আজ ঢাবি ছাত্র আবু বকরের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী, কী ঘটেছিল সেদিন

আবু বকর ছিদ্দিক
আবু বকর ছিদ্দিক  © সংগৃহীত

আজ ঢাবি ছাত্র আবু বকর ছিদ্দিকের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হন আবু বকর। পরে হাসাপাতালে একদিন পর মারা যান তিনি। এই ঘটনায় মামলা হলেও পরে আদালত থেকে সব আসামি খালাস পান। এই রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন আবু বকরের পরিবার। এদিকে হাইকোর্টের দেওয়া সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পরও এখনো অজানা, আসলে কী ঘটেছিল সেদিন আবু বকরের সঙ্গে। অনেকের প্রশ্ন, আবু বকর কি পুলিশের টিয়ারশেল বা ‍গুলিতে মারা গিয়েছিলেন নাকি ছাত্রলীগের। প্রত্যক্ষদর্শী ওই হলের এক শিক্ষার্থী সেই সময়ের ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্যার এ এফ রহমান হলের প্রত্যক্ষদর্শী ওই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, মূলত গ্রুপিং রাজনীতি থেকেই ওইদিনের ঘটনার সূত্রপাত। সেই সময়ের হলের প্রথা অনুযায়ী ওই রাতে হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। রাত ১ টার দিকে পুলিশ হলে প্রবেশ করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ থেমে যায়। সংঘর্ষ থামার পর এক পর্যায়ে শুধু রাজনৈতিক নয় বরং অনেক সাধারণ রুমে প্রবেশ করে পুলিশ বেপরোয়াভাবে লাঠি চার্জ করেছিল। পরে পুলিশ ৫ তলার ৫০৩ নম্বর রুমে ঢুকে ৪ তলার ৪০৪ নম্বর রুমের বেলকনির দিকে টিয়ারশেল বা গুলি ছোড়ে। যার একটি আঘাত লাগে বেলকনিতে অবস্থানরত আবু বকরের মাথায়। ওই গুলির আঘাতেই একদিন পর হাসপাতালে আহত অবস্থায় বকরের মৃত্যু হয় বলে তিনি মনে করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এমনকি পুলিশের চার্জ সহ্য করতে না পেরে ৫০৩ নম্বর রুম থেকে লাফ দিয়ে সেদিন দুইজন সাধারণ ছাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আমিও পাশের রুমে অবস্থান করছিলাম। 

আবু বকর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে স্যার এ এফ রহমান হলে সিট দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আহত হয়ে এক দিন পর মারা যান। ওই সংঘর্ষে ৩০ ছাত্র আহত হন। আইন বিভাগের আহত ছাত্র ওমর ফারুক বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন।

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রামের দিনমজুর রুস্তম আলী ও রাবেয়া খাতুনের সন্তান আবু বকর। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারে প্রথম স্থান লাভকারী ছাত্র। 

তাঁর মৃত্যুতে সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। আবু বকর তৃতীয় সেমিস্টার পর্যন্ত সিজিপিএ-৪-এর মধ্যে ৩.৭৫ পেয়েছিলেন। চতুর্থ সেমিস্টারের ফল বের হওয়ার আগে তিনি খুন হন। 

জানা গেছে, ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ১০ ছাত্রকে নামমাত্র সাময়িক বহিষ্কার করেই দায় সারে। আবু বকর ছিদ্দিক হত্যা মামলায় ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শাহবাগ থানার দেওয়া অভিযোগপত্রে আটজনকে আসামি করা হয়েছিল। পরে আদালত সব আসামিকে খালাস দেন।

এদিকে হাইকোর্টের দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ইতোমধ্যে অ্যাডভোকেট শিশির মনিরকে আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দীন এ তথ্য জানিয়েছেন।

মুনসী শামস উদ্দীন জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে আপিল করেছে। সেটি আপিল বিভাগে প্রক্রিয়াধীন আছে। এখনো শুনানির পর্যায়ে যায়নি। তবে প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়েছে। 

আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘১ জানুয়ারি আমার কাছে ফাইল পাঠিয়েছেন তারা। আমি সেটি দেখব। বিস্তারিত দেখে তারপর অগ্রসর হব।’

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ কাজী মাহফুজুল হক সুপন বলেন, ‘আমার ছাত্ররা আমাকে একটা স্মারকলিপি দিয়েছে। আমরা আজ সন্ধ্যায় আলোচনা সভা করব। আমরাও আবু বকর হত্যার ন্যায়বিচার চাই।’


সর্বশেষ সংবাদ