চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেও ভিসির বিশেষ বিবেচনায় পাস ১৭৭ শিক্ষার্থী
- শেখ আব্দুল্লাহ্ ইয়াসিন
- প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ০৪:৩৯ PM , আপডেট: ৩১ মে ২০২৩, ০৪:৪৪ PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ২০২২-২৩ সেশনের ‘বি-১’ উপ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আশানুরূপ শিক্ষার্থী পাস না করায় বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে আসন ফাঁকা থাকার শঙ্কায় শেষ পর্যন্ত পাসের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার এই উপ-ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ থাকলেও তা কমিয়ে ৩৩ এবং বিভিন্ন কোটায় পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ৩৫ থেকে কমিয়ে ২৮ করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতাবলে ফলাফল পরিবর্তন করা হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির একাধিক সদস্যের।
তারা বলেন, ভর্তি সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বিবিধ আলোচনা চলাকালীন সময় বিষয়টি রিপোর্ট আকারে পেশ করা হলে আমরা সেটি গ্রহণ করিনি। কারণ উপাচার্য যেহেতু নিজের ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেহেতু নিয়মানুযায়ী এ বিষয়ে উপাচার্যকেই রিপোর্ট করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
কিন্তু সেখানে রিপোর্ট পেশ করেছেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন ও বি-ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় হয়নি।
নিয়মানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত নিয়মে পর্যাপ্ত পরিমাণ শিক্ষার্থী যদি ভর্তি পরীক্ষায় পাস না করেন তাহলে প্রয়োজনে আসন ফাঁকা থাকে। কিন্তু ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মনীতি শিথিল করে পাস করানোর সুযোগ নেই। পাস নাম্বার যদি কমাতেই হয় ভর্তি সংক্রান্ত নোটিশ দেওয়ার আগেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার পরে পাসের হার বাড়ানোর জন্য নিয়ম পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত এই উপ-ইউনিটের পরীক্ষায় ৯১৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও পাস করেন ১৫২ জন। বি-১ উপ-ইউনিটের অধীনে চারুকলা ইনস্টিটিউটে ৬০, নাট্যকলা বিভাগে ৩৫ এবং সংগীত বিভাগে ৩০টি আসন রয়েছে। সেই হিসেবে মোট ১২৫টি আসনের বিপরীতে ১৫২ জন পাস করায় সবগুলো আসন পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
নির্ধারিত নিয়মে পাসের হার কম হওয়ায় গত ২৫ মে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় পাস নম্বর কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। অনুষদের ডিন ও ভর্তি পরীক্ষার বি-ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে এ সভায় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সভাপতি এবং পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পাস নম্বর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ৪০ নম্বরের পরিবর্তে ৩৩ নম্বর এবং কোটায় পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ৩৫ নম্বরের পরিবর্তে ২৮ নম্বর নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির পরবর্তী সভায় রিপোর্ট করার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে প্রথমবার ১৫২ জন পাস করলেও পাস নম্বর কমানোর পর সাধারণ আসনে পাসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৬ এবং কোটায় পাস করেছে ৫৩ জন। সংশোধিত ফলাফলে সর্বমোট ৩২৯ জন মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে। যার ফলে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করলেও উপাচার্যের বিশেষ বিবেচনায় পাস করেছেন ১৭৭ জন। পাশাপাশি প্রথমবারের তুলনায় সংশোধিত ফলাফলে পাসের হার বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন ও ভর্তি পরীক্ষার বি-ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বলেন, বি-১ উপ-ইউনিটে ১২৫টি আসনের বিপরীতে পাস করেছিল ১৫২ জন। পাস করা শিক্ষার্থীদের অনেকে অন্য ইউনিট বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পরীক্ষা দিয়েছেন সেখানেও ভর্তি হতে পারেন। যার ফলে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ধারণা করছি ওই উপ-ইউনিটের বিভাগগুলোর অর্ধেক আসন ফাঁকা থেকে যেতে পারে। তাই আমরা পাসের হার কিছুটা বাড়ানোর জন্য বি-ইউনিট এবং বি-১ উপ-ইউনিটের কমিটির সকল সদস্যদের সঙ্গে বসে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে উপাচার্যের কাছে সুপারিশ করা হলে তিনি সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ফলাফল সংশোধনের অনুমতি দেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া বি-১ উপ-ইউনিটের কমিটির সদস্যরা ছাড়াও পুরো বি-ইউনিটের কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। এখানে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। বিষয়টি স্পষ্ট এবং লুকোচুরিরও কিছু নেই।