যেভাবে এসএসসির সার্টিফিকেট জাল করে ঢাবির কর্মচারী হলেন সোরাফ

সোরাফ মিয়ার নকল সার্টিফিকেট (বামে) এবং আসল সার্টিফিকেটটির অনলাইন কপি (ডানে)
সোরাফ মিয়ার নকল সার্টিফিকেট (বামে) এবং আসল সার্টিফিকেটটির অনলাইন কপি (ডানে)  © সংগৃহীত

২০১৯ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন রবিকুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী। কম্পিউটার দোকানের মাধ্যমে রকিবুলের নাম পরিবর্তন করে সার্টিফিকেট প্রিন্ট করা হয় সোরাফ মিয়ার নামে। এছাড়া জন্মসাল-মায়ের নাম পরিবর্তন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগে সেই সার্টিফিকেট প্রদর্শন করে চাকরিও পান তিনি। ২০২২ সালে এই জালিয়াতকারী সোরাফ চাকরি পেলেও সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস অনুসন্ধান করলে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

অভিযুক্ত সোরাফ মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন ক্যাফেটেরিয়ার সহকারী বাবুর্চি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারীর ৩ তারিখে তিনি এই পদে যোগদান করেন। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, সহকারী বাবুর্চি পদের জন্য নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। কিন্তু সোরাফ মিয়া এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেনি বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে অকপটে স্বীকার করেছে।

সংশ্লিষ্ট নথি ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত সোরাফ মিয়া বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে সার্টিফিকেট প্রদর্শন করেছে সেখানে উল্লেখ আছে পূর্বধলা জেএম পাইলট হাইস্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৩.৪৬ গ্রেড পেয়ে পরীক্ষায় পাশ করেছে। সেখানে তার স্টুডেন্ট আইডি দেওয়া আছে।

উক্ত স্টুডেন্ট আইডির পরিচয় সম্পর্কে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসির প্রোগ্রামের ডেপুটি কন্ট্রোলার সাদিকুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রোল নাম্বারের রেজাল্ট ঠিক কিন্তু সেখানে পরীক্ষার্থীর নাম রবিকুল ইসলাম। অভিযুক্ত সার্টিফিকেটে লিখেছে সোরাফ মিয়া। সেখানে পিতার নাম কালাচাঁন মিয়া মিললেও মাতার নাম ওয়েবসাইটে হালিমা খাতুন লিখা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া সার্টিফিকেট সাহেরা আক্তার। জন্ম সাল ওয়েবসাইটে ২৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯ থাকলে ও  সোরাপ মিয়া  তার সার্টিফিকেট  ১৯৮৯ এর ১ জানুয়ারী উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সোরাফ মিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন। তিনি পরীক্ষা না দিলেও সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন বলে জানান। এসময় এই প্রতিবেদকের সাথে সরাসরি দেখা করতে চান তিনি।

জানতে চাইলে টিএসসির কলাভবন ক্যাফেটারিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আসলে আমাদের কিছু করার নেই। যারা নিয়োগ দিয়েছে তারা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করেছেন। আসল না-কি নকল তারা জানেন বিষয়টি। আপনি পরিচালক বা সাবেক পরিচালক স্যারের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।’

সেই সময় নিয়োগ বোর্ডে থাকা টিএসসির সাবেক পরিচালক বর্তমানে অবসারপ্রাপ্ত সৈয়দ আলী আকবরকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জালিয়াতির ব্যাপারে জানতে চাইলে টিএসসির বর্তমান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শিকদার মনোয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘প্রথমত সহকারী বাবুর্চি নিয়োগে এসএসসি সার্টিফিকেট লাগে কি-না বা অন্য কি কি ক্রাইটেরিয়া আছে সেটা আমার জানা নেই। তখন যে নিয়োগ বোর্ড ছিলো সেখানের মেম্বারও আমি ছিলাম বলে মনে পড়ছে না।

দ্বিতীয়ত, সার্টিফিকেট আসল না-কি নকল সেটা ডিরেক্টরের দেখার কাজ। এটা অফিসে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত বুঝা যাবে। বর্তমান ডিরেক্টর বা তখন যিনি ডিরেক্টর ছিলেন তার কাছ থেকে এবিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার বলেন, আমি বিষয়টি আগে শুনিনি আজকেই প্রথম শুনলাম। তাছাড়া এ বিষয়ে কেউ আমাকে অবহিতও করেনি। তবে কেউ যদি আমাদের লিখিত অভিযোগপত্র দেয় তাহলে আমরা নিয়োগের সকল কাগজপত্র দেখে বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানকে কয়েকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence