রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ, অনশনে দুই শিক্ষার্থী

আমরণ অনশনে বসেছেন দুই শিক্ষার্থী
আমরণ অনশনে বসেছেন দুই শিক্ষার্থী  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ এনে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন- ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদেক রহমান ও দর্শন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফুয়াদ রাতুল।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলের দিকে তারা অনশন শুরু করেন, যা প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চলমান রয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাকসুর সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কাছে তিন দফা দাবি পেশ করেন।

অনশনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন—তদন্ত শেষে রিপোর্ট পেশ করে নিয়োগ দিতে। কিন্তু এর পরিবর্তে প্রশাসন সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। অনশন শুরুর পর ২৪ ঘণ্টা পার হলেও প্রশাসন থেকে কোনো আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া পাননি তারা।

এ বিষয়ে অনশনরত শিক্ষার্থী সাদেক রহমান বলেন, ‘২২ ঘণ্টা ধরে কোনো পানি বা খাবার না খেয়ে এই তীব্র রোদে অবস্থান করছি। কেন আমরা এখানে বসে আছি? কারণ বারবার প্রশাসন ও নিজ বিভাগের কাছে গিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। আমাদের একটাই দাবি—শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত রিপোর্ট আমরা দেখতে চাই। আমরা রাকসুতে জানিয়েছি, উপ-উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছি, উপাচার্যকেও জানিয়েছি। তিনি বলেছেন ‘আস্থা রাখুন’, কিন্তু আমরা কীভাবে আস্থা রাখব? আস্থা রাখলে আজ আমরণ অনশনে বসতাম না। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—জুলাইয়ের পর কোনো দুর্নীতিপূর্ণ নিয়োগ হতে পারবে না; যদি হয়, তা হবে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে। 

তিনি আরো বলেন, আজ সালাহউদ্দিন আম্মার একা এসে আমাদের প্রক্টরের সাথে জুস খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। কিন্তু এটা ব্যক্তিগতভাবে নয়, রাকসুর অফিসিয়াল প্রতিনিধিত্ব নিয়েই আসা উচিত ছিল—ভিপি, জিএস, এজিএস—যাদের আমরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি, তাদেরই এই সংকটমুহূর্তে সবার আগে পাশে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারা কেউ আসেননি। সবশেষে প্রশাসনকে বলতে চাই—যদি এভাবে নিয়োগ সিন্ডিকেটের প্রভাব চলতে থাকে, তাহলে আপনাদেরই শিক্ষার্থীদের লাশ পড়ে থাকবে এখানে। আমরা শুধু চাই, স্বচ্ছ তদন্ত হোক এবং দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হোক।

অনশরনত আরেক শিক্ষার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, ’প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে আমরা অনশনে বসে আছি এখনো পর্যন্ত প্রশাসন আমাদের আশানুরূপ কিছু জানায়নি। ভিসি স্যার একবার এসেছিলেন, তিনি বলে গেলেন যে তাদের উপর আস্থা রাখতে। কিন্তু কোনো প্রক্রিয়ার কথা জানাননি, এবং বিতর্কগুলো সামনে নিয়ে যে নিয়োগগুলো হচ্ছে এবং সিন্ডিকেট মিটিং এ চূড়ান্ত হতে চলেছে এ বিষয়ে নাকি আমাদের কথা বলার এক্তিয়ার নেই। সে জায়গা থেকে আমি বলবো, বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক লেনদেন এর মাধ্যমে, দলীয়করণ এর মাধ্যমে যে নিয়োগগুলো হচ্ছে এর ভুক্তভোগী শুধু নাট্যকলা বিভাগ না, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের৷ 

তিনি আরো বলেন, আমরা জানি যে, আগে ভাইবার মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হত এখন লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের যে অভিযোগ গুলো আছে সেগুলো তদন্ত করা হোক এবং জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত না এর কোনো সমাধান না হবে আমরা আমরণ অনশন চালিয়ে যাবো৷ 

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে। রোববার বিকেল ৪টার দিকে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়৷ ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর এম. আসাদুল হককে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠিত হয়েছে।

প্রকাশিত অডিও ও সংবাদসহ সব অভিযোগের বিষয়ে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন ও সুপারিশ দেওয়ার জন্য কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।


সর্বশেষ সংবাদ