সচেতনতাই পারে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে

  © টিডিসি ফটো

সচেতনতাই পারে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে। নিজে সচেতন থেকে অপরকে সচেতন করার মাধ্যমে, পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ‘ক্যান্সার প্রতিরোধে সেমিনারে’র বক্তারা। 

সোমবার (২২ মে) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ক্লাবের উদ্যোগে ব্যাবসায় শিক্ষা অনুষদের হাবিবুল্লাহ কনফারেন্স হলরুমে ‘আমরা দূর্বার রুখবো ক্যান্সার’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে ব্যাংক এশিয়ার সৌজন্যে আয়োজিত এক সেমিনারে এমন মন্তব্য করা হয়।

সেমিনারে বক্তারা ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি, ক্যান্সারের উৎস ও বিকাশ, সমাজে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে যাওয়া, এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যাবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মঈন বলেন, আমরা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ বাদ দিয়ে আমরা কৃত্রিম পরিবেশকে গ্রহণ করে নিয়েছি। আমরা রাসায়নিক যুক্ত খাদ্য, অপরিষ্কার পানি পান করছি। ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য ব্যাধি আমাদের শরীরে বাসা বাঁধছে। এটাই আমাদের উপযুক্ত সময় সবাইকে সতর্ক করা যে, আমরা এমন একটা পরিবেশে আছি যা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের যুব সমাজকে জীবন সাজানো শিখতে হবে। আমি অত্যন্ত ধন্যবাদ জানাই ক্যারিয়ার ক্লাবকে তাদের সুন্দর আয়োজনের জন্য। আশা করি, এই তরুণ প্রজন্ম ক্যান্সারের ভয়াবহতা সম্পর্কে জেনে এর থেকে বেঁচে থাকার জন্য সচেতন হয়ে উঠবে।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি মুবিনা সুলতানা বলেন, আমি খুব সম্প্রতি আমার নানুকে হারিয়েছি যিনি কি-না  ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছিলেন। ক্যান্সার রোগী ও তার পরিবারের জন্য একটা শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। আমরা সামাজিকভাবে সচেতন না হওয়ায় কিন্তু আমাদের এমন দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আজকের এই সেনিনারের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো নিজেরা সচেতন হয়ে চলা ও অপররকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন রাখা।

বাংলাদেশ ক্যান্সার এইড ট্রাস্ট (BANCAT) এর সাধারণ সম্পাদক মাহজাবিন ফেরদৌস বলেন, শুধু সচেতনতাই পারে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে। আমাদের দেশের মানুষ বিশেষত আমাদের মায়েরা নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। যার ফলে বর্তমানে ব্রেস্ট ক্যান্সার ব্যপক আকারে বেড়েছে। তারা নিজেরাই নিজের ব্রেস্ট চেকআপ করলেই সমস্যা ধরতে পারেন। আমাদের মেয়েরা ও মায়েরা বিভিন্ন ব্যাস্ততা দেখিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চান না বলেই এটা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে উঠে যা পরবর্তীতে ব্যাক্তি ও পারিবারিক জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশ ক্যান্সার এইড ট্রাস্টের দূর্বারের প্রজেক্ট লিডার মেজবাহ বিন মোশাররফ বলেন, আমরা দূর্বার চালু করেছিলাম শুধু মানুষকে সচেতন করার লক্ষে। আমরা তিনটি লক্ষকে সামনে নিয়ে এই দূর্বার ট্রাস্ট গঠন করেছি। লক্ষ্যগুলো হল-

১.  তরুণ সমাজকে দিয়ে সচেতনতা তৈরি। 
২. একটা ক্যান্সার কমিউনিটি তৈরি করা যেনো তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা এব তাদের সার্বিক সহায়তা করা যায়।
৩. বাংলাদেশে কতজন ক্যান্সারে আক্রান্ত সেটার পর্যাপ্ত তথ্য নেই। সেজন্য আমরা সবাইকে একটি ডেটাবেজের আওতায় নিয়ে আসা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ল্যাব এইড হাসপাতালের ক্যান্সার স্পেশালিষ্ট ড. কাজী আব্দুল্লাহ আরমান বলেন, আমরা সতর্কতা বলতে বুঝি কোনও রোগ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা। আমরা যদি প্রথমেই জানি যে, এই ক্যান্সারের প্রতিরোধের উপায়গুলো কি তাহলে কিন্তু আমরা সহজেই সেগুলোর সমাধান করতে পারি। সাধারণ ক্যান্সারগুলো আমরা সচেতন থেকে একদম প্রাথমিক পর্যায়ে তা নির্মূল করতে পারি।

আবার ভ্যাক্সিন গ্রহনের মাধ্যমে আমরা কিন্তু জরায়ু ক্যান্সারের মত ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করতে পারি। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধের অন্যতম একটা উপায়। কেউ যদি নিয়মিত চেক আপ করায় তাহলে সেই চেক আপের মাধ্যমে সহজেই ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু সেটা দেরি হয়ে গেলে আর সেটা চিকিৎসার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব হয় না। কারও যদি ক্যান্সার হয়েই যায় তাহলে আমাদের দেশের বাইরে যেতে হবে এমনও না। আমাদের দেশেই ক্যান্সার প্রতিরোধে চিকিৎসাব্যাবস্থা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু সচেতনতা খুব জরুরি। সচেতনতামূলক কাজগুলো হল-

১. সিগারেট না খাওয়া
২. অ্যালকোহল পরিহার করা
৩. পান, জর্দা, পাতা পরিহার করা 
৪. স্থুলতা পরিহার করা
৫. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন নিয়ে আসা

একটি গবেষণায় দেখা গেছে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ৯০ শতাংশই স্থুলতা থেকেই হয়। অন্যান্য ক্যান্সারেও স্থুলতা অনেক খারাপ প্রভাব ফেলে। স্থুলতা প্রতিরোধে ৪ টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ-

১. ডায়েট করা
২. পরিমিত ঘুম
৩. নিয়মিত ব্যায়াম
৪. শারীরিক কার্যক্রম চালানো

সপ্তাহে ৫ দিন কেউ ৩০ মিনিট কিংবা সপ্তাহে ৪ দিন ৪৫ মিনিট করে ব্যায়াম করলে স্থুলতা প্রতিরোধ করাটা সম্ভব। কিন্তু আমরা সেটা করিনা এবং আমরা অফিসে বা অন্য কোথাও বসে বসেই কাজ করি। আমরা চাইলে রিক্সায় না চড়ে হেটে বাসায় ফিরতে পারি। লিফটে উঠানামা না করে সিড়ি ব্যাবহার করতে পারি। ফলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে, রোগ সহজেই আমাদের শরীরে বাসা বাধতে পারবে না।

বাংলাদেশ ক্যান্সার এইডের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক নাজমুস আহমেদ আলবাব বলেন, ২০১১ সালে আমার ক্যান্সার হবার পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়ে আমি সুস্থ হয়ে ফিরেছি। পরবর্তীতে আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে ক্যান্সার নিয়ে কাজ করতে হবে, মানুষকে সচেতন করতে হবে। আমি নতুন ট্রাস্ট গঠন করলাম। পরবর্তীতে দীর্ঘ ১১ বছরের সাধনার পরে আমি আলোকনিবাস নামের একটা ক্যান্সার সেবা কেন্দ্র গঠন করি যেখানে ২৪ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। 

তিনি বলেন, তিনটি কারণে বাংলাদেশে ক্যান্সার হয়ে থাকে-

১. অসচেতনতা 
২. দেরিতে রোগ শণাক্ত
৩. দেরিতে চিকিৎসা শুরু করা

অন্যদিকে আমাদের দেশে ক্যান্সার ছড়ানোর তিনটি কারণ-

১. ভয় পাওয়া
২. অজ্ঞতা
৩. অবহেতা

কেউ যদি ভয় না পেয়ে অজ্ঞতাকে জ্ঞানে পরিণত করে রোগকে অবহেলা না করে সময়মতো ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করতে পারে তাহলে ক্যান্সার শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি মুবিনা সুলতানার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কৌশল এবং নেতৃত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ রাশেদুর রহমান, প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন বাংলাদেশ ক্যান্সার এইড ট্রাস্টের দূর্বারের প্রজেক্ট লিডার মেজবাহ বিন মোশাররফ, ল্যাবেইড ক্যান্সার হাসপাতালের এমডি  ডাঃ কাজী আবদুল্লাহ আরমান, এমবিবিএস, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ল্যাবেইড ক্যান্সার হাসপাতালে হেড অফ বিজনেস শ্রী অমিতাভ ভট্টাচার্য প্রমুখ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence