চবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ফলাফলে হস্তক্ষেপের অভিযোগ
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৫ PM , আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৫ PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধা ও বিভাগের সভাপতি মাহ-এ-নূর কুদসী ইসলামকে জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিভাগটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মাহ-এ-নূর কুদসী ইসলাম।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৮ আগস্ট ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ২১ সালের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এই পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক যাকীয়াহ্ তাসনীম (অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী)। প্রকাশিত ফলাফলে ৩৫ শতাংশের বেশী শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় তারা ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে আন্দোলন করেন। এ দাবির প্রেক্ষিতে তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে ইংরেজি বিভাগের কার্যালয়ে ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করতে বলা হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে উপাচার্যের নিকট প্রেরণ করা হবে এবং উপাচার্যের অনুমতি সাপেক্ষে পুনর্মূল্যায়ন কমিটি কার্যক্রম শুরু করবে বলে শিক্ষার্থীদেরকে জানানো হয়।
চিঠিতে কুদসী ইসলাম আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থীদের আবেদনের ফর্ম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা দিতে গেলে সেখানে যাকীয়াহ্ তাসনীম ও তার স্বামী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন উপস্থিত হন এবং আমাকে দেখা মাত্রই তিনি অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে মারমুখী হয়ে আমাকে বলতে থাকেন গত ১ সেপ্টেম্বর ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের সভাটি উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে অন্য কারো প্ররোচনায় একটি ষড়যন্ত্র মূলক নাটক করেছি। এজন্য আমাকে উনি ছেড়ে দিবেন না, দেখে ছাড়বেন এমন কি আমাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বেন।
তিনি আরও বলেন, উনাদের উভয়কে আমি অত্যন্ত নম্রতা ও বিনয়ীর সাথে বুঝাবার চেষ্টা করেছি যে, এমন কোন সিদ্ধান্ত সভায় বিভাগের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নাই যাতে যাকীয়াহ্ তাসনীম কর্তৃক প্রকাশিত ফলাফল অশুদ্ধ বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। শুধু শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে খাতা পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু উভয়েই কোন কথা শুনতে নারাজ।
এ বিষয়ে পরিচয় গোপন রেখে বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের বিভাগের ফলাফল এবং সেশনজট নিয়ে অবগত আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এই বিভাগ ভালো কিছু করছে বলে প্রচার করা হলেও সত্যিকার অর্থে এটি একটি স্ক্যাম। গত মাসের ২৮ জুলাই বিভাগের মাস্টার্সের ফলাফল প্রকাশিত হয়। সবকিছু বন্ধ করে দেশে যখন গণহত্যা চলছিল, ঠিক সে সময়ে এই ফলাফল প্রকাশ করে সকল প্রকার সমালোচনা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শ্রদ্ধেয় যাকীয়াহ তাসনীম। সেই ফলাফলে সর্বমোট ৪১ জন শিক্ষার্থীকে ফেল করানো হয়, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অনার্স-মাস্টার্স ৫ বছরে শেষ করার কথা থাকলেও ৮ বছর পর যখন অনার্সে ফার্স্টক্লাস পাওয়া একজন শিক্ষার্থী মাস্টার্স পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়, তখন একজন শিক্ষার্থীর জন্য এর চেয়ে হতাশাজনক আর কিছু হতে পারে না।
আরও পড়ুনঃ চবির হলে সিট পেতে ‘ডোপ টেস্ট’ বাধ্যতামূলক
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন ২০১৭ সালে বিভাগে ভর্তি হই, তখন স্যারদের কাছে অনুরোধ করি যাতে তাঁরা আমাদের চার বছরের কোর্স চার বছরে শেষ করেন। কিন্তু বিষয়টি বিভাগের কিছু শিক্ষক ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যাকীয়াহ তাসনীম। তিনি আমাদের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং সাত মাস পর যখন ফলাফল প্রকাশিত হলো, তখন ক্লাসের ৩৫ জন ফেল করল। উল্লেখ্য, অনেক বিভাগের একটি সেমিস্টার শেষ হয় ছয় মাসে। এরপর সাত বছর পেরিয়ে অনার্স কোনোমতে শেষ হলো আমাদের। তারপর উনারা হঠাৎ করেই আমাদের মাস্টার্স নেয়ার জন্য তাড়া দিতে শুরু করলেন। এই বছর ফেব্রুয়ারিতে আমাদের পরীক্ষায় বসানোর জন্য প্রচণ্ড চাপ দেয়া শুরু হয়, যদিও আমাদের অনার্স ফলাফল হয়েছিল ৩০ নভেম্বর। আমরা তাঁদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাদের পরীক্ষা ১-২ মাস পিছিয়ে দেয়ার জন্য কারণ তখন ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ছিল মার্চে। কিন্তু এই বিষয়টি শ্রদ্ধেয় যাকীয়াহ ম্যাম ভালোভাবে নেননি। তিনি আমাদের বলেছিলেন, “পরীক্ষা যখন পিছিয়েছ, তোমাদের আমরা দেখে নিব। কেমন করে পাস করো, দেখব। কীভাবে উত্তর করো, দেখব।” তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। তিনি ৪১ জন শিক্ষার্থীকে ফেল করিয়েছেন।
তিনি চেয়ারম্যান হলেই কেন পরীক্ষার ফলাফলে ধস নামে? অনার্সে যে-সব শিক্ষার্থীর সিজিপিএ ৩ তারা মাস্টার্স পরীক্ষায় কীভাবে ফেল করে? আর যারা পাস করেছে তাদের বেশিরভাগই ২.৩, ২.৪, ২.৫ পেয়েছে। এই রেজাল্ট নিয়ে একজন শিক্ষার্থী কী করবে! যেখানে আমাদের শিক্ষকরাই বলেন, আমাদের বিভাগের উচ্চমান সহকারী পোস্টে আবেদন করেছিল ৩.৫ । এই প্রহসনের রেজাল্ট আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম। আমরা বিচার চাই। আমরা ন্যায়বিচার চাই। আগের পরীক্ষা কমিটি বাদ দিয়ে নতুন পরীক্ষা কমিটির মাধ্যমে খাতা পুনর্বিবেচনার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে সভাপতি অধ্যাপক মাহ্-এ-নুর কুদসী ইসলাম বলেন, আমি এ বিষয়ে উপাচার্যের নিকট অভিযোগ দিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা নিবেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি আমার নামে কেন অভিযোগ করেছেন আমি বুঝতেছি না। তাঁর সাথে আমাদের খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে, পারিবারিক সম্পর্কের মত৷ আমি এ বিষয়ে তাঁর সাথে কথা বলবো।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ আগস্ট ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স ২১ সালের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে ৩৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়৷ শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, 'পূর্বে বিভাগের নানান অনিয়মের প্রতিবাদ করার কারণে আমরা এই আক্রোশের শিকার হয়েছি'। পরে শিক্ষার্থীরা ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে আন্দোলন করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৮ ও ২৯ আগস্ট পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ডিনদ্বয়ের সাথে একটি মিটিং হয়। এতে যাকীয়াহ্ তাসনীম অনুপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া গত ১ সেপ্টেম্বর অ্যাকাডেমিক সভাতেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। পরে গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থীদের আবেদনের ফর্ম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা দিতে গেলে সেখানে যাকীয়াহ্ তাসনীম ও তার স্বামী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন উপস্থিত হয়ে ইংরেজির বিভাগের সভাপতি মাহ্-এ-নুর কুদসীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং তাঁকে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন।