জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের জেরে দুই হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, পরে জানা গেল অভিযোগটিই ‘ভুয়া’
অভিযুক্ত ছাত্রীসহ ৩ জনকে জরিমানা ও সাজা
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ০৬:৪৫ PM , আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ০৭:৫৯ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এক ছাত্রীসহ তিন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার (১৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
শাস্তিপ্রাপ্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের নাবিলা ইসলাম, ইতিহাস বিভাগের কাজী মহিউদ্দিন মিরাজ এবং ইংরেজি বিভাগ মো. আবিদ হাসান রাফি। শাস্তিপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ ব্যাচের (২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে নাবিলা ইসলামকে সতর্ক এবং কাজি মহিউদ্দিন মিরাজ ও মো. আবিদ হাসান রাফিকে ছয় মাসের জন্য স্থগিত বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া সকলকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
জানা যায়, ঘটনার দুদিন আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক ছাত্র মো. মিরাজ তাঁর বন্ধবীকে নিয়ে নতুন কলা ভবনের নিচে ভেন্ডিং মেশিন থেকে খাবার নিতে যায়। এ সময় রফিক-জব্বার হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিরাজের বান্ধবীকে উত্যক্ত করে। পরে ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিরাজ তাঁর বন্ধুদের নিয়ে উত্যক্তকারীদের একজন মো. রাফিকে মারধর করে। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ঘণ্টাব্যাপী ইট, পাটকেল ছুড়াছুঁড়ি হয়। এ সময় রফিক-জব্বার হল থেকে পটকা ফোটানো হয়। এ ঘটনায় দুই হলের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
পরে এ বিষয়ে মিরাজ বলেছিলেন, আমার বান্ধবীকে উত্ত্যক্তকারী রাফিকে শুক্রবার রাতে রবীন্দ্র চত্বরে দেখতে পাই। সেদিনের ঘটনার কারণ জানতে চাইলে রাফি ও তার বন্ধুদের সঙ্গে আমার হলের কয়েকজনের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতিও হয়। পরে দুই হলের সিনিয়ররা এসে বিষয়টি সমাধান করে দেন। কিন্তু হঠাৎ রাত সাড়ে তিনটার দিকে রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা চালান।
এ বিষয়ে রাফি বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে মিরাজ তার বান্ধবীকে উত্ত্যক্তের যে অভিযোগ এনেছে তা মিথ্যা। আমার যেসব বন্ধুরা সেদিন উপস্থিত ছিল সবাই বিষয়টি জানে। আমার সঙ্গে গতকালই মিরাজের পরিচয় হয়। আমাকে সে রবীন্দ্রনাথ হলের দিকে ডেকে নিয়ে যায় এবং অতর্কিতভাবে মারধর শুরু করে। মারধরের একপর্যায়ে আমার হলের বন্ধুরা আসলে তারা আমাকে রক্ষা করে। এরপর আমি অসুস্থবোধ করায় হলে ফিরে যাই এবং ঘুমিয়ে পড়ি। এরপরের ঘটনা আর আমার জানা নেই।
এদিকে, যে ইভটিজিংয়ের জেরে দুই হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সেটি আসলেই ‘ভুয়া’। ওই সময় এরকম কোনো ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটেনি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে। এ কারণে ‘ইভটিজিংয়ের’ মিথ্যা অভিযোগ দেয়ায় ওই ছাত্রীকেও জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার জাবির অফিস আদেশে বলা হয়, গত বছরের ১৪ জুলাই দিবাগত রাতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে সংঘটিত সংঘর্ষকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রক্টরিয়াল বরাবর নারী শিক্ষার্থী ঘটনার দিন বা পরের দিন অভিযোগ না দিয়ে চার দিন পরে মধ্যরাতে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের পরে প্রক্টর বরাবর ইভটিজিং এর অভিযোগ দায়ের করেন। যা তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ঘটনাটিকে অপর দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই হলের শিক্ষার্থীদের রাতভর মারামারি বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলার পরিপন্থি। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের অপরাধ বিবেচনায় বোর্ডের সুপারিশ পর্যালোচনা করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়।