অর্জন থাকলেও প্রত্যাশার ধারেকাছে নেই ডাকসু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ   © সংগৃহীত

দীর্ঘ ২৮ বছর প্রতীক্ষার পর গত বছরের ১১ মার্চ সচল হয়েছে একসময় দেশের 'সেকেন্ড পার্লামেন্ট' খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ডাকসু নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে অনেক আশা-প্রত্যাশা ছিল। বহু ত্যাগ ও আন্দোলন সংগ্রাম হামলা-মামলার পরে হয়েছে ডাকসু। কিন্তু ডাকসুর মেয়াদ শেষ পর্যায়ে এসে অর্জন থাকলেও শিক্ষার্থীদের পত্যাশার ধারেকাছেও যেতে পারেনি ডাকসু। শুধু পত্যাশা পূরণ নয় ডাকসু সদস্যদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ডাকসু।

ডাকসু নির্বাচনে মোট ২৫টি পদের মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন গড়ে উঠা প্লার্টফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী পরিষদ থেকে ভিপি পদে নুরুল হক নুর এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন আখতার হোসেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে জিএস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসাইনসহ সংগঠনটির ২৩ জন নির্বাচিত হন।

অভিযোগ রয়েছে, ডাকসু প্রতিনিধিদের মধ্যে ২৩ জন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হওয়ায় সব সময় তারা ডাকসুতে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেছে। ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে সকল কাজ থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। ডাকসু সভায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে কোন প্রস্তাব ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বা সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন প্রস্তাব করলে ছাত্রলীগ প্যানেলের বেশি ভোট হওয়ার কারণে তাদের প্রস্তাব বেশির ভাগ রাখা হয়নি। এমনকি সিনেট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সময়ও ডাকসু ভিপিকে রাখা হয়নি।

পরে এজিএস সাদ্দাম হোসেন সিনেট সদস্য না হয়ে ডাকসু ভিপিকে সিনেট সদস্য করেন বলে জানা গেছে। ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন প্রোগ্রাম করতে বাজেট চাওয়াতেও জিএস রাব্বানীর স্বাক্ষর নিয়ে গাফেলতির অভিযোগ রয়েছে। সমাজসেবা সম্পাদক আখতার ‘অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন অন সাইবার সেইফটি অ্যান্ড ৯৯৯’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী একটি কর্মশালার আয়োজনের বাজেট ও অনুমোদন দিলেও ছাত্রলীগ প্যানেলের অসহযোগিতার কারণে শেষ পর্যন্ত তা করতে পারেননি বলে জানা গেছে।

ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর 

অন্যদিকে ডাকসু ভিপি ছাত্রলীগ প্যানেলের বিরোধিতার অজুহাত দিয়ে কোন কাজ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, এসএম হলে শিবির সন্দেহে এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ হল থেকে বের করে দেওয়ার পর তিনি ঐ শিক্ষার্থীকে হলে তুলতে গেলে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন। পরে তিনি এই অজুহাতে আর কোন হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সমাধান করতে যাননি বলে জানা গেছে। পরে গণমাধ্যমে ভিপি নুরের অজুহাতের বিষয়টি প্রচার হওয়ার পর তিনি বিজয় ৭১ হল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। পরে সেখানে ছাত্রলীগের সাথে ঝামেলা হওয়ার পর আর কোথাও যাননি বলে জানা গেছে।

তাছাড়া ডাকসুকে ব্যবহার করে ডাকসু সংশ্লিষ্ট কাজ ছাড়া সবসময় জাতীয় ইস্যু নিয়ে বেশি কথা বলেছেন এবং নিজের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার পরিষদকে বৃহৎ সংগঠন গড়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার ছাত্রলীগের মধ্যে সবসময় আভ্যন্তরীন কোন্দল ছিলো। নৈতিক স্খলনের দায়ে পদ হারান ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী। পদ হারানোর আগে ডাকসু জিএসের একক আধিপত্য ডাকসুতে চলতো, তার সহযোগী হিসাবে আধিপত্য বিস্তার করতেন এজিএস সাদ্দাম হোসেন।

আবার পদ হারানোর পর জিএস ডাকসুতে আসা কমিয়ে দিলেন এবং এজিএস সাদ্দাম হোসেন আধিপত্য বিস্তার শুরু করলেন। সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রয়ারী ডাকসুর নির্বাহী সভাকে কেন্দ্র করে জিএস রাব্বনী ও এজিএস সাদ্দাম হোসেনের আধিপত্য বিস্তারের কারণে ছাত্রলীগ প্যানেলের মধ্যে বিদ্রোহের সুর উঠে পরে সম্পাদকদের সাথে আভ্যন্তরীণ আলোচনার মাধ্যমে তারা সমাধান করেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ডাকসু নিয়ে ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল ও ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ভিন্ন প্যানেল থেকে আসায় প্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয় ছিলো না। যে যার মত কাজ করার চেষ্টা করেছে।

সবাই কাজের চেয়ে বেশি মিডিয়া ফোকাস চেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ডাকসুর কয়েকটি প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার পর গণমাধ্যমে আসার পর তা বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত, শিক্ষার্থীদের কাজ দেখানোর জন্য এসব প্রোগ্রাম প্রতিনিধিরা আয়োজন করেছে বলে অভিযোগ অনেকের। ডাকসু সদস্যদের কাজ সম্পাদকদের সাহায্য করা। কিন্ত ডাকসুর সদস্যরা সম্পাদকদের সাহায্য ব্যতিরেকে মিডিয়া ফোকাস ও জনমত তৈরির জন্য সবসময় একা কাজ করে গেছেন।

তাদের মধ্যে ডাকসু সদস্য রকিবুল হাসান ঐতিহ্য, রফিকুল ইসলাম সবুজ, ফরিদা পারভীন, তানবীর হাসান সৈকত, সাইফুল ইসলাম রাসেল, যোশীয় সাংমা চিবল, মাহমুদুল হাসান অন্যতম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত এক সদস্য জানান, ‘রাব্বানী ভাই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময়ে ডাকসুতে তার আধিপত্য বিস্তার চলতো তবে এখন সাদ্দাম ভাইয়ের আধিপত্য বিস্তার চলে।’

ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী 

এদিকে প্রতিনিধিদের কোন্দলের কারণে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান হচ্ছেনা। ডাকসুতে নির্বাচিত ছাত্রলীগ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দুই প্যানেলেরই নির্বাচনী ইশতেহার ছিলো শিক্ষার্থী বান্ধব। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আর মাত্র এক মাস থাকলেও নির্বাচনে দেওয়া ছাত্রসংগঠনগুলোর ইশতেহার দৃশ্যমান তেমন কিছু বাস্তবায়ন করতে পারেনি ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এবারের ডাকসু তাদের হতাশ করেছে।

ডাকসু নিয়ে তাদের যে আশা আকাঙ্খা ছিল তার খুব কমই দৃশ্যমান করতে পেরেছেন ডাকসু নেতারা। অনেকে বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্খার দিকটি বিবেচনায় রেখে নির্বাচনে ছাত্র নেতারা নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছেন। তবে বাস্তবে ভিন্ন তাদের দেওয়া ইশতেহার। এর মাধ্যমে ছাত্র নেতারা শিক্ষার্থীদের সরলতাকে ব্যবহার করেছেন। এসব নির্বাচনী ইশতেহার কথার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছু নয়।

ডাকসুতে নির্বাচিত ছাত্রলীগ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দুই প্যানেলেরই নির্বাচনী ইশতেহার ছিল- বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসন, গণরুম-গেস্টরুম  প্রথা উচ্ছেদ, অছাত্র-বহিরাগত বিতাড়ন, সান্ধ্যকালীন বাণিজ্যিক কোর্স বন্ধ, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, পরিবহন সমস্যার সমাধান, ক্যান্টিনে খাবারের মান বৃদ্ধি, সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল, ক্যাম্পাসে বাইরের যান চলাচল বন্ধসহ নির্বাচনী ইশতেহারের বড় অঙ্গীকারগুলোর বিষয়ে এখনও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এ কমিটি এক বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুদিন বাকি থাকলেও নিজেদের অভিষেক অনুষ্ঠানেই করতে পারেনি।

আবার এর মধ্যে ভিপি নুর ও জিএস গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক দুর্নীতি নিয়েও হয়েছে নানা রকম আলোচনা সমালোচনা।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনের ভূমিকায় সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠন। তবে সেক্ষেত্রে বিজয় একাত্তর হল ভিন্ন। আর মেয়েদের হলে প্রশাসন সিট বন্টন করে থাকে। ছাত্রলীগ হলগুলোতে প্রশাসনের ভূমিকায় থাকায় হলে অনায়াসে বহিরাগত ও অছাত্র থাকছে। যে কারণে আবাসন সংকট দেখা দিচ্ছে। সিট পাচ্ছেন না বৈধ শিক্ষার্থী। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে বহিরাগত ও অছাত্র বের করে দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের হাতে রক্তাক্ত হন ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়া এক স্বতন্ত্রপ্রার্থী। পরে বিষয়টির বিচার চাইতে গিয়ে ডাকসু ভিপি নুরসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রী লাঞ্চিতও হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভেবেছিলাম ডাকসু হলে সকল সমস্যা সমাধান হবে কিন্তু সব আগের মত আছে। হলের সকল কিছুর ক্ষমতায় এখন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হাতে রয়েছে।’

তবে, ডাকসুর অর্জন বলতে চাইলে কয়েকটি বিভাগ ও হলে ফি কমানো, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি ও সুইমিংপুলের সময় কিছুটা বাড়ানো, হলের ফি কমানো, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলার আয়োজন, সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ, ছাত্রী হলসহ বিভিন্ন রুটে পরিবহন বৃদ্ধি। যদিও এটুকুতেই সন্তুষ্ট নন শিক্ষার্থীরা। আর এসব কাজও বিচ্ছিন্নভাবে ডাকসুর কিছু সদস্য করেছেন। সম্মিলিতভাবে ডাকসুর কোনো পদক্ষেপ এখনও হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান বলেন, 'নির্বাচনে প্রার্থীরা যে পরিমাণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার অনেকাংশই পূরণে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। ২৮ বছরে সমস্যার পাহাড় জমেছিল। আর নির্বাচিত হওয়ার পর ডাকসু নেতাদের অনেকেই নিষ্ক্রীয় হয়ে গেছেন। এদিকে সদিচ্ছা ও অর্থায়নের অভাবেও বাস্তবায়নযোগ্য অনেক ইশতেহার পূরণ হচ্ছে না। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো কাজ হয়েছে। যদিও ডাকসু নেতারা বলছেন, আবাসন, গবেষণায় বরাদ্দ, খাবারের মানসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাদের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা রয়েছে।’

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে ‘ব্যর্থ’ হলেও এ পর্যন্ত ডাকসুর বাজেট থেকে ৮৩,৮৭,৫০৪ (তিরাশি লক্ষ একান্ন হাজার তিনশত চার) টাকা তোলা হয়েছে। তবে, এত টাকা কোথায় খরচ হলো তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তাদের মধ্যে ডাকসু ক্রীড়া সম্পাদক তানবীর ১৯,৮১,০০০, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন ১৩,৭১, ৮৩৪, আন্তজার্তিক সম্পাদক শাহরিমা অর্ণি ৬,৭১,৯০০, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী ৭,৮২,১২০, সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার ১২,৬৫,০০০, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী ৯,৯৯, ০০০, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ৪,৫০,০০০, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক শামস ঈ নোমান ৫৮,৭০০, সদস্য তানবীর হাসান সৈকত ৯০,০০০, সদস্য রাকিব ৬১৭০০, সদস্য রাইসা নাসের ৭৪,০৫০, সদস্য রাকিবুল ঐতিহ্য ২,২০০০০, মাহমুদুল হাসান ৯৪,৫০০,ফরিদা পারভীন ৬১,৫০০, সাইফুল ইসলাম রাসেল ১,০০, ০০০, যোশীয় চিবল সাংমা ৪০,০০০ টাকা ডাকসু ফান্ড থেকে উত্তোলন করেছেন। 

রোকন নামে স্যার এ এফ রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ডাকসুর তেমন কোন কাজ দেখলাম না। কিন্তু এত টাকা কোথায় ব্যয় হলো বুঝলাম না। ’

ডাকসুতে ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে ২৩ জন নির্বাচিত হওয়ায় ছাত্রলীগের ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী ডাকসুর কর্মকান্ডে মুখ খুলতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘ডাকসু বা ছাত্রলীগ নিয়ে আমাদের মন্তব্য করতে ভয় হয়। বিশ্ববদ্যালয়ে বাবা মা পড়াশোনার জন্য পাঠিয়েছে। কোন রকম পড়াশোনা শেষ করে বাসা ফিরলেই হয়।’

এদিকে হল সংসদগুলো অনেক কাজ করেছেন। বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ হল সংসদের কর্মকান্ড নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। হল সংসদের বাজেট কম হওয়ায় বিভিন্ন কার্যক্রমের খরচ হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান নেতৃবৃন্দ। শিক্ষার্থীরা হল সংসদের কাজে সন্তুষ্ঠ। এ এফ রহমান হলের সালমান ফায়াজ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হল সংসদগুলো অনেক ভাল কাজ করছে। হলের খাবারের মান, হলের পরিবেশ অনেক সুন্দর হয়েছে। হলের ভিপি আব্দুল আলিম, জিএস রাহিম সরকার ভাই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ডাকসুর তেমন কাজ চোখেঁ পড়েনি।’ তবে, কয়েকটি হল সংসদের ভিপি-জিএসের বিরুদ্ধে হলের ক্যান্টিনে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।

এজিএস সাদ্দাম হোসাইন 

এদিকে ডাকসু শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বিষয়টি মানতে নারাজ এজিএস সাদ্দাম । তিনি বলেন, ‘ডাকসুর সর্বোচ্চ সফলতা গণতান্ত্রিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিত করা ডাকসু তা করতে পেরেছে। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। ডাকসুর গঠনতন্ত্রে ধর্ম নিরপেক্ষতার রাজনীতি নিশ্চিত করে বিধানের সংযুক্তির মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের চলার পথে ভুল রয়েছে, ভ্রান্তি রয়েছে, কিন্তু আমরা আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্বে অবিচল থাকার চেষ্টা করেছি।’

জিএস গোলাম রব্বানী বলেন, ‘সাত দিনের খাবার একদিনে খাওয়া যায়না। দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু বন্ধ ছিলো। ২৮ বছরের সমস্যা এক বছরে সমাধান করা সম্ভব নয়। আমরা রাস্তা খুলে দিয়েছি। আমরা বলবো আমরা সফল। এই এক বছরে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিযে অনেক কাজ করেছি। ডাকসু সচল রয়েছে, কাজ হচ্ছে। যে দেড় মাস বাকী আছে সেগুলোর মধ্যে বাকী সমস্যাগুলো সমাধান করবো।’

ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা অনেক কাজ করার চেষ্টা করেছি। তবে মোটা দাগে শিক্ষার্থীদের যে মৌলিক চাহিদা রয়েছে, সেটা নিয়ে এখন পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারিনি।  তবে হলে বর্তমানে যে অনিয়ম বিশৃঙ্খলাগুলো আছে এর জন্য অনেকাংশে দায়ী ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। মেধারভিত্তিতে সিট নিশ্চিত করা, গেস্টরুম-গণরুম বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের জন্যে। কারণ বহিরাগত-অছাত্ররা থাকে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায়। গণরুম-গেস্টরুম চালায় ছাত্রলীগ। আমরা এর বাধা দিতে গেলে উল্টো আমাদের উপর হামলা করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘হল থেকে বহিরাগত ও অছাত্রদের বের করার জন্যে আমরা একটি পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে ছাত্রলীগ আমাদের অসহযোগিতা করেছে এবং আমাদের হামলা করেছে। হলে যেহেতু ছাত্রলীগ আধিপত্য বিস্তার করেছে তারা যদি চায় এগুলো দূর করতে পারে। এই বিষয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষাদের এগিয়ে আসতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ডাকসুতে অনেক কাজ হয়েছে। ডাকসুতে কারো একার কাজ নেই। সম্মিলিত কাজেই ডাকসুর সাফল্য।’


সর্বশেষ সংবাদ