মুজিব আমার চেতনা, মুজিব আমার বিশ্বাস

  © ফাইল ফটো

আগস্ট মানেই বাঙালির শোকের মাস। এ মাসের ১৫ তারিখে শকুনেরা হানা দিয়ে স্বাধীন বাংলার স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের উপর ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িতে পৈচাশিক হামলা চালিয়ে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে। যে ক্ষত বাঙালির হৃদয়ে সৃষ্টি হয়েছে তা কখনো মুছবার নয়।

এ ক্ষত যুগ থেকে যুগান্তরে, জন্ম থেকে জন্মান্তরে মানুষকে প্রেরণা দিচ্ছে বারবার। হুমায়ুন আজাদ জাতির পিতাকে স্মরণ করতে গিয়ে লিখেছেন, সবচেয়ে বিশাল ও ভারি যে লাশটি বাংলাদেশ নিজের বুকের কবরে বয়ে চলেছে, সেটি মুজিবের লাশ।

শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ মার্চ ১৯২০ - ১৫ আগস্ট ১৯৭৫) সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা মুজিব ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আনতে পরবর্তীতে পূর্বপাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন তিনি ছিলেন রাজনীতির কবি। দীর্ঘদিন কারা নির্যাতন সহ্য করেও মানুষের জন্য লড়াই করেছেন। তিনি হিমালয় পাহাড়ের চাইতে উচুঁ। তিনি সকল ধারণার ঊর্ধ্বে।

বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে তার জীবনের চাইতে বেশি ভালোবাসতেন। এই ভালোবাসা এ জাতি রক্ষা করতে পারে নি। শেখ মুজিব দুই খণ্ডে আত্মজীবনী লিখেন, যেখানে তিনি নিজ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছেন ও নিজের ব্যক্তিগত জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন। তার রচনা দুটি তার মৃত্যুর পর তার কন্যা ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশকাল: ২০১২। প্রকাশনী : দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। এই গ্রন্থটি ইংরেজিসহ আরো কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়। তার কারাগারের স্মৃতি নিয়ে রচনা করেন 'কারাগারের রোজনামচা' বাংলা একাডেমি ২০১৭ সালে প্রকাশ করেন। ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেন তার আরেক ভ্রমণ কাহিনী মূলক রচনা 'আমার দেখা নয়াচীন'।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম থেকে ছিলেন স্বাধীনচেতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। অন্যায়কে তিনি কখনো প্রশ্রয় দিতেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে হারান ছাত্রত্ব। মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ অনুরোধ জানালেও তিনি সে অনুরোধ গ্রহণ করেন নি।

এরপর ২০১০ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে কলঙ্কমুক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু সব কিছুর ঊর্ধ্বে, তার সাথে কারো তুলনা যেমন মিলে না তেমনি তিনিও কারো মুখাপেক্ষী নন। বঙ্গবন্ধু একক তিনি অসীম, সীমাহীন।

বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করতে গিয়ে কিউবার বিপ্লবের নায়ক ফিদেল কাস্ত্রো বলেন, আমি হিমালয় দেখি নি, আমি বঙ্গবন্ধু কে দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর মাঝে আমি হিমালয় খুঁজে পেয়েছি। তিনি দেশ কে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে নিজের জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দিয়েছেন কিন্তু রেখে গেছেন আদর্শ। তার আদর্শ বুকে ধারণ করলে মানুষ কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারে না। কখনো দুর্নীতি করতে পারে না।

বঙ্গবন্ধু কে আলোচনার মঞ্চে রাখার পাশাপাশি তার আদর্শ কে জীবন চলার পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করার কোন বিকল্প নেই। মুজিব আমার চেতনা, মুজিব আমার বিশ্বাস।

সময়ের অন্যতম কথা সাহিত্যক পলাশ মাহবুব বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে এক অসাধারণ কবিতা লিখেন। কবিতার নাম হলো "মুজিব"। কবিতাটি হলো, মুজিব কোন দলের না ক্ষমতা বা বলের না, কারো পকেট, থলের না। নৌকা কিংবা শীষের না উনিশ কিংবা বিশের না, মুজিব বলো কিসের না? মুজিব মানে দেশের নাম ঘোর না কাটা রেশের নাম, শুরু এবং শেষের নাম!!


সর্বশেষ সংবাদ