলা চলছিল মেঘলার, বাধ্য করতেন ভিডিও কলে থাকতে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এলমার মামলাটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। সারাদেশে মামলাটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। আসামিকে আরও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পলাতক দুই আসামিকে গ্রেফতার এবং ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে। এজন্য তার পুনরায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এ সময় প্রথমে বনানী থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর আলমগীর হোসেন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।

তিনি বলেন, ‘এ মামলার ভিকটিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এলমা। আসামিরা ভিকটিমকে পড়াশোনা বন্ধ করতে বলেন। বন্ধ না করায় প্রথমে তার চুল কেটে দেয়া হয়। তারপরও ভিকটিম পড়ালেখা চালিয়ে যায়। এলমার স্বামী ইফতেখার কানাডা থেকে আসে। এরপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামিরা ভিকটিমকে হত্যা করে। কে, কীভাবে হত্যা করেছে তা জানার জন্য আসামির সর্বোচ্চ রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউর মো. শামসুর রহমান বলেন, ‘শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে এলমাকে আঘাত করা হয়নি। এমনভাবে টর্চার করে এলমাকে হত্যা করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: মেঘলার মৃত্যুর ঘটনায় ব্যবস্থা নিচ্ছে ঢাবি: প্রক্টর

আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি জানান, এ আসামি তিন দিনের রিমান্ডে ছিল। আবার তার রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর আসামি কানাডা থেকে দেশে আসে। ঘটনার দিন ১৪ ডিসেম্বর শাশুড়িকে ফোনে এলমার অসুস্থতার বিষয়টি জানায়। আসামি যদি তার স্ত্রীকে মেরে ফেলতো তাহলে কি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেত? এমন কিছু করলে তো সে লাশ ফেলে পালিয়ে যেত।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী দেখেছেন রুমের দরজা ভেঙে তাকে বের করা হয়েছে। আসামি যদি তাকে হত্যা করতো তাহলে তো দরজা ভেতর থেকে আটকালো কে? আর আসামি ১৫ তারিখ থেকে পুলিশ কাস্টডিতে। এ অবস্থায় তার বাবা-মা কোথায় কীভাবে জানবে? হাজার বার মারলেও সে কিছু বলতে পারবে না। হয়রানি, নির্যাতন করার জন্য আবার তার রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। ইফতেখার তার স্ত্রীকে বিদেশে নিতে সাত লাখ টাকা দিয়েছে। স্ত্রীকে বিদেশে নিয়ে যেতেই সে দেশে এসেছে। স্ত্রীকে হত্যা করেনি। বরং সে আত্মহত্যা করেছে। এ অবস্থায় রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন প্রার্থনা করছি।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ভিকটিম তার কাস্টডিতে ছিল। সে কীভাবে মারা গেলো তা আসামি কেন জানে না? এমনকি বাড়িতে কী ঘটেছে তারা নাকি কিছুই জানে না। আসামিরা তাকে হত্যা করেছে। এ অবস্থায় আসামির রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ইফতেখারের ফের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।


সর্বশেষ সংবাদ