জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

স্ট্যাটাস দিয়ে রাজনীতি থেকে বিদায়ের ঘোষণা ছাত্রদলের ‘অব্যাহতিপ্রাপ্ত’ নেতার

জাবি ছাত্রদল নেতা নিশাত
জাবি ছাত্রদল নেতা নিশাত  © টিডিসি সম্পাদিত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের ‘অব্যাহতিপ্রাপ্ত’ এক নেতা  রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (৯ জুন) রাত দেড়টার দিকে এই ঘোষণা দেন তিনি। ওই নেতার নাম নিশাত আব্দুল্লাহ। তিনি জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। গত ১৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছিল।

অব্যাহতি পওয়ার প্রায় সাড়ে ৪ মাস পর ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে এই ছাত্রদল নেতা লেখেন, ‘আমি নিশাত আব্দুল্লাহ, আজ ০৯.০৬.২০২৫ তারিখে ছাত্ররাজনীতি থেকে সম্পূর্ণভাবে বিদায় নিচ্ছি। এখন থেকে ছাত্রদল বা বিএনপির কোনো ইতিবাচক বা নেতিবাচক কার্যকলাপে আমার কোনো ভূমিকা বা দায় থাকবে না।’

জানা গেছে, নিশাত আব্দুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম ব্যাচের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। হঠাৎ তার ছাত্ররাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাকে ভালোভাবে নেয়নি তার সহপাঠী ও তার সাথে রাজনীতি করা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী ফেসবুক পোস্ট ও তার পোস্টের কমেন্ট বক্সে নিশাতের মতো ছাত্রনেতাদের রাজনীতি থেকে দাঁড়ানোকে ছাত্রদলের ব্যর্থতা ও দুঃসময়ের ছাত্রনেতাদের অবমূল্যায়নের কথা বলেন।

রাজু হাসান রাজন নামে এক ছাত্রদল নেতা তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, আমার পাশে সব সময় যে ছেলেটা থাকতো সে আমার বিভাগ আর হলের বন্ধু আমার শক্তি নিশাত। রাজপথে ৫ আগস্টের আগে যে কয়জন মানুষ ছিল নিষাত তাদের মাঝে একজন। আমার বন্ধু আমার শক্তি ছিল আমার বন্ধু এইভাবে রাজনীতি থেকে চলে যেতে পারে না।

আরও পড়ুন: জাবি ছাত্রদলের তিন নেতাকে অব্যাহতি

তিনি আরও লেখেন, যারা নোংরা রাজনীতি করে ছেলেটাকে বহিষ্কার করে ছিলেন তারা মনে রাখবেন সব কিছু আল্লাহ হিসাব রাখে। সত্যি ৫ আগস্টের আগে আমরা যারা রাজপথে ছিলাম তারা আজকে একদম অসহায়। কিছু কাপুরুষের জন্য সবচেয়ে পরিশ্রম করা ছেলেটা রাজনীতি থেকে বিদায় নিচ্ছে। আমাদের কষ্ট বলার জায়গা নাই এখন কারণ যাদের জন্য জীবন দিতে চাইলাম তারা এখন নতুনত্ব খোঁজে পেয়েছে। প্রিয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল মনে রাখবেন এসবের হিসাব একদিন ঠিক পাবেন। ভালোবাসি বন্ধু।

মোহাম্মদ শোয়াইব হাসান নামে এক শিক্ষার্থী কমেন্ট বক্সে লেখেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সেই ঘনঘোর ফ্যাসিবাদের আমলে ৭-৮ জনের মিছিল নিয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করে গেলেন। যেই সময় জাহাঙ্গীরনগরের কালেক্টিভ কনশাসে ছাত্রদল বলে কিছু বিদ্যমান করতো না, সেই সময় এই সংগঠনকে আঁকড়ে ছিলেন তিনি। আজকে ফ্যাসিবাদের পতনের পর আপনার এই অসময়ের প্রস্থান! আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুক নিশাত ভাই।

সুসমিতা বিনতে নামে আরেক শিক্ষার্থী কমেন্টে লেখেন, ভাই আবার ভেবে সিদ্ধান্ত নেন, এত ত্যাগ করলেন এতদিন! যদি অন্য রাজনৈতিক দল করার চিন্তা করেন সেটা আলাদা বিষয়, তবে দলের যে ইমেজ এখন আপনার মত মানুষ থাকা প্রয়োজন। শুভ কামনা আপনার জন্য।

ছাত্রদলের এক কর্মী আকাশ আহমেদ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, স্বৈরাচার আমলে অনেকেই গর্তে ছিলেন, নিশাত আবদুল্লাহ ভাইয়ের মতো বিপ্লবীরা সামনের সারিতে ছিল।

এ বিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, তিনি তো দল থেকে বহিষ্কৃত। তাই এ বিষয়ে আমরা কোনো কিছু ভাবছি না।

জানা গেছে, গত ৮ জানুয়ারি ছাত্রদল জাবি শাখার নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ১৭৭ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে জহির উদ্দিন বাবরকে আহ্বায়ক এবং ওয়াসিম আহমেদ অনীককে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটি ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির এক জরুরি সভায় পদবঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে হট্টগোল ও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হলে সভাটি স্থগিত ঘোষণা করে দেয়। এরপর সদ্য আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নিশাত আব্দুল্লাহ, শামসুজ্জামান সায়েম এবং হাসিব বিন আব্দুল হাইকে শাখা ছাত্রদল থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় সংসদ।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!