ক্যাম্পাসে ফিরছে জো-বাইক, অক্টোবরের শেষে চালু
- খালিদ হাসান, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৩, ০৭:০৫ PM , আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৩, ০৭:৫০ PM
ক্যাম্পাসে রিক্সা ভাড়া দিতে দিতে শিক্ষার্থীদের পকেটের অবস্থা নাজেহাল। এমন অবস্থায় খুশির বার্তা নিয়ে করোনায় স্থবির হয়ে পড়া জো বাইক সার্ভিস ফিরছে নতুন উদ্যমে। প্রায় তিন বছর পর দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ সাইকেল নিয়ে উন্নত সেবা দিতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেন জোবাইক- এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেদী রেজা। এমন ঘোষণা নিঃসন্দেহে নিজেদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ বলেই মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে রেখে নিজেদের কার্যক্রম চালানোর চিন্তা করছে জো বাইক কর্তৃপক্ষ। তবে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজেদের পরিকল্পনায় নেয়া হলেও প্রথম দিকে দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হবে ভাড়ায় চালিত এই রাইডিং সাইকেল। প্রথম দিকে ২০০ সাইকেল দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে সাইকেল বৃদ্ধি করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই রাইডিং সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে বিশেষ প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে স্বল্প সংখ্যক মোটরসাইকেল সেবাও চালু করা হতে পারে বলে জানানো হয়। সব ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবর মাসের শেষের দিকে চালু হবে জো বাইক সার্ভিস।
ভিন্নধর্মী এই উদ্যোগটি ২০১৯ সালে শুরুর পরেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু ২০২০ সালের শুরুতে করোনা মহামারী শুরু হয়ে যাওয়ায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সাইকেলগুলো পুরাতন হয়ে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে যায়। নতুন সাইকেল কিনতে আর্থিক বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে এই জনপ্রিয় সার্ভিসটি।
তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসুর সমন্বয়ে ক্যাম্পাসে ১০০টি সাইকেল নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জোবাইক যাত্রা শুরু করে। ২০২০ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত মোট ১৬০ দিন চালু ছিলো এই সাইকেল সেবা। এত অল্পদিনের মধ্যেই কম খরচ ও উন্নত সেবার জন্য ক্যাম্পাসে তুমুল জনপ্রিয়তা পায় সাইকেলটি রাইডটি।
জোবাইক শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি সার্ভিস ছিলো। এটি পুনরায় চালু হলে শিক্ষার্থীদের অর্থ ও সময় বাঁচবে। একাধারে এই সার্ভিস পরিবেশ বান্ধব ও ক্যাম্পাসে গাড়ির চাপ কমাতে সাহায্য করবে—অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান
ঢাবিতে মোট আট হাজার ৬০০ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এই সেবার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ১২৫টি রাইডের সাথে মোট রাইড ছিলো এক লাখ ৮০ হাজার। মোট সাড়ে চার লাখ কিলোমিটার রাস্তা পারি দেয় সাইকেল সেবাটি। সারাদেশে প্রতিষ্ঠানটি দেড় লাখ সাবস্ক্রাইবারের পাশাপাশি ১২ লাখ রাইডার পেয়েছিলো। দিনে গড়ে ৩ হাজার রাইড সম্পন্ন হতো এই জনপ্রিয় সার্ভিসটি। যার ফলে শিক্ষার্থীরা ৭০ শতাংশ রিকশা ভাড়া বাঁচাতে পারতো।
এর আগে ক্যাম্পাসের প্রতিটি আবাসিক হল, কার্জন হল, কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, টিএসসি, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জো-বাইকের নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড থেকে নিবন্ধিতরা এই সেবাটি গ্রহণ করতে পারতো। নির্দিষ্ট বুথ থেকে টাকা রিচার্জ করে জোবাইকের নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে স্ক্যান করে সাইকেলের সঙ্গে থাকা লক খোলার পর সময় শুরু হতো৷ প্রথম ৫ মিনিটে ২ টাকা ৫০ পয়সা খরচ হতো, যা ছিলো খুবই সাশ্রয়ী।
একজন শিক্ষার্থী 'Jobike' অ্যাপসের মাধ্যমে রাইডিং শুরু করতে পারবে। প্রথমে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রিচার্জ করে নিতে হবে। নতুন সাইকেলে নতুন 'Geo Technology' যুক্ত থাকবে যার ফলে রাইডার কোথায় যাচ্ছে বা কোথায় সাইকেল রেখে চলে যাচ্ছে এটি নজরদারি করতে পারবে কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসের বাইরে সাইকেল চালালে গুনতে হবে ৩-৪ গুণ অর্থ। সাইকেল রেখে আসলে বড় ধরণের জরিমানা দিতে হবে যা পরবর্তী রিচার্জ থেকে কেটে নেওয়া হবে। সাইকেলে সোলার লাগানো থাকবে যার ফলে এটিকে চার্জ করতে হবে যা এবং রাইডারকে সাইকেলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
জোবাইক চালু হবার কথা শুনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে বলে মনে করেন তারা।
আমরা পূর্বে রাইডের প্রতি ৫ মিনিটে ২ টাকা ৫০ পয়সা করে নিতাম কিন্তু টাকার মান কমে যাওয়ায় সবকিছুর খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই খরচটা কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। তবে আগে যেই অ্যাপস ছিলো সেটাই থাকবে তবে এতে আরও নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে। পূর্বে যারা টাকা পাওনাদার ছিলো অ্যাপসে তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। আমরা নতুন রাইডারদের জন্য ৩ দিন 'ফ্রি কস্ট' সার্ভিস প্রদান করবো—সিইও, জো-বাইক
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এটা সময়োপযোগী উদ্যোগ। ক্যাম্পাসে জোবাইক চালু হলে আমাদের সময় এবং অর্থ দুটোই বাঁচবে। স্বাভাবিকভাবে আমরা রিক্সায় করে ক্যাম্পাসের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে চাইলে ৬০-৭০ টাকা রিক্সা ভাড়া গুনতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা জোবাইক ব্যবহার করলে খরচ পড়বে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা।
জোবাইকের সিইও মেহেদী রেজা বলেন, ইতিমধ্যে চীন থেকে সাইকেল কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই সপ্তাহের শেষদিকে সাইকেল অর্ডার দেয়া হবে। তবে সাইকেল আমদানি ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় ৩ মাস লাগতে পারে। আমরা নিজেদের খরচেই আপাতত ২০০ সাইকেল অর্ডার করছি। দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিকভাবে চালু হবে। আমরা বিভিন্ন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ভালো বিনিয়োগ পেলে আরও বেশি সেবা নিয়ে প্রতিটি ক্যাম্পাসে সাড়া ফেলতে পারবো।
রাইডের খরচ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা পূর্বে রাইডের প্রতি ৫ মিনিটে ২ টাকা ৫০ পয়সা করে নিতাম কিন্তু টাকার মান কমে যাওয়ায় সবকিছুর খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই খরচটা কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। তবে আগে যেই অ্যাপস ছিলো সেটাই থাকবে তবে এতে আরও নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে। পূর্বে যারা টাকা পাওনাদার ছিলো অ্যাপসে তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। আমরা নতুন রাইডারদের জন্য ৩ দিন 'ফ্রি কস্ট' সার্ভিস প্রদান করবো।
সাইকেল ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি কেউ নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে সাইকেল নিয়ে যায় আমরা আমাদের 'Geo Technology' এর মাধ্যমে জানতে পারবো। এমন হলে আমরা সাথে সাথেই তাকে ফোনের মাধ্যমে সতর্ক করবো। ক্যাম্পাসের বাইরে একজন রাইডারকে ৩-৪ গুণ জরিমানা প্রদান করে সাইকেল চালাতে হবে। কেউ সাইকেল বাইরে কোথাও রেখে আসলে তাকে বড় ধরনের জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে। এসময় লোকেশন দেখে আমাদের সার্ভিসম্যানরা গিয়ে সাইকেল নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে রেখে আসবে। তাছাড়া আগের সাইকেল গুলোতে সাধারণ চার্জিং সিস্টেম থাকায় একজন রাইডারকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হতো চার্জ সম্পন্ন করার জন্য কিন্তু নতুন সাইকেলে সোলার চার্জিং সিস্টেম চালু থাকবে। ফলে অটো চার্জ হওয়ায় এই ভোগান্তি কিছুটা দূর হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এই জোবাইক শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি সার্ভিস ছিলো। এটি পুনরায় চালু হলে শিক্ষার্থীদের অর্থ ও সময় বাঁচবে। একাধারে এই সার্ভিস পরিবেশ বান্ধব ও ক্যাম্পাসে গাড়ির চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
তিনি আরও বলেন, আমি ডিনদের সাথে বৈঠকে বলেছি যেন তারা কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে ঢাবি ক্যাম্পাসে এটি চালু করা হয় সেই পদক্ষেপ যেন গ্রহণ করে। আশা করি জোবাইক কর্তৃপক্ষ আমাদের ক্যাম্পাসকে বেশি প্রায়োরিটি দিয়ে সার্ভিসটি চালু করবে।
উল্লেখ্য, জোবাইক ২০১৮ সালের জুন মাসে কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ওই বছরের ডিসেম্বরে চবি ক্যাম্পাসে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং অক্টোবরে ঢাবি ক্যাম্পাসে চালু হয়েছিল জোবাইক। তাছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও মিরপুর ডিওএইচএসে চালু ছিল এই কার্যক্রম। প্রতিটি জায়গায় জো বাইক পেয়েছিলো চোখ ধাঁধানো সাফল্য ও জনপ্রিয়তা। কিন্তু করোনা মহামারী শুরু হওয়ায় ধ্বস নামে জো বাইকে। আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিনিয়োগ পাওয়া না যাওয়ায় সার্ভিসটি বন্ধ করতে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটি।