‘আজও ৫ আগস্টের আগের ও পরের মতোই সংকটকাল অতিক্রম করছি’

ঢাবির সিনেট সদস্য ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
ঢাবির সিনেট সদস্য ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন  © টিডিসি সম্পাদিত

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশ এক ধরনের দশা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট সদস্য ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, ‘আমরা আজও ৫ আগস্টের আগের ও পরের মতোই সেই সংকটকাল অতিক্রম করছি। অথচ আমি লক্ষ করছি, অনেকেই এ ক্রিটিক্যাল মুহূর্তটির গুরুত্ব মাথায় না রেখে বাংলাদেশকে বিচার করছে, নানা মন্তব্য করছে, নানা আচরণ করছে। অথচ বাস্তবতা হলো—আমরা এখন স্বাভাবিক সময়ে নেই।’

আজ শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এসব কথা বলেছেন অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। তিনি বলেন, ‘দশা পরিবর্তন পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও এলিগেন্ট গবেষণার বিষয়। নরমাল কন্ডাকটর থেকে সুপারকন্ডাকটরে রূপান্তর, পানি থেকে বরফ বা বাষ্পে রূপান্তর—এমন অসংখ্য উদাহরণ আমরা দিতে পারি। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দশা পরিবর্তন ঠিক যখন ঘটে, সেই সংকট মুহূর্তে বা ক্রিটিক্যাল পয়েন্টের আশেপাশে সিস্টেমের আচরণ হয়ে ওঠে অত্যন্ত নাজুক ও অস্থিতিশীল।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদপত্রে কিছু ছবি প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবি ও ঘটনার বিবরণ দেখে মানুষের মনে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, গভীর ক্ষোভ জেগেছে। মানুষ যাতে নির্ভয়ে কথা বলতে পারে, প্রতিবাদ করতে পারে—শুধু এই অধিকারের জন্যই আমি আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত কোনো লাভের আশায় নয়, কোনো হিসাব-নিকাশ ছাড়াই। একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল—একটি সুন্দর, স্বাভাবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠুক, যেখানে মানুষ নির্ভয়ে কথা বলতে পারবে; যেখানে থাকবে না ট্যাগিং, বুলিং, গুম, খুন কিংবা রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন।’

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘আমরা দেখতে পেলাম, দেশের সম্মানিত কিছু রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ও পেশাজীবী একটি ব্যানারের অধীনে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলেন। সেখানে কেন মব ঢুকতে দেওয়া হলো? কেন সেই সম্মানিত মানুষদের এভাবে হেনস্থা করা হলো? সরকার যদি অনুষ্ঠানটি বন্ধ করতেই চাইত, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে তা করতে পারতো। কিন্তু কেন মবকে ঢুকতে দেওয়া হলো? কেন মুক্তিযোদ্ধাদের উপর এই ধরনের অপমানজনক আচরণ ঠেকানো হলো না?’

কেন যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে সম্মানিত মানুষদের গায়ে যারা হাত দিল, তাদের বিচারের আওতায় আনা হলো না, এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘এরকম অবস্থা চলতে দিলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিন্তু খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাবে। অবস্থাদৃষ্টে মানুষের মনে হতে পারে যেন সরকারই মব পাঠিয়েছে, এরপর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পাঠিয়ে যারা মার খেল তাদেরকেই গ্রেফতার করল আর যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিল তাদের কিছু হলো না।’

আরও পড়ুন: লতিফ সিদ্দিকী ও ঢাবি অধ্যাপক কার্জনসহ ডিবি হেফাজতে ১৫ জন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেণ, ‘আবার মনে এই প্রশ্নও জাগে কেন এই সংকটকালে হঠাৎ করে এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হলো? আয়োজক বা বক্তা হিসাবে ড. কামাল হোসেনের নাম দেওয়া হলো, অথচ পত্রিকায় পড়লাম তিনি নিজে বলছেন, মঞ্চ ৭১-এর অনুষ্ঠানে অনুমতি ছাড়া তার নাম ব্যবহার করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে তিনি একটি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছেন। এর মানে হলো, এই কঠিন ও ক্রিটিক্যাল সময়ে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। আর মিথ্যার এই আশ্রয় ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে। যারা এই অনুষ্ঠানের ডাক দিয়েছেন, তারা হয়তো চেয়েছেন এমন একটি বিশ্রঙ্খলা হোক। যা ঘটেছে তার কোনোটিই কাম্য ছিল না।’   

‘এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল। অথচ আশানুরূপ বা কাংখিত সেই বাংলাদেশের ন্যূনতম ইঙ্গিতইও দেখছি না। সংবাদে পড়লাম আমাদের নদীগুলো এখন হত্যা ও খুনের মাধ্যমে মৃত লাশের ডাম্পিং প্লেস হয়ে উঠেছে। বেকার সমস্যা আরও বেড়েছে। নানারকম শংকা দানা বাঁধছে। মনে হচ্ছে দেশ উন্নততর পরিবেশের দিকে না গিয়ে আরও খারাপ পরিবেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ৫-ই আগস্টের পর মানুষের মাঝে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, দেশ কেন সেই দিকে ধাবিত না হয়ে উল্টো দিকে যাচ্ছে’, যোগ করেন তিনি। 

কেন মুক্তিযুদ্ধকে বার বার প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, প্রশ্ন করে অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, কেন মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত হতে দেখতে হচ্ছে? বাংলাদেশ নামক দেশটির জন্মের ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধ। এটিকে ছোট করে দেশকে সামনে নেওয়া যাবে না। এখনকার সংকটময় সময়ে একটি চক্র বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল প্রেরণা ও raison d'être-কেই কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার এই প্রয়াস আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের জন্যই মারাত্মক হুমকি।


সর্বশেষ সংবাদ