প্রশাসনিক জটিলতা বন্ধে ফের অবস্থান শুরু ঢাবি শিক্ষার্থীর
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০৫ PM , আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৮ PM
প্রশাসনিক জটিলতা বন্ধে ৮ দফা দাবির একটিরও দৃশ্যমান বাস্তবায়ন না হওয়া ও রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মকর্তাদের হেনস্তার শিকার হয়ে আবারো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ।রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ঢাবির প্রশাসনিক ভবন গেটে সকাল সাড়ে ১০টায় এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এর আগে ৩০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন গেইটে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন হাসনাত। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী তার সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসনাত।
আজ হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ভিসি স্যার উনার কথা রাখেননি এবং রেজিস্ট্রার বিল্ডিং-এ আজ আমাকে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। ৯টায় অফিস টাইম থাকলেও, নয়টা চল্লিশে(৯.৪০) রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অফিসে অনুপস্থিত। সেই ছবি তুলতে গেলে আমি বাঁধার সম্মুখীন হই। রেজিষ্ট্রার বিল্ডিংয়ের ছবি তোলার আগে না-কি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ছবি তুলতে হবে। এই অনিয়ম ভাঙ্গতে হবে। আজকে সকাল ১০.৩০ থেকে আমার টানা অবস্থান কর্মসূচি চলবে। বেঁধে দেওয়া দশ কর্মদিবস শেষ হলেও রেজিস্টার বিল্ডিংয়ের সমস্যা সমাধানে ভিসি স্যার কোন পদক্ষেপ নেননি। আমাদের আট দফা দাবির একটি দাবিও পূরণ করেননি কিংবা দাবি পূরণে কোন ধরনের দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেননি।
আরও পড়ুনঃ মডারেশনে অবহেলা, এসএসসি প্রশ্নপত্রে ভুলের ছড়াছড়ি
তিনি আরও বলেন, রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের অবস্থা যা ছিলো, ঠিক তা-ই রয়েছে। রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মচারীদের কাজে সময়মতো উপস্থিত না হওয়া, লাঞ্চের আগেই অফিস থেকে বেড়িয়ে যাওয়া, অযথাই ছাত্র হয়রানি করা, অহেতুক দায়িত্ব অবহেলা, রুম নম্বর বিড়ম্বনা, সনাতন পদ্ধতিতে ছাত্র হয়রানি এখনো নিয়মিত ঘটনা। পর্যাপ্ত সময়, গঠনমূলক পরামর্শ, সময়পোযোগী দিকনির্দেশনা দেওয়ার পরও আট দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের অসহযোগিতামূলক আচরণে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি ক্ষুব্ধ। এজন্য এবার আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমার অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
এরই মধ্যে তিনি প্রশাসনিক ভবনের সেবা সম্পর্কে জরিপ করেন। সেখানে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী মোট ৭০০ জন অংশগ্রহণ করেন।
তার জরিপের ফলে উঠে আসা তথ্যগুলো হলো—
১. ৮৯.২% শিক্ষার্থীর প্রশাসনিক ভবনের সেবার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ ও অপ্রত্যাশিত।
২. সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো ৬৮.৩% শিক্ষার্থীর মতামত হলো প্রশাসনিক ভবনে ঘুষ লেনদেন ও স্বজনপ্রীতির চর্চা হয়।
৩. সর্বোচ্চ সংখ্যক হয়রানি হয় ভর্তি শাখায়, বৃত্তি শাখায়, মার্কশীট শাখায় ও ট্রান্সক্রিপ্ট শাখায়(ক্রমানুযায়ী)
৪. ৪০০ এর অধিক শিক্ষার্থীর শুনতে হয়েছে, "লাঞ্চের পরে আসুন", "এটা এই রুমের কাজ না", "কাগজ এখনো হল থেকে আসেনি "।
৫. মোট ৮৬.১% শিক্ষার্থী মনে করে প্রশাসনিক ভবনের বর্তমান কাজ ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত,বিপরীত বা শূন্য।
৬. ৪০০ এর বেশি শিক্ষার্থীর অভিযোগ-সেবা দাতাদের কাছে সেবা গ্রহীতারা নিরুপায় এবং সেবা গ্রহীতাদের সময়ের কোনো মূল্য নেই।
৭. প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর মতে প্রশাসনিক ভবনের সেবার মান অপরিবর্তিত থাকার কারণ কর্মকর্তাদের সেচ্ছাচারিতা,স্বচ্ছতার অভাব।
৮. ৭২.৮% শিক্ষার্থী মনে করে সেবার মান উন্নয়নের জন্য প্রত্যক্ষ আন্দোলনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা উচিত।
উল্লেখ্য, হাসনাত আবদুল্লাহর আট দফা দাবিগুলো হলো —
১। শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনের জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে অভিযোগ জানাতে পারেন।
২। প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটাইজড করতে হবে।
৩। নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিস সমূহের অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৪। প্রশাসনিক ভবনে অফিস সমূহের প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ডিসপ্লেতে অফিস সমূহের নাম, কক্ষ নম্বর ও সেখানে প্রদত্ত সেবার বিবরণী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ও ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি প্রদর্শন করতে হবে।
৫। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করতে হবে।
৬। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক বিদ্যা, পেশাদারিত্ব, মানুষিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতমূলক করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারসমূহের শরণাপন্ন হতে হবে।
৭। অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত থাকতে পারবে না। সে নিরিখে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবসমূহে স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
৮। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশবান্ধব করতে হবে । বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য হানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার লিফলেট ও ব্যানার ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।