মাথায় ক্যাপ, গায়ে টি-শার্ট, ইনফরমাল পোশাকে শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবরে ঢাবি ভিসি, অতঃপর...

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও ঢাবি লোগো
অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও ঢাবি লোগো  © ফাইল ছবি

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন উপাচার্য কোথাও গেলে ফরমাল ভাবে যাবেন; সঙ্গে অন্য শিক্ষক-কর্মকর্তারা থাকবেন...এতদিন এটাই ছিল চিরায়ত দৃশ্য। তবে সেই দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদের হাত ধরে।

কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে যাচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা জানার চেষ্টা করছেন। দিচ্ছেন সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতিও। তেমনই এক দৃশ্য দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে (আইএমএল)। ইনফরমাল টি-শার্ট পড়ে ইনস্টিটিউটটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সহপাঠীদের ক্লাসে আসতে বলার অনুরোাধ জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে থেকেও একজন অধ্যাপকের এমন আচার-আচরণে মুগ্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এত বড় একটি পদে থেকেও একেবারেই সাধারণভাবে শিক্ষার্থীদের খোঁজ নেওয়ায় অভিভূত তারা। 

গতকাল বুধবারের এমন দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছেন ঢাবির জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী তাহমিদা আকবর। নিজের অনুভূতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন এই শিক্ষার্থী। তাহমিদা জানিয়েছেন, ‘আইএমএলে নিচ তলার টেবিলে বসে হোমওয়ার্ক করছিলাম। হঠাৎ একজন বয়স্ক ধরনের মানুষ আসলেন। খুবই ইনফরমাল টি-শার্ট পরিহিত। মাথায় ক্যাপ ছিল। দ্রুত গতিতে হাঁটতে হাঁটতে নিচ তলায় এদিক সেদিক দেখে নিলেন। মনে হবে জগিং করতে বের হয়েছেন। ভাষা ইনস্টিটিউট হওয়ায় সব বয়সের মানুষকেই এখানে দেখা যায়। এই সিনারিও তেমন অস্বাভাবিক না।’

তিনি জানান, ‘‘একটু পরে, তিনি হঠাৎ করে আমাদের টেবিলের সামনে এসে বললেন, (কিছু একটা সম্বোধন করেছিলেন, ঠিক মনে নেই) ‘তোমরা কেমন আছো?’ (আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স সম্পর্কে জানতে চাইবেন) এর মধ্যেই উনি বলে ফেললেন, ‘আমি নিয়াজ আহমেদ, ভাইস চ্যান্সেলর। (সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম) তোমরা বসো, বসো। আমি আসলে জানতে এসেছি তোমরা কোন ব্যাচের। তোমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে তো? ইনস্টিটিউটের ইন্টারনাল অনেক সমস্যা থাকতে পারে, সেগুলো সব আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তোমাদের তো ক্লাস শুরু করতে হবে। তোমরা সবাইকে ক্লাসে আসতে বলবা। ক্লাস শুরু না করলে তো হবে না। তোমাদের গতকাল ক্লাস হয়েছে? এর আগের দিন হয়েছে?’ শেষে বললেন, ‘তোমরা সবাই ভালো থেকো।’’

তাহমিদা জানান, ‘উনি পরিচয় না দেওয়া পর্যন্ত আমরা একজন স্টুডেন্ট ও বুঝতে পারিনি উনি কে। ভাইস চ্যান্সেলর হচ্ছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবকের পদ, গুরু দায়িত্বের পদ। সর্বোচ্চ সম্মানের পদও বটে। প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝেও স্যার এত সাধারণভাবে এসে আমাদের খোঁজ নিলেন, এই দৃশ্যটাকে আমি রিলেট করেছি একজন ন্যায়পরায়ণ, দায়িত্ববান শাসকের সাথে, যিনি ছদ্মবেশে তার জনগণের খোঁজ নেন। এটা যদিও স্বাভাবিক একটা দৃশ্য হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বিগত দিনগুলোতে এই পদের যে অপব্যবহার আমরা দেখেছি, সে হিসেব করলে, এটা অস্বাভাবিকই মনে হয়। আমি অনেক ইমপ্রেসড, আলহামদুলিল্লাহ।’

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার সকালে তাহমিদা আকবর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছেন, কেনো ভিসি স্যারকে চিনিনি? আসলে আমি একা নই, ওইখানের কেউই বুঝতে পারেনি যে উনি ভিসি স্যার। একজন উপাচার্য যে এভাবে আসতে পারেন, এ রকম দৃশ্যের সাথে আমরা অভ্যস্ত নই। তাছাড়া স্যার ক্যাপ পড়া ছিলেন, মুখ অর্ধেক ঢাকাই ছিল। আর স্যার এত দ্রুত গতিতে এসে কথা বলছেন, আইডেন্টিটিফাই করাটাও তো সময়সাপেক্ষ। এখানে না চেনাটা খুব অস্বাভাবিক কিছু আমি মনে করিনা।’ 

তাহমিদার বক্তব্য, ‘ভবিষ্যত নিয়ে আমরা অনেক আশাবাদী। আমরা এমন কিছু আগে দেখিনি। আমাদের উচিত- স্যারের ভালো কাজগুলো সবার কাছে তুলে ধরা। খারাপ কিছু হলে সেটার সমালোচনা যেমন করতে হয়, একটা ভালো কাজ হলে সেটার প্রশংসাও করতে হয়।’


সর্বশেষ সংবাদ