ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
খাবারের পাত্রে হাতধোয়া পানি, সিনিয়র শিক্ষার্থীদের পেটালেন জুনিয়র ছাত্রলীগ নেতা
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩৩ AM , আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:২৭ AM
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। খাবারের দোকানে হাত ধোয়া পানি হাত থেকে তরকারিতে পড়ায় ওই দু্ইজন শিক্ষার্থীকে কিল-ঘুষি মারেন ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি গেটের একটি খাবার দোকানে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত সামাদ আকন্দ নিজেদেরকে ভুক্তভোগী উল্লেখ করে প্রক্টরের কাছে ফোনে অভিযোগ করেন এবং হোয়াটসঅ্যাপে অভিযোগপত্রের কপি জমা দেন।
মারধরের শিকার দুইজন শিক্ষার্থী হলেন- ঢাবির টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী সামাদ আকন্দ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী হিরণ তালুকদার। তারা উভয়েই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী।
ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- মিউজিক বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সাকিবুল সুজন। তিনি বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ এবং উন্নয়ন উপ সম্পাদক। অন্যজন হলেন- স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের মেহেদী হাসান রায়হান। তিনি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের ছাত্র বৃত্তি সম্পাদক।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামাদ আকন্দ বলেন, আমি এবং আমার বন্ধু হিরণ আজ দুপুরের খাবার খেতে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেইটে যাই। এ সময় আমরা বেসিনে হাত ধুয়ে খাবার নেওয়ার সময় এক ফোটা পানি আমার অজান্তেই দোকানে রাখা খাবারের পাত্রে পড়ে। তখন দূরে খেতে থাকা সাকিবুল শান্ত ও মেহেদী হাসান রায়হান এসে আমাকে বাজে ভাষায় তুই-তোকারি করে বকতে শুরু করে। আমরা তাদের সিনিয়র হিসেবে পরিচয় দিলেও তারা আক্রমণাত্মক হয়ে আমাদের গায়ে হাত তোলে। এক পর্যায়ে আমরা যখন বের হয়ে আসতে চাই তখন তারা ৫-৬ জন সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের উপর হামলা করে। এতে আমার মুখে স্পষ্টভাবে জখমের চিহ্ন বর্তমান এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম রয়েছে।
আরও পড়ুন: যোগ দিয়েই যৌন হয়রানির শিকার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী কর্মকর্তা
তিনি আরও বলেন, আমি প্রক্টর স্যারের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানিয়েছি। স্যারের হোয়াটসঅ্যাপে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি। স্যার ব্যস্ত থাকায় সরাসরি দেখা করতে পারিনি। তাছাড়া আমি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ভাইকেও বিস্তারিত জানিয়ে লিখিত অভিযোগ প্রদান করব।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান রায়হান বলেন, ঘটনার সময় আমরা ভাত খাচ্ছিলাম। এ সময় সামাদ ভাই হাত ধুয়ে টিস্যু দিয়ে না মুছে হাত ঝাড়তে থাকলে হাতের পানি তরকারিতে পড়ে। এটা নিয়ে আমার বন্ধু সুজন তাকে ভালোভাবে বললে তিনি আমাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে শুরু করেন। তাকে (সামাদ) বলার আমরা কে, কেন তার উপর কথা বলছি এজন্য আমাদের বকতে থাকেন। একসময় তিনিই প্রথম সুজনের উপর আঘাত করেন। এতে আমাদের কপাল ও হাত ছিলে যায়।
তিনি আরও বলেন, তারাই প্রথম আমাদেরকে হিট করে স্যারের সাথে দেখা করে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমরাও সৈকত ভাইয়ের সাথে কথা বলে প্রক্টর স্যারের সাথে দেখা করব এবং আমাদের অভিযোগ তুলে ধরব।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। সুজনরা ছাত্রলীগের রাজনীতি করছে, বাকি দুজনও ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ছিলেন। তারা প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে হাতাহাতি হোক। তাই, আমরা প্রক্টর স্যারের সাথে অভিযোগের বিষয় নিয়ে কথা বলব, ঐ জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সত্যতা যাচাই করে এর সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগপত্র পেয়েছি। আমরা আগামী রোববার বিষয়টি নিয়ে মিটিংয়ে বসব এবং দুপক্ষের কথা শুনে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।