সর্ব মিত্র, তোমাদের প্রজন্মের কাছে পরাজয় মেনে নিলাম ভবিষ্যতে জয়ী হবার প্রত্যাশায়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৬ PM
সর্ব মিত্র, তোমাদের প্রজন্মের কাছে পরাজয় মেনে নিলাম ভবিষ্যতে জয়ী হবার প্রত্যাশায় বলে মন্তব্য করেছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষক ড. আমিনুল ইসলাম। আজ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নিজ ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ কথা বলেন তিনি।
ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সর্ব মিত্র চাকমা ছেলেটা শিবির প্যানেল থেকে বিজয়ী হয়েছে। গতকাল আমি ওর ইন্টার্ভিউ দেখছিলাম। জুমা মেয়েটাও শিবিরের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছে। ওর ইন্টার্ভিউটাও শুনেছি। এই প্রজন্মের মানসিকতা বুঝার চেষ্টা করছিলাম। কিছু বিষয়ে খুব অবাক হয়েছি। সর্ব মিত্র ছেলেটা সমাজ বিজ্ঞানে পড়াশুনা করছে। আমি সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক। ছাত্র হিসাবে আমরা যখন সমাজ বিজ্ঞান পড়ি, মার্ক্স পড়তে পড়তে আমরা বড় হই এবং আমাদের মাঝে একটা বিশাল সংখ্যার শিক্ষার্থী সাম্যবাদে বিশ্বাসী।
খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, সর্ব মিত্র বলেছে-আমি বামদের পছন্দ করি না। তাই এপ্রোচ করলেও আমি যাইনি ওদের প্যানেলে। কারন ওরা শ্রমিক শ্রেণীর কথা বলা। ওদের কাজে-কর্মে কোনো মিল নেই। জনগণের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাছাড়া বামেরা অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে পড়ে আছে। বর্তমান ওদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই কথা বলতে গিয়ে সে বলেছে - মার্ক্সও অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বলেছেন। অর্থাৎ আমি ধরে নিচ্ছি সে মার্ক্সের ‘ঐতিহাসিক বস্তুবাদ’ তত্ত্বের কথা বলছে কিংবা হয়তো কনফ্লিক্ট তত্ত্বের কথা বুঝিয়েছে।
কোনো তাত্ত্বিক আলোচনায় যাব না। কারন এলিট শ্রেণীর জন্য আমি লিখি না। আমার লেখা সাধারণ মানুষের জন্য। এরপর সর্ব মিত্রকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে- আপনি তো বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের। আপনার সাথে শিবিরের অবস্থান তো ঠিক যায় না। সে কী বলছে জানেন? যায় না ঠিক আছে। আমি শিবির করিও না। আমি ওদের সম্পর্কে অনেক খারাপ কিছু শুনেছি। তাই ভেতরে থেকে দেখতে চাই, আসলেই এরা কেমন। যেটা সে বলেছে, সেটা হচ্ছে -‘আমি এক্সপ্লোর করতে চাই।’ ওদের সাথে প্রাথমিকভাবে কথা বলে আমার ভালো লেগেছে। এবার দেখি- সত্যি সত্যিই এরা ভালো কিনা। অর্থাৎ সে নতুন কিছু এক্সপ্লোর করে দেখতে চাইছে। ভালো লাগলে থাকবে। নইলে অন্য কিছু দেখবে।
আপনি খেয়াল করে দেখবেন জুমা মেয়েটা; মানে যে মেয়েটা শিবিরের অন্য মেয়েগুলোর মত হিজাব পরে না। যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক হয়েছে। সে গতকাল একটা টেলিভিশনে বলেছে - ‘আমি ভবিষ্যতে হয়ত বিএনপির রাজনীতি করতে পারি কিংবা অন্য কোন সমমনা দল।’ অর্থাৎ এই মেয়েও শিবির করে না। কিন্তু শিবির প্যানেল থেকে দাঁড়িয়েছে এবং জয়ী হয়েছে। আপনি যদি এই ছেলে-মেয়ে দুটোকে কেইস স্টাডি হিসেবে নেন। তাহলে কিন্তু পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে- ওদের কাছে কোন কিছুই কন্সটেন্ট না। অর্থাৎ আপনি আজকে একটা আদর্শ ধারণ করছেন। যদি দেখেন সেটা খারাপ কিংবা আপনার সাথে যাচ্ছে না। ভালো না লাগলে চলে যাবেন টাইপ এবং এরা স্রেফ বর্তমানকেই প্রাধান্য দিচ্ছে।
যে সর্ব মিত্রদের মত মানুষদের জন্য আমাদের মত সাম্যবাদীরা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম। যে জুমাদের অধিকারের জন্য আমরা এই বুড়ো বয়সে এসেও লড়াই করে যাচ্ছি। নির্লজ্জের মত মানুষের অধিকারের কথা বলে যাচ্ছি। গতকাল ওদের ইন্টার্ভিউ দেখে স্রেফ আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করেছি- আমাদের প্রজন্ম কি আদৌ ওদের সঠিক বার্তা দিতে পেরেছে? উত্তরটা আমার জানা। বুর্জোয়া দলগুলো যুগের পর যুগ এদেরকে ব্যবহার করেছে। কিন্তু দিন শেষে কেউ এদের অধিকার সঠিক ভাবে দিতে পারেনি। আগের প্রজন্ম পৃথিবী দেখতে পেতো না। তাই ওদেরকে ভুলিয়ে রাখা যেত। কিন্তু এই প্রজন্ম জন্মের পর থেকেই হাতে স্মার্ট ফোন এবং ইন্টারনেট পেয়েছে। ওরা দেখেছে- বুর্জোয়া দলগুলোর কথা-কাজে কোন মিল নেই। পৃথিবী কোথায় চলে গেছে। অথচ এই দলগুলো এখনো চলছে দাসত্বের রাজনীতিতে।
সর্ব মিত্র চাকমা সব শেষে যেটা বলেছে- আমার সাথে সাদিক ভাই এবং শিবিরের ছয় ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে। সেখানে পরিষ্কার করে বলেছি - ‘আমি কোন রকম দলীয় প্রভাব ছাড়া কাজ করতে পারবো তো? সমালোচনা করতে পারবো তো? এর নিশ্চয়তা পেয়েই আমি এই প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছি।’ একটা বার শুধু চিন্তা করেন, বুর্জোয়া দলগুলোতে যদি কেউ নিজ দলের সমালোচনা করে। তাহলে তাঁর পরিণতি কী হবে?
সর্ব মিত্র, আমাদের মত মানুষগুলো কোনোদিন কোনো দলের দাস হয়নি। তাই হয়ত তুমি জানো না- আমরাও ছিলাম। যারা আজীবন শ্রেণী বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছে। তোমাদের অধিকারের জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেও পিছপা হয়নি। যেহেতু আমরা কোনো দল করি না; তাই কেউ আমাদের চেনে না। আর তাই তোমরাও জানতে পারোনি- আমারা শুধু তোমাদের অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ নয়; বর্তমান নিয়েও ভেবেছি। তবুও তোমাদের প্রজন্মের কাছে এই পরাজয় মেনে নিলাম- ভবিষ্যতে জয়ী হবার প্রত্যাশায়।