অনলাইন পরীক্ষা নিয়ে যা ভাবছেন ঢাবির শিক্ষার্থীরা
- ইমদাদুল আজাদ, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২১, ১২:০২ PM , আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৪ AM
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোকে নিদের্শনা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। তবে চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যেই পরীক্ষা নেওয়া হবে না জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অনলাইনে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা ইতোমধ্যে ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করে, তা সংশ্লিষ্ট অনুষদ এবং বিভাগগুলোতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে নির্দেশনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, অনলাইনে এই পরীক্ষা কিভাবে নেওয়া হবে, এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাবির সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ইন টিচিং এন্ড লানিংয়ের উদ্যোগে তিন পর্বের প্রথম পর্বটি তৈরি করে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অনুষদ এবং বিভাগগুলোতে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া পরীক্ষার উত্তরপত্র স্ক্যানিং এবং জমাদান সংক্রান্ত আরেকটি ভিডিও টিউটোরিয়ালও সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে ১ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত ছিল স্নাতক বিভিন্ন বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা জুলাই থেকে সশরীরে শুরু হবে। যদি লকডাউন বা করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, তাহলে পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া হবে।
তথ্যমতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গত বছরের জুলাই থেকে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। দেশের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আরও আগে থেকেই অনলাইনে শিক্ষাক্রম চালু করে। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফলাফল প্রকাশ কার্যক্রম চালাতে থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন সেশনে শিক্ষার্থী ভর্তি এমনকি সমাবর্তন অনুষ্ঠানও করেছে। কিন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতে পারলেও পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় থেকে যায়।
এর কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ডিজিটাল সুবিধা পুরোপুরি নেই, যা দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও ঘরে বসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসেবা পেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ডিজিটাল সুবিধা দেয়ার কথা বলা হলেও আদতে তার বাস্তবায়ন হয়নি। উচ্চশিক্ষায় সেশনজট নিরসনে যখন সমাধানের কথাবার্তা চলে, তখন শিক্ষকেরা কেবল একে অপরকে দোষারোপ করেই দায় সারার চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা কেনইবা সেশনজট নিরসনে সরব হতে পারছেনা?
কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী সেশনজট কমানোর জন্য অনলাইনে পরীক্ষা দিতে রাজি থাকলেও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষিতে অধিকাংশের মত অনলাইন পরীক্ষার বিপক্ষে। অনলাইন পরীক্ষার নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মতামত তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ঢাবি প্রতিনিধি ইমদাদুল আজাদ—
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সাইফুন নাহার স্মৃতি বলেন, আমার মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনলাইন পরীক্ষা মোটেও শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নয়।
তার মতে, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। এ সময়কালে যদি শুধু আমার ব্যাচের কথাই বলি, তবে অর্ধেক উপস্থিতিও ছিল না। শিক্ষকদেরও নেটওয়ার্ক সমস্যায় পড়তে দেখেছি। বাকি অর্ধেক যারা অনলাইন ক্লাসের জন্য মানসম্মত ফোন কিংবা প্রতিদিনের লম্বা ক্লাস শিডিউলের জন্য ডাটা প্যাক কিনতে পারেনি, তারা যে নির্বিঘ্নে এক্সাম দিতে পারবে, এর নিশ্চয়তা কোথায়?
সাইফুন নাহার জানান, অনলাইনে সম্প্রতি তাদের ব্যাচের একটি ইনকোর্স এক্সাম হয়েছিল, যেখানে শিক্ষকেরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রশ্নপত্র দিয়ে উত্তরপত্র জমাদানের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে ফোনে ছবি তুলে পিডিএফ ফাইল বানিয়ে স্যারকে ই-মেইল করা লাগবে।
তিনি আরও বলেন, এই যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব করতে হয়েছিল, এটা অনেক স্ট্রেসদায়ক। কারণ শেষমুহূর্তে গিয়ে নেটওয়ার্ক চলে যাওয়া মানেই সাবমিশনের টাইম লেট হওয়া। তাছাড়া খাতা দেখে মূল্যায়ন করা আর অনলাইন ফাইল দেখে মূল্যায়ন করায় বিস্তর তফাত আছে বলে মনে করছেন তিনি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী অগ্নি কল্লোল রিয়াজ বলছেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে যখন সরাসরি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না তখন অনলাইন পদ্ধতি মন্দের ভালো। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই যাতে অনলাইন ব্যবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে এই বিষয়ে নজর দেয়া দরকার। নেটওয়ার্ক পদ্ধতির উন্নতি করে সবাইকে ডিভাইসের আওতায় আনলেই আমরা অনলাইন ব্যবস্থার সুফল পেতে পারি।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মির্জা নুর-উন-নবী বলেন, অনলাইন পরীক্ষাপদ্ধতিতে যদি খুব অল্প সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় তাহলে সেটি শিক্ষার্থীদের জন্য ফলপ্রসু হবেনা। কারণ সেই নির্দিষ্ট সময়ে নেটওয়ার্ক জটিলতায় শিক্ষার্থীদের মাঝে অনেকে ভোগান্তিতে পড়তে পারে।
তবে যদি অনলাইনের মাধ্যমে কয়েক দিন বা একটু বেশি সময় দিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিয়ে সেমিস্টার শেষ করা যায় তাহলে সেটি আমাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সিলেবাস কমিয়ে শিক্ষকদের প্রশ্নপত্র প্রণয়ণ করতে হবে, যেহেতু শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি বড় অংশ অনলাইন ক্লাসের বাইরে ছিল।
স্যার এ এফ রহমান হলের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন বলেন, আমি মনে করছি অনলাইনে বা অফলাইনে যে ভাবেই হোক না কেন আমাদের পরীক্ষাটা অন্তত নেয়া উচিৎ। দেশে যেহেতু করোনা পরিস্থিতি বাড়ছে তাই আমি মনে করি বিভাগ অনুযায়ী সীমিত আকারে আবাসিক হলগুলো খুলে দিয়ে ধাপে ধাপে পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, আবাসিক হল খোলা সম্ভব না হলে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া যায়। তবে অনলাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রে ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তবুও যেভাবেই হোক পরীক্ষাটা নেয়া খুব দরকার। কারণ ইতোমধ্যে আমদের মধ্য থেকে প্রায় দেড় বছর হারিয়ে গেছে। যার ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী হতাশায় ভুগছে। শিক্ষার্থীদের দিক ও সেশনজটের দিক বিবেচনা করে হলেও পরীক্ষা নেয়া প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জন মিল্টনও পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, যে কোনো উপায়ে পরীক্ষা নেয়া গেলে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ একটা সেশনজট থেকে রক্ষা পায়৷ এক্ষেত্রে যেসব শিক্ষার্থীদের ডিভাইস সংকট তাদের জন্য পরবর্তী সময়ে পরীক্ষায় সুযোগের বা বিশেষ উপায়ে উত্তীর্ণ করার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে৷
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান শান্ত বলেন, সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও উন্নত ইন্টারনেট ব্যবস্থা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পরীক্ষা পরিচালনা বেশ অবাস্তব চিন্তা। বহু শিক্ষার্থী এখন এমন স্থানে আছেন, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ খুব দুর্বল। সবাই যদি একই রকম সুযোগ-সুবিধা না পায়, তাহলে অনলাইন পরীক্ষা নিবে কিভাবে? নেটওয়ার্ক জটিলতায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আমরা অনলাইন ক্লাস করতে পারিনি।
অনলাইন পরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশিকায় যা বলা হয়েছে
ক) প্রস্তুতি পর্ব
১। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম প্রস্তুতকরণ:
অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার জন্য গুগল ক্লাসরুম ব্যবহার করতে হবে। প্রতি সেমিস্টার/বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ক্লাসরুম খোলা হবে। সংশ্লিষ্ট সেমিস্টার/বর্ষের পরীক্ষা কমিটি গুগল ক্লাসরুম খুলবে এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই ইনস্টিটিউশনাল ইমেইল আইডি ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে তাদের নিজ নিজ সেমিস্টার/বর্ষের জন্য তৈরি করা গুগল ক্লাসরুম এ পরীক্ষা শুরুর অন্তত তিন দিন আগে জয়েন করতে হবে। সকল পরীক্ষার্থী নির্ধারিত ক্লাসরুমে জয়েন করতে পেরেছে কি-না বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সেমিস্টার/বর্ষের পরীক্ষা কমিটি নিশ্চিত করবে।
প্রতিটি পরীক্ষার জন্য আলাদা অ্যাসাইনমেন্ট খোলা হবে। প্রদত্ত অ্যাসাইনমেন্ট-এ নির্ধারিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংযুক্তি হিসেবে থাকবে, যা পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিট পূর্বে গুগল ক্লাসরুমে প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষার্থীরা সংযুক্ত প্রশ্নপত্রটি নিজ কম্পিউটার/মোবাইলে ডাউনলোড করতে পারবে।
প্রত্যবেক্ষণের জন্য অনলাইন মিটিং প্লাটফর্ম জুম ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই BdREN থেকে দেওয়া জুমের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে।
২। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন সংক্রান্ত:
i) পরীক্ষার নম্বর ও সময়
প্রচলিত পদ্ধতির অর্ধেক সময়ে এবং ফাইনাল পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত নম্বরের অর্ধেক নম্বরে পরীক্ষা নিতে হবে। ফল বিন্যাসের সময় নম্বর দ্বিগুণ করে পূর্ণ নম্বরে রূপান্তরিত হবে।
*দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় পাবে।
ii) প্রশ্নের ধরন সংক্রান্ত
প্রচলিত পদ্ধতিতে ফাইনাল পরীক্ষার জন্য যে ধরনের প্রশ্ন করা হয় (যেমন বর্ণনামূলক, বহুনির্বাচনী, সংক্ষিপ্ত ইত্যাদি) এক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রশ্নই করা হবে। তবে বিভাগের একাডেমিক কমিটি চাইলে এর পরিবর্তন করতে পারবে। উভয় ক্ষেত্রেই বিভাগ থেকে সকল পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা শুরুর অন্তত এক সপ্তাহ পূর্বে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে অবহিত করতে হবে ।
৪। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে করণীয়
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীগণ নিজ দায়িত্বে তার চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন একজন শ্রুতিলেখক নির্বাচন করতে পারবে। শ্রুতিলেখকের শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত প্রমাণপত্র, সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, ছবি ও ফোন নম্বর পরীক্ষা শুরুর অন্তত সাত দিন আগে বিভাগ/ইনস্টিটিউট-এর চেয়ারম্যান/পরিচালক এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ইমেইল-এ পাঠিয়ে দিতে হবে।
খ) পরীক্ষা অনুষ্ঠান
১। অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার সংক্রান্ত
জুমে জয়েন করার ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই নামের পরিবর্তে কেবলমাত্র পরীক্ষার রোল নম্বর ব্যবহার করতে হবে। যদি কোনো পরীক্ষার্থী এর ব্যত্যয় ঘটায় সেক্ষেত্রে প্রত্যবেক্ষকদের একজন তাকে রিনেম করে দিবেন। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা শুরুর অন্তত ১৫ মিনিট আগে জুমে জয়েন করতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষার অন্তত ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কমিটি গুগল ক্লাসরুমের স্ট্রিমে জুম-এর আইডি পাসওয়ার্ড এবং জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য অন্তত তিনটি মোবাইল নম্বর পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই ভিডিও সচল রেখে দৃশ্যমান থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
২। উত্তরপত্র সংক্রান্ত
অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত উত্তরপত্র ব্যবহারের সুযোগ নেই বিধায় উত্তরপত্রের কাভার পৃষ্ঠার এডিটেবল সফটকপি পরীক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা শুরুর অন্তত একদিন আগে গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে। পরীক্ষা কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত পরীক্ষার খাতার অনুকরণে এই কাভার পৃষ্ঠা। প্রস্তুত করবেন। পরীক্ষার্থীগণ পরীক্ষা শুরুর পূর্বেই প্রয়োজনীয় তথ্য উক্ত সফটকপিতে পূরণ করে প্রিন্ট করবেন অথবা সেটি প্রিন্ট নিয়ে হাতে পুরণ করবেন অথবা প্রিন্টার না থাকলে A4 সাইজের সাদা কাগজে তার অনুলিপি প্রস্তুত করে রাখবেন। উত্তরপত্র স্ক্যান করার সময় এই পাতাটিকে প্রথম পাতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
পরীক্ষার্থীরা A4 সাইজ কাগজে নিজ হাতে প্রশ্নের উত্তর লিখবে এবং উত্তরপত্রের প্রতি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠা নম্বর এবং পরীক্ষার রোল নম্বর লিখতে হবে।
৫। উত্তরপত্র জমা দেওয়া সংক্রান্ত
পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীদেরকে তাদের উত্তরপত্র স্ক্যান করে/ছবি তুলে একটি সিঙ্গেল PDF ফাইল আকারে গুগল ক্লাসরুমের যে অ্যাসাইনমেন্ট-এর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়েছিল সেই একই অ্যাসাইনমেন্ট-এর বিপরীতে অ্যাটাচমেন্ট আকারে (কাভার পৃষ্ঠাসহ) পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার ১০ থেকে ৩০ মিনিট (বিভাগ/ইনস্টিটিউট কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত) সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। একজন পরীক্ষার্থী একটির বেশি ফাইল আপলোড করতে পারবে না। আপলোডকৃত ফাইলের নামকরণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই একটি কমন ফরম্যাট ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে সকল ফাইল ডাউনলোড করে কোনো ফোল্ডারে সংরক্ষণ করার পর কোন পরীক্ষার্থী কোন ফাইল আপলোড করেছে তা নির্ণয় করা দুরূহ হয়ে পড়বে। ফাইলের নামের ফরম্যাট হতে হবে *কোর্স কোড_পরীক্ষার রোল নম্বর'। এই বিষয়টি অবশ্যই আগে থেকে পরীক্ষার্থীদের অবহিত করতে হবে (গুগল ক্লাসরুমের স্ট্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে) এবং পরীক্ষা শুরুর আগে প্রত্যবেক্ষকগণ পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে আবার অবহিত করবেন।
উত্তরপত্রের স্ক্যানকৃত PDF ফাইলটি অ্যাসাইনমেন্ট-এর বিপরীতে অ্যাটাচ করা হয়ে গেলে অ্যাসাইনমেন্টটি টার্ন ইন' করার বিষয়ে প্রত্যবেক্ষকগণ বারবার সতর্ক করবেন। উত্তরপত্র জমা দেয়ার নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর প্রত্যবেক্ষকগণ সকল পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র জমা দেয়া এবং টার্ন-ইন করার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। এটি নিশ্চিত হওয়ার পরই একজন পরীক্ষার্থী জুম-মিটিং ত্যাগ করতে পারবেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে গুগল ক্লাসরুমে উত্তরপত্র জমা না নিয়ে পরীক্ষা কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত কোনো একটি ইনস্টিটিউশনাল ইমেইল আইডিতেও পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র ইমেইলে অ্যাটাচমেন্ট আকারে প্রেরণ করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই পরীক্ষা কমিটির উপস্থিত সদস্যের অনুমতির প্রয়োজন হবে।
৬। মৌখিক পরীক্ষা সংক্রান্ত
মৌখিক পরীক্ষা অনলাইনে জুম প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নেওয়া যাবে ।
৭। ব্যবহারিক পরীক্ষা সংক্রান্ত
যেসব বিভাগ/ইনস্টিটিউট-এ ব্যবহারিক কোর্স রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর সশরীর উপস্থিতি আবশ্যক না হলে অনলাইনে ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে।
১। যান্ত্রিক ত্রুটির ক্ষেত্রে করণীয়
বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধকতার কারণে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জুম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে অথবা উত্তরপত্র নির্ধারিত সময়ে আপলোড করতে ব্যর্থ হলে তাকে অনধিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে মোবাইল ফোনে প্রত্যবেক্ষককে অবহিত করতে হবে।
২। পুনঃপরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত
বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধকতার কারণে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে প্রত্যবেক্ষকের সুপারিশসহ পরীক্ষার্থীর লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পুনঃপরীক্ষা নেওয়া হবে।
কোনো পরীক্ষার্থী যদি অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
৩। অনলাইন কর্মশালা আয়োজন সংক্রান্ত
পরীক্ষা নেওয়া সংক্রান্ত উপরিউক্ত যাবতীয় কার্যক্রম গুগল ক্লাসরুম এবং জুমের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পরীক্ষা কমিটির সদস্য প্রত্যবেক্ষক এবং পরীক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে কর্মশালা আয়োজন বাঞ্ছনীয়। এই কর্মশালা বিভাগ/ইনস্টিটিউট অথবা অনুষদ পর্যায়ে হতে পারে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে গুগল ক্লাসরুমে পরীক্ষা দেওয়া ও নেওয়ার কর্মকৌশল সংক্রান্ত দুটি ভিডিও টিউটোরিয়াল অচিরেই প্রকাশ করা হবে।
এই নির্দেশিকায় বলা নেই এমন কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে পরীক্ষা কমিটি তার সমাধান দিতে পারবে।