ঢাবির রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে আলোচনায় ‘ডাইরেক্ট-ইনডাইরেক্ট গ্রুপ’

ঢাবির রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের মূল ফটক
ঢাবির রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের মূল ফটক  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অফিসার্স এসোসিয়েশনের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। একটি হলো ডাইরেক্ট গ্রুপ— যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট এবং সরাসরি নবম গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছিলেন। আর অন্যটি হলো ইনডাইরেক্ট গ্রুপ— যারা বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী, পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে নবম গ্রেড কিংবা তার ঊর্ধ্বে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অফিসার্স নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের গ্রুপ প্রথম প্রকাশ্যে এসেছে। এভাবে বিভাজন তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম পরিবেশ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন হাজার তিনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবন (রেজিস্ট্রার বিল্ডিং) কেন্দ্রীক। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার জন্য রয়েছে ৩টি এসোসিয়েশন (সংগঠন)। এর মধ্যে কর্মকর্তাদের এসোসিয়েশন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন’ এর দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন আগামী ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে কর্মকর্তাদের মধ্যে হঠাৎ ২টি গ্রুপ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি মোট ২১টি পদে ঢাবি অফিসার্স এসোসিয়েশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে মূলত সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নাম দিয়ে পরিষদ গঠন হয়। সর্বশেষ নির্বাচনে ৩টি প্যানেল অংশগ্রহণ করে। প্যানেলগুলো হলো-আকবর-মোতালেব পরিষদ, আমিরুল-কামরুল পরিষদ ও জাফর-রাজ্জাক পরিষদ। 

কিন্তু ২০২৩ সালে নির্বাচনে ‘সম্মিলিত গ্র্যাজুয়েট অফিসার্স কমিউনিটি’ অধীনে নির্বাচনে প্রচারণা চালাচ্ছেন মোতালেব-সরওয়ার পরিষদ। প্যানেলটিতে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন মাস্টার দা সূর্যসেন হলের প্রিন্সিপাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মোতালেব হোসেন এবং সরওয়ার হোসেন; যারা নিজেদেরকে ইনডাইরেক্ট গ্রুপ হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। 

রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে জানা যায়, এবার মোট ভোটার প্রায় ১ হাজার ১৩০ জন। এর মধ্যে ঢাবিসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট এবং সরাসরি নবম গ্রেডে যোগদান করেছেন এমন কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। বাকি ৮০০ জন নিম্নতম গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেয়ে নবম গ্রেড অথবা তার উপরের গ্রেডে এসেছেন।

ভোটার হওয়ার শর্ত হলো- যারা সরকারি বেসিক ২২ হাজার টাকার স্কেলে আছে তারা অফিসার্স এসোশিয়েশনের ভোটার হতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে অনেকে যোগদানের সময়ে অনেক নিচের গ্রেডে যোগদান করলেও প্রমোশন পেয়ে অনেকে এখন ২২ হাজার বেসিক এর বেতন পায়। এরাও অফিসার্স এসোসিয়েশনের ভোটার হতে পারবেন।

জানা গেছে, কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ২০২১ সালের ১২ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ফোরাম প্রতিষ্ঠা হয়। এরাই আসন্ন নির্বাচনে ডাইরেক্ট গ্রুপ হিসেবে পরিচিত। জানতে চাইলে এই ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও উপাচার্য কার্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মঞ্জুর হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঢাবির শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে। সেহেতু বিভিন্ন সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোণঠাসা করে রাখা হয়। এর সাথে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু নির্বাচনে যেহেতু ঢাবির শিক্ষার্থী কম, তখন এই বিভাজন তৈরি করে নির্বাচনে জয়ী হতে চাচ্ছেন। ২০২৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের মনির-মঞ্জু পরিষদের তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করছেন। 

কিন্তু এই পরিষদকে ডাইরেক্ট গ্রুপ বলা হলেও এই পরিষদের সভাপতি প্রার্থী মনির হোসেন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট নন। তিনি  নিচের গ্রেড থেকে প্রমোশন পেয়ে নবম গ্রেডে এসেছেন। কিন্তু কি কারণে ডাইরেক্ট গ্রুপ বলা হচ্ছে জানতে চাইলে মনির হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য এ কথা বলছেন। 

‘সম্মিলিত গ্র্যাজুয়েট অফিসার্স কমিউনিটি’ যারা নিজেদেরকে ইনডাইরেক্ট গ্রুপ বলছে। এখানে নির্বাচন করছে মোতালেব-সরওয়ার পরিষদ। এই পরিষদের সভাপতি প্রার্থী মাস্টার দা সূর্যসেন হলের প্রিন্সিপাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মোতালেব হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট ফোরাম তৈরি হয়েছে তারপর ‘সম্মিলিত গ্র্যাজুয়েট অফিসার্স কমিউনিটি’ তৈরি হয়েছে। আর এটা বড় তেমন কিছু না। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য অনেক টেকনিক থাকে এটা হলো তেমন একটা টেকনিক।

এভাবে  বিভাজন তৈরি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনের পর এগুলো থাকবে না। সবাই একসাথে কাজ করবো।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাবি অফিসার্স এসোসিয়েশন সাবেক একজন নেতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কর্মকর্তাদের বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার লোক রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় মানসিকতা মিলেনা। ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকে হিংসার চোখে দেখে। এটা নিয়ে এক ধরনের মনোমালিন্য আছে।

“কিন্তু নির্বাচনে এগুলো কখনো উঠতো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের নির্বাচনেকে কোন দলের এগুলো কখনো আলোচনায় আসতো না। কিন্তু এবার এদেরকে ডাইরেক্ট গ্রুপ বলে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেটা কোনোভাবেই ঠিক নয়।”


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence