ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা থাকছেন ঢাবির ‘বন্ধ’ হলে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক হলেরই কক্ষ খোলা থাকতে দেখা গেছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক হলেরই কক্ষ খোলা থাকতে দেখা গেছে  © সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে সরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল বন্ধ রেখেছে। এ কারণে ঢাবির হলে থাকতে পারছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে এর মাঝেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে থাকছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। লকডাউনের প্রায় পুরোটা সময় তারা হলে অবস্থান করেছেন বলে জানা গেছে।

প্রভোস্টরা বলছেন, ‘যারা ছিলেন’ তাদের বুঝিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। আবাসিক শিক্ষকদেরও তদারকি করার জন্য বলা হয়েছে। তবে সরেজমিনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এখনো হলে থাকতে দেখা গেছে।

শনিবার (১৯ জুন) রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-সাহিত্য সম্পাদক এস এম রিয়াদ এবং হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজাসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী হলে প্রবেশ করেছেন। তাদের অনুসরণ করে হলে প্রবেশ করলে মূল ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বেশ কয়েকটি রুমের দরজা খোলা ও আলো জ্বলা অবস্থায় দেখা যায়।

এছাড়া ৩০২, ৩০৭, ৩০৯, ৩১৩, ৩১৫, ৩১৭ ও ৩১৯ নম্বরসহ বেশ কয়েকটি রুমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আড্ডা দিতেও দেখা যায়। দোতলা এবং নিচতলার কয়েকটি রুমেও ছাত্রলীগের নেতাদের থাকতে দেখা যায়। এছাড়া হলের অন্য অংশে বিদ্যুৎ না থাকায় রুমগুলো খোলা নাকি বন্ধ, তা বোঝা যায়নি। তবে এসব অন্ধকার রুমেও বিশেষ ব্যবস্থায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বহিরাগতদেরও থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রশাসন ‘বন্ধ’ বললেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক হলেরই কক্ষ খোলা থাকতে দেখা গেছে, সেখানে অবস্থান করছেন ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী

এর আগে গত ৫ মে রাত ২টার দিকে জহুরুল হক হলে গেলে দেখা যায়, ‘হলের গেটে তালাবদ্ধ। গেটের সামনের লাইট বন্ধ কিন্তু প্রভোস্ট অফিসের সামনের লাইট জ্বলছে। গেট খোলার জন্য তালায় শব্দ করলে একজন কর্মচারী এসে জিজ্ঞেস করেন ‘কোথায় যাবেন?’

ছাত্রলীগের উপ-সাহিত্য সম্পাদক এস এম রিয়াদ হোসেনের কক্ষে যাওয়ার আগ্রহ জানালে সেই কর্মচারী তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতে দেন। পরে আবার তালা লাগিয়ে গেটের পাশে বসে থাকেন তিনি। ফেরার পথে তিনি আবার তালা খুলে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের এক কর্মচারী বলেন, ‘আমাদের হলে জয় ভাইয়ের সঙ্গে (বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি) যারা রাজনীতি করে গত বছর থেকেই তারা হলে থাকছেন। প্রভোস্ট স্যার নিষেধ করলেও তারা হলে থাকেন। শুরুর দিকে আমরা হলে কাউকে থাকতে দিতাম না। এক-দুইদিন যেতে না যেতেই হল শাখা ছাত্রলীগের ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা আমাদের গেট খুলে দেয়ার জন্য জোরাজুরি করে, হুমকি দেন। পরে আমরা প্রভোস্ট স্যারকেও জানিয়েছি। তিনিও তাদের থাকতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তারা এরপরেও হলে থাকছেন। এখন নেতারা এলে আমরা কিছু না বলে গেট খুলে দিই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সময় রাতের বেলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও হলের শিক্ষার্থী যারা এখন কেন্দ্রীয় নেতা, তারাও হলে আসেন। কিন্তু তারা কিছুক্ষণ অবস্থান করে চলে যান।’

গত বুধবার (১৬ জুন) রাতে সরেজমিনে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে গেলে সেখানেও একই দৃশ্য দেখা যায়। ছাত্রলীগের বিভিন্ন বর্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ও হলের পদপ্রত্যাশীরা বিভিন্ন কক্ষে অবস্থান করছিলেন। রাতের বেলায় হলের বিভিন্ন কক্ষে লাইট, ফ্যান চলতে দেখা যায়।

ছাত্রলীগের উপ-সাহিত্য সম্পাদক এস এম রিয়াদ হলে থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

নিষেধাজ্ঞার পরও হলে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি প্রশাসনের পক্ষে নিউজ করবেন নাকি ছাত্রদের পক্ষে নিউজ করবেন?’

পুনরায় ‘হলে কেন এবং কীভাবে থাকছেন’, এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন আগে হলে যেসব শিক্ষার্থী ছিলেন তাদের আমরা বুঝিয়ে বের করে দিয়েছি। হলে না থাকার জন্য নোটিশ দিয়েছি এবং আবাসিক শিক্ষকদের তদারকি করার জন্য বলেছি।’

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন রাতের বেলা হলে কেউ থাকে বলে আমার জানা নেই। আমরা কয়েকদিন আগে যারা থাকে তাদের বলে দিয়েছি। সতর্ক করেছি। আর আমরা তো ২৪ ঘণ্টা রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না।’

প্রশাসন ‘বন্ধ’ বললেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক হলেরই কক্ষ খোলা থাকতে দেখা গেছে, সেখানে অবস্থান করছেন ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘হল বন্ধ থাকা অবস্থায় সেখানে থাকা অপরাধ। আমরা আগেও হলের প্রভোস্টদের জানিয়েছি, যেন কেউ হলে থাকতে না পারে। এখন যদি কেউ থাকে তাহলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence