জাবিতে দুই শিক্ষককে তুলে দিয়ে চেয়ারে বসলেন ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:৩৮ PM , আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৪ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নবনির্মিত ৬টি হল ও একটি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দু’জন শিক্ষককে তাদের আসন থেকে উঠিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বসানোর অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৪১টি স্থাপনার উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হল প্রাধ্যক্ষগণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অনুষ্ঠান শুরুর ২৪ মিনিট পর প্রায় ২০ জন নেতাকর্মীসহ অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। ততক্ষণে অডিটোরিয়াম ভবন অতিথিতে পরিপূর্ণ। জায়গা না পাওয়ায় ক্ষেপে যান তিনি। এসময় তাদের শান্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান উপস্থিত হোন। পরে প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরের সাথে কথা কাটাকাটি হলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রক্টর তাদের নিয়ে অডিটোরিয়ামের বাইরে চলে যান। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী স্লোগান দিতে শুরু করেন। পরে প্রক্টরের অনুরোধ স্লোগান বন্ধ করে তারা৷
অডিটোরিয়াম ভবনের সামনে গিয়ে প্রক্টরের সাথে আরেক দফায় বাকবিতন্ডায় জড়ান শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তার অনুসারীরা। এসময় সহ-সভাপতি পদমর্যাদার এক নেতা অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে অডিটোরিয়াম ভবনে তালা দেয়ার হুমকি দেন। ঐ নেতা বলেন, আমাদের জন্য জায়গা রাখা হয়নি, আমরা তাহলে অডিটোরিয়ামে তালা দিয়ে চলে যাই।
এর কিছুক্ষণ পর অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে অডিটোরিয়ামের তৃতীয় সারিতে বসা প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও দর্শন বিভাগের দুই প্রভাষককে তাদের জায়গা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন প্রক্টর ফিরোজ-উল-হাসান৷ পরে শিক্ষকদের যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম সারির আসনে বসানো হয়। শিক্ষকদের তৃতীয় সারির আসনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে বসানো হয়। পরে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পূর্বেই ঐ দুই শিক্ষককে অডিটোরিয়াম হল ত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের এমন আচরণকে ‘অশোভন’ ও শিক্ষকদের জন্য ‘লজ্জাকর’ বলে মন্তব্য করেন উপস্থিত শিক্ষকরা। জীববিজ্ঞান অনুষদের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘এমন জাঁকজমক পূর্ণ প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের এমন আচরণ খুবই অশোভন। ভরা মসজিলে দুইজন সম্মানিত শিক্ষককে তুলে দিয়ে সেই জায়গায় ছাত্রলীগ নেতাদের বসানো শিক্ষকদের জন্য অসম্মানজনক ও লজ্জার। আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’
এ ঘটনায় আরেক অধ্যাপক বলেন, ‘ষষ্ঠ ও সপ্তম সারিতে জায়গা যখন ফাঁকাই ছিল তখন ছাত্রলীগ নেতাদের সেই আসনে বসানো যেতো। দুইজন শিক্ষককে তুলে দেয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। তাদেরকে তুলে দিয়ে শিক্ষক সমজকে নিচু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আমরা ছাত্রলীগকে আগে আসতে বলেছিলাম। আগে আসলে এই ঘটনা ঘটতো না। সকল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দাবি করেছিল যে স্ক্রিনে যাতে সভাপতি-সেক্রেটারিকে দেখা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সারিতে বসতে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার ওখানে অনুরোধ করার মত জুনিয়র ঐ দুজনই (শিক্ষক) ছিল। আর অন্য কাউকে অনুরোধ করার কোন সুযোগ ছিল না। ম্যাক্সিমাম সিনিয়র এবং অন্য অপরিচিত যারা, স্কুল কলেজের শিক্ষক-অফিসাররা সেখানে ছিল। এই দুজন আমার অত্যন্ত কাছের এবং আপনজন দেখেই আমি তাদের অনুরোধ করতে পেরেছি। তারা হয় তো মনে কষ্ট পেলেও অনুরোধ রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের তো সব মিলিয়ে সমন্বয় করতে হয়। ওরা আগে আসলে এই সমস্যাটা হত না। সামনের দিকে বসতে পারত। আমি প্রত্যাশা করব যে, এর পরে কোন প্রোগ্রামে তারা যেন নির্দিষ্ট সময়ে আসে এবং তারা যেখানে বসতে চায়, সেখানে বসতে পারে। পুরো প্রোগ্রামটা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থেই আমি খুব কাছের দু'জন মানুষকে অনুরোধ করেছি।
শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অধ্যাপক ড. এম শামীম কায়সার বলেন, শিক্ষার্থীরা অডিটরিয়ামের দ্বিতীয় তলায় বসবেন এটিই পূর্বনির্ধারিত ছিল। শিক্ষার্থীদের তো সেখানে বসার কথা ছিল না। কিন্তু তবুও কোনো শিক্ষকের সাথে যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে এবং তিনি যদি আমাকে (শিক্ষক সমিতির সম্পাদক হিসেবে) অনানুষ্ঠানিকভাবেও জানান। তাহলে আমরা শিক্ষক সমিতি এর প্রতিবাদ করব। আর এ বিষয়টি নিয়ে আমি প্রক্টরের সাথে কথা বলে দেখব কি ঘটেছিল সেখানে।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।