ছাত্রলীগ কর্মী বললে চাকরি হয় না, অসুস্থ হলেও পাশে কেউ নাই!

শরিফুল ইসলাম শাকিল
শরিফুল ইসলাম শাকিল

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্র সংসদের সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) শরিফুল ইসলাম শাকিল বুধবার মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মৃত্যুর আগে বেশ কিছুদিন ধরেই শরিফুলের জন্য সাহায্য চাওয়া হচ্ছিল পরিবার ও সতীর্থদের পক্ষ থেকে। যদিও তাতে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে প্রশ্ন তুলেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

তিনি লিখেছেন, ‘‘হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে, ২৪ বছরের তরতাজা একটা ছেলে এভাবে অকালে চলে গেলে, তাকে বাঁচানোর চেষ্টায় যদি সামান্য ত্রুটিও থাকে, স্বজনের মন কি আর মানে! শাকিলের বোনের হৃদয় বিদারক আহাজারি আর ভাইয়ের আফসোস দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিকেলের আকাশ-বাতাস!

সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল সংসদের ভিপি, কার্যত উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে, আর তেতো সত্যটা হচ্ছে, অর্থাভাবেই ছেলেটির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়নি!

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে শাকিলের মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রথম আস্থার জায়গা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপই নেয়নি, অথচ আমাদের নির্ধারিত ডাকসুর বাজেটের প্রায় ৯০ লাখ টাকা এখনো অব্যবহৃত পরে আছে!

যেহেতু ছাত্রলীগের কোন নিজস্ব ফান্ড নাই, এবং আমরা সাবেক-বর্তমান কেউ সেভাবে এগিয়ে আসতে পারি নাই। তাই এরপরের প্রত্যাশার জায়গা ছিল- সংগঠনের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে শাকিলের বিষয়টি ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক, প্রাণপ্রিয় নেত্রীর কাছে উপস্থাপন করা। আমি শতভাগ নিশ্চিত, ছাত্রলীগের ভালোমন্দ দেখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত যেকেউ বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে বিষয়টি উপস্থাপন মাত্রই তিনি তৎক্ষনাৎ কার্যকর ব্যবস্থা নিতেন; প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন। আমাদের নেত্রী মানবতার মা, এদেশের বহু অমুক-তমুকের জন্য তিনি এটুকু করে থাকেন, আর ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা তো তাঁর কাছে সন্তানতুল্য!’’

রাব্বানীর দাবি, স্কয়ারে ভর্তি থাকা অবস্থায় সংকাটপন্ন অবস্থা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিলো ছেলেটা। কর্তৃপক্ষ যখন বুঝতে পারল, পর্যাপ্ত অর্থের যোগান অনিশ্চিত, একপ্রকার জোর করেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেয়া হলো! অথচ স্কয়ারের কর্ণধার অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু ভাই সরাসরি পাবনার আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত এবং স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সম্মান ও মূল্যায়ন পান। তাই স্বভাবতই আমাদের প্রত্যাশা ছিলো, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ছাত্রলীগের শাকিলের বিষয়টি তিনি মানবিক দৃষ্টিতে দেখবেন। শুনলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বা ছাত্রলীগ দেখভালের দায়িত্বে থাকা জাতীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে নাকি সে অনুরোধও করা হয়েছিলো, কিন্তু কোন কাজ হয়নি তাতে। শাকিলের ভাই জানালো, স্কয়ারের সমুদয় বিল পরিশোধ করেই শাকিলকে ঢাকা মেডিকেলে আনতে হয়েছিল!

মেধা-যোগ্যতা, ত্যাগ-শ্রম, ভালো কাজ মূল্যায়নের নূন্যতম নিশ্চিয়তা নেই। মিথ্যা ষড়যন্ত্র আর দৃশ্যমান অন্যায়ের শিকার হলেও ন্যায়বিচার মেলে না। ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড বললে চাকরি হয় না, আহত-নিহত-অসুস্থ হলে নিজের বা পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নাই!

তাহলে স্বাভাবিক ব্যক্তিজীবন, লেখাপড়া, পরিবার বা অন্যসব তুচ্ছজ্ঞান করে, জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কৈশোর ও যৌবনের সোনালি সময়গুলো ছাত্রলীগের জন্য দেয়া ছেলে-মেয়েদের দিনশেষে প্রাপ্তিটা কি? কেবল উপহাস, অবহেলা, হতাশা, হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাস?’’


সর্বশেষ সংবাদ