হল ছাড়তে হচ্ছে অছাত্রদের, সিট পাচ্ছেন ঢাবির গণরুমের শিক্ষার্থীরা

ঢাবির হল
ঢাবির হল  © ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতি কমে আসা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা নেয়া সাপেক্ষে আগামী অক্টোবরের শুরুতে আবাসিক হল খুলে দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। হল খুলতে নতুন নীতিমালা গঠনের কাজ চলছে। সেই নীতিমালায় হল ছাড়তে হবে অছাত্রদের অর্থাৎ যাদের ছাত্রত্ব শেষ তাদের হল ছেড়ে দিতে হবে। আর সেসব ফাঁকা আসনে গণরুমের শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেয়া হবে।

এ বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল বাছির বলেন, ‘হল খুললে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে থাকতে দেয়া হবে না। যারা হলের বৈধ শিক্ষার্থী, যাদের টিকা নেয়া হয়েছে, কেবল তারাই হলে উঠতে পারবেন। যাদের ছাত্রত্ব শেষ, তাদের হল ছেড়ে দিতে হবে। সেসব ফাঁকা আসনে গণরুমের শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেয়া হবে।’

হল খোলার পর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় নীতিমালার আলোকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়ন করেছে হল প্রশাসন। সেই এসওপি এরইমধ্যে প্রভোস্ট কমিটির সভায় পাস হয়েছে। নতুন নীতিমালায় হলগুলোতে গণরুম না রাখার পরিকল্পনার কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম ধাপে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছে। তাদের পরীক্ষা শেষ হলে নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে অনার্স প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার পরিকল্পনা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকি শিক্ষার্থীরাও হলে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কী ভাবছে, জানতে চাইলে আব্দুর বাছির বলেন, ‘আমাদের কোন পুলিশ, বিজিবি বা র‍্যাব নেই। শিক্ষার্থীরাই আমাদের পরম অবলম্বন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শত বছরের সংস্কৃতি মেনে আশা করি তারা নির্দেশনা মেনে চলবে।’

১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হলগুলোর প্রাধ্যক্ষদের এসব কাজ সম্পন্ন করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্ধারিত সময়ে প্রস্তুতি শেষ করতে ছুটির দিনেও কাজ চলছে পুরোদমে।

হল সংস্কারের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের প্রধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে আমাদের হলের প্রবেশ পথে নতুন করে একটি বেসিন বসিয়েছি। প্রতিটি ওয়াশরুমকে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। আমাদের সংস্কার কাজের প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আশা করি, বাকি কাজগুলো ১০ তারিখের আগেই শেষ করতে পারব।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘পুরোদমে হল খোলার প্রস্তুতি চলছে, ছুটির দিনেও কাজ চলমান। হলের ২-৩ জন সিনিয়র হাউজ টিউটর সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। ১০ সেপ্টেম্বরে মধ্যে আমাদের হল পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুত হবে। যখনই হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত আসবে, তখনই আমরা হল খুলে দিতে পারব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘হল খোলার বিষয়ে আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি, সেই মোতাবেক আমরা অগ্রসর হচ্ছি। প্রাধ্যক্ষদের যেভাবে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে, তারা সেভাবে কাজ করছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার পর ছাত্রত্ব নেই এরকম শিক্ষার্থীদের হলে না রাখার বিষয়ে ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘যাদের ছাত্রত্ব নেই, তারা হলে থাকতে আসবে কেন এই প্রশ্নটা তাদেরও করতে হবে। তাদের পড়াশুনা শেষ, তারা তাদের মতো করে কর্মজীবনে প্রবেশ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব শেষ- এমন কেউ হলে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা ও হলগুলোতে যাতে শিক্ষার্থীরাই থাকে, তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ১৩টি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর পরিবেশ কমিটির সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেদিন রাত ৯টায় ভার্চুয়াল ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষরাও যুক্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী।

ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও ছাত্রসংগঠনগুলো এবং পরিবেশ পরিষদ একমত হয়ে সহযোগিতা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রক্টর।


সর্বশেষ সংবাদ